শেখ মুজিবকে স্মরণ ও শ্রদ্ধা জানানোর ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশের এক শ্রেণির সাংস্কৃতিক ও গণ মাধ্যমকর্মীদের বয়কটের ডাক দেওয়া হয়েছে। তাদের ‘কালচারাল ফ্যাসিস্ট’ হিসেবে অভিহিত করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় ছবিতে জুতা নিক্ষেপের কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। গতকাল শনিবার বিকেল ৫টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে ‘বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা’ ব্যানারে এই কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। আয়োজকদের দাবি, ১৫ আগস্ট শহীদদের স্মরণ না করে কিংবা নীরবতা পালন করে কিছু সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব গণহত্যার ইতিহাসকে তাচ্ছিল্য করেছেন। এই কর্মসূচির প্রচারে ছড়িয়ে পড়া পোস্টারে লেখা ছিলÑ‘কালচারাল ফ্যাসিস্টদের বয়কট করুন’, ‘শহীদদের রক্তকে অবজ্ঞা করে যারা গণহত্যার পক্ষে নীরবতা পালন করে, তাদের চিনে রাখুন।

পোস্টারে যাদের বিরুদ্ধে কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে রয়েছেন সংগীতশিল্পী লিঙ্কন (আর্টসেল), রাহুল আনন্দ, সিয়াম (এসপি ক্রিয়েশন), অভিনেত্রী অরুণা বিশ্বাস, মুমতাহিনা টয়া, নাজিফা তুষি, সুনেরাহ বিনতে কামাল, পিয়া জান্নাতুল, খাইরুল বাসার, ইরফান সাজ্জাদ, কচি খন্দকার, মেহের আফরোজ শাওন এবং অভিনেতা শাকিব খানসহ মোট ৩০ জন সাংস্কৃতিক ও মিডিয়া অঙ্গনের ব্যক্তি।

বিক্ষোভকারীদের একজন জানান, এই দেশে সাংস্কৃতিক নেতৃত্ব যারা দেন, তাদের কাছ থেকে আমরা ন্যূনতম নৈতিক অবস্থান আশা করি। কিন্তু যারা ১৫ আগস্ট শহীদদের স্মরণ না করে নিরব থাকেন, তারা আমাদের কাছে গণ মানুষের প্রতিনিধি হতে পারেন না।

এদিকে ১৫ আগস্ট শেখ মুজিবুর রহমানকে শ্রদ্ধা জানানো বেশ কয়েকজন সাংস্কৃতিক ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বকে ‘কালচারাল প্রস্টিটিউট’ বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাইয়াজ।

গত শুক্রবার নিজের ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি এ মন্তব্য করেন। আববার ফাইয়াজ বুয়েটের শহীদ আবরার ফাহাদের ছোটভাই। ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের শেরেবাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষ থেকে ডেকে নিয়ে আবরার ফাহাদকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। খুন হওয়ার আগের দিন ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের পানি ও গ্যাস চুক্তির বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন তড়িৎ প্রকৌশলী বিভাগের মেধাবী এই শিক্ষার্থী।

১৫ আগস্ট নিয়ে ফেসবুকে ‘শোকগাথা’ লিখে পোস্ট দেওয়া কালচারাল ফ্যাসিস্টদের উদ্দেশ করে আবরার ফাইয়াজ বলেন, বাংলাদেশের মিডিয়া ও এন্টারটেইনমেন্ট নিয়ে কাজ করা মানুষদের আমি দেশের সার্বভৌমত্বের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি হিসেবে দেখি। এদের হাতে অনেক বেশি ক্ষমতা ন্যারেটিভ বানানোর। আজকের এই মুজিবপ্রেমী কালচারাল প্রস্টিটিউটদের যে ঠিক ওই উদ্দেশ্যেই মাঠে নামানো হয়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

‘এই মুজিবপ্রেমিকদের জিজ্ঞাসা করলে দেখবেন- ম্যাক্সিমাম স্বাধীনতার ইতিহাসের ই-ও কোনোদিন জানার চেষ্টা করেনি, কোনো বই পড়া তো দূরের কথা। ৭ মার্চের ভাষণ বাদে এরা কিছুই জানে না মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের। কিন্তু তারা একটা কথা জানে মুজিবকে বিনম্র শ্রদ্ধা জানাতে হবে’।

আবরার ফাইয়াজ আরও লেখেন, কিছুদিন পরই দেখা যাবে এদের অনেকেই কান্নাকাটি করবে এসে যে, আমাকে ও আমার পরিবারকে হুমকি দেওয়া হয়েছিল, তাই বলতে বাধ্য হয়েছি। তাদের কথায় মনে হয়, পরিবার শুধু তাদেরই আছে, আমাদের বা জুলাইয়ের শহীদদের পরিবার বলে কিছু একজিস্টই করে না। ইভেন গত ১৭ বছরে টু শব্দ না করার কারণ জিজ্ঞাসা করলেও উত্তর দেবে- পাবলিক ফিগার হলে রিস্ক বেশি ছিল ব্লা.. ব্লা..। অথচ, আমাকে আপনাকে চিনবেই সর্বোচ্চ ৫০০ মানুষ, গুম করে দিলে সারা দুনিয়ায় খোঁজ করার মানুষ নেই পরিবারের বাইরে কিন্তু তাও লাখ লাখ ফ্যান ফলোয়ার থাকা পাবলিক ফিগারের রিস্ক বেশি। আসলে তারা তো কালচারাল এলিট। ‘এদের কাজ আসলে এই দেশে দুইটা- যত সম্ভব নোংরামি ক্রিয়েট করে তরুণদের ডিস্ট্রাক্টেড রাখা আর ফ্যাসিবাদ শক্তিশালী করার টুল হিসেবে ব্যবহার হওয়া’, যোগ করেন বুয়েটের এই মেধাবী ছাত্র।