লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার বশিকপুর ইউনিয়নের পশ্চিম শেরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এখন টিকে থাকার সংগ্রামে নেমেছে। শিক্ষক সংকট, শিক্ষার্থীর কম উপস্থিতি এবং তদারকির অভাব সব মিলিয়ে এ বিদ্যালয়টি আজ প্রায় ধ্বংসাত্মক অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে।

সম্প্রতি গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ে উপস্থিত শিক্ষার্থীর সংখ্যা মাত্র ৭ জন। একজন শিক্ষক তাদের ক্লাস নিচ্ছেন, সেটিও কোচিংয়ের মতো করে। নিয়মিত ক্লাসে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি আরও কম। অন্য দুই শিক্ষক সেদিন নবাগত শিক্ষকদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে গেছেন বলে জানানো হয়। তবে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অনুষ্ঠানটির সময় ছিল বিকেল ৩টায়, অথচ সকাল থেকে শিক্ষকরা অনুপস্থিত ছিলেন।

বিদ্যালয়ের শিক্ষক পদ সংখ্যা ৬ হলেও বর্তমানে কর্মরত আছেন মাত্র ৩ জন। প্রধান শিক্ষকসহ আরও ৩টি পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য পড়ে আছে। শিক্ষার্থী দেখানো হয়েছে ৫৪ জন, অথচ শ্রেণিকক্ষে উপস্থিত থাকেন সর্বোচ্চ ১৫-২০ জন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে প্রতিদিন প্রথম শ্রেণিতে গড়ে ২ জন, দ্বিতীয় শ্রেণিতে ৩ জন, তৃতীয় শ্রেণিতে ৬ জন, চতুর্থ শ্রেণিতে ৪ জন এবং পঞ্চম শ্রেণিতে ৪ জন শিক্ষার্থী ক্লাসে আসে। কখনও একজন, কখনও দুইজন শিক্ষক উপস্থিত থাকেন; বাকি সময় ফাঁকা থাকে শ্রেণি কক্ষগুলো।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, একসময় বিদ্যালয়টি ছিল জমজমাট। কিন্তু বিদায়ী প্রধান শিক্ষকের অবহেলা ও শিক্ষা কার্যক্রমের মানোন্নয়নে ব্যর্থতার কারণে শিক্ষার্থী সংখ্যা ক্রমশ কমতে শুরু করে। বর্তমানে মাত্র ২০-২৫ জন শিক্ষার্থী ও ৩ জন শিক্ষক নিয়ে কোনোমতে চালু রয়েছে বিদ্যালয়টি।

ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুর নূর বলেন,“আমি ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে যোগদান করি। এখানে মোট ৬টি শিক্ষক পদ থাকলেও ৩টি শূন্য রয়েছে। এক শিক্ষিকা নিয়োগ পেলেও যোগদান করেননি। বর্তমানে শিক্ষার্থী তালিকাভুক্ত আছে ৫৪ জন, তবে উপস্থিতি কম। আমি একাই অনেক সময় ২/৩টি ক্লাস নেই। শিক্ষার্থী ভর্তি বাড়াতে আমরা মা সমাবেশ, সচেতনতামূলক মিটিং এবং হোম ভিজিট করার উদ্যোগ নিচ্ছি। পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মানোন্নয়নে কোচিং করানো হয়, তবে এর জন্য কোনো ফি নেওয়া হয় না।”

পাশের একটি নূরানী মাদরাসায় ৩০০-র বেশি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। অথচ সরকারি সুযোগ-সুবিধা থাকা সত্ত্বেও সরকারি বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী না আসা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন সচেতন মহল। তাদের দাবি, বিদ্যালয়ে শুধু গানের শিক্ষক নয়, বরং ধর্মীয় শিক্ষকেরও নিয়োগ দেওয়া উচিত। এতে শিশুদের পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ বাড়তে পারে।

লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. মনির হোসেন বলেন,“বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। করোনা পরবর্তী সময়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কিছুটা কমেছে, তবে তা বাড়াতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।”

পশ্চিম শেরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এই চিত্র একক কোনো প্রতিষ্ঠানের নয়, বরং লক্ষ্মীপুর জেলার বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সার্বিক দুরবস্থার প্রতিচ্ছবি। শিক্ষক নিয়োগের ঘাটতি, শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে যাওয়া, অভিভাবকের অনাগ্রহ এবং তদারকির শৈথিল্যতা মিলিয়ে সরকারি প্রাথমিক শিক্ষায় এক ধরনের আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে। শিক্ষাবিদরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়নে প্রশাসন ও স্থানীয় সমাজকে সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে। নইলে সরকারি বিদ্যালয়গুলো ধীরে ধীরে অচল হয়ে পড়বে।