ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ ডাকসুর নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য মনোনয়ন সংগ্রহের সময় একদিন বাড়িয়ে নির্বাচন কমিশন একটি রাজনৈতিক শক্তিকে সুবিধা দিচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন ছাত্র নেতারা। তারা সাংবাদিক সম্মেলন করে এসব অভিযোগ করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ নির্বাচনে (ডাকসু) মনোনয়নপত্র সংগ্রহের জন্য হঠাৎ করে একদিন সময় বাড়ানোকে একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিকদলের প্রতি প্রশাসনের পক্ষপাত আচরণ বলে মন্তব্য করেছেন ঢাবি ইসলামী ছাত্র শিবিরের সভাপতি এস এম ফরহাদ। গতকাল মঙ্গলবার ঢাবির নওয়াব নবাব আলী সিনেট ভবনের তৃতীয় তলায় চিফ রিটার্নিং কর্মকর্তার অফিস কার্যালয়ে ডাকসু মনোনয়নপত্র জমাদান শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বলেন, আমরা ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট প্যানেলে সোমবার (১৮ আগস্ট) মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছি এবং আজকে আমরা জমা দিয়েছি। গতকাল থেকে কয়েকটি বিষয় দুঃখজনকভাবে লক্ষ্য করেছি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন হঠাৎ করে একদিন মনোনয়নপত্র সংগ্রহের দিন বাড়ালো। মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের দিন বাড়ানোকে পক্ষপাত আচরণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটি স্পষ্ট একটি নির্দিষ্ট দলের প্রতি তাদের পক্ষপাত আচরণ। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এইটুকু সক্ষমতা থাকার দরকার ছিল যে তারা যেই তারিখ ঘোষণা করবেন সেই তারিখ মেইনটেইন করে শিক্ষার্থীদের যে রায় তা প্রকাশ করবেন। কোন ধরনের পূর্বালোচনা ছাড়াই সরাসরি একদিন বাড়িয়ে দেওয়া, বাকিরা মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর এবং বাকিদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও পলিসি মেকিংয়ের পরে নির্দিষ্ট একটি পক্ষকে সিদ্ধান্ত গ্রহণের সামগ্রিক সুবিধা দেওয়া এটা খুবই দুঃখজনক। তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক প্রশাসনে বিশেষ করে প্রক্টর থেকে শুরু করে প্রভোস্ট ও বিভিন্ন কমিটিতে নির্দিষ্ট দলের প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ লক্ষ্য করেছি। চব্বিশ পরবর্তী সময়ে আমরা শিক্ষকদের কাছ থেকে এমন রেসপন্স চাই যা সব শিক্ষার্থীদের জন্য সমান নয়। আমরা আগামীতে এ ধরনের পক্ষপাত আচরণ চাই না।
অন্যদিকে, আরেক জিএস প্রার্থী মেঘমল্লার বসু বলেছেন, সময় বাড়িয়ে বিশেষ রাজনৈতিক শক্তিকে সুবিধা দিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। ২৪-এর গণহত্যাকারী শক্তিকে নির্বাচন করার সুযোগ দেয়া হচ্ছে। ডাকসু নির্বাচনে ’৭১-এর গণহত্যাকারী শক্তিও সুবিধা পাচ্ছে। ‘প্রতিরোধ পর্ষদ’ এদের বিরুদ্ধে সোচ্চার আছে।
তবে ছাত্রদলের ঢাবি শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গাজী মো. আল-আমিন বলেছেন, ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রদলকে বিশেষ সুবিধা দেয়ার অভিযোগ ভিত্তিহীন। তারেক রহমানের নির্দেশে শিক্ষার্থী ও নেতারা মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করছেন। সবার তথ্য তারেক রহমান যাচাই-বাছাই করছেন। তিনি সবুজ সংকেত দিলেই প্যানেল ঘোষণা করা হবে।
এদিকে ঢাকা বশ্ববিদ্যালয়ের উপ-পরিচালক ফররুখ মাহমুদ (জনসংযোগ দফতর) প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানান, গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত ডাকসুর ২৮ পদে ৬৫৮টি ও হল সংসদে ১ হাজার ৪২৭টি মনোনয়নপত্র বিক্রি হয়েছে। ডাকসুর ২৮টি পদের বিপরীতে মোট ৬৫৮টি মনোনয়নপত্র বিক্রি হয়েছে। আর হল সংসদ নির্বাচনের জন্য ১৮টি হলে বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৪২৭টি মনোনয়নপত্র। আজ বুধবার ২০ আগস্ট ২০২৫ বুধবার বিকাল ৫টার মধ্যে মনোনয়নপত্র জমা দিতে হবে প্রার্থীদের।
হলভিত্তিক মনোনয়নপত্র সংগ্রহের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হলে সর্বাধিক ১১২টি এবং বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হলে সর্বনিম্ন ৩৩টি মনোনয়নপত্র বিক্রি হয়েছে। এছাড়া সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে ৭৩টি, জগন্নাথ হলে ৭৪টি, ফজলুল হক মুসলিম হলে ৮৬টি, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে ১০০টি, রোকেয়া হলে ৫৩টি, সূর্যসেন হলে ৯৫টি, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলে ৮০টি, শামসুন নাহার হলে ৪২টি, কবি জসীম উদ্দীন হলে ১০৬টি, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলে ৯৮টি, শেখ মুজিবুর রহমান হলে ৭৯টি, শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে ৩৯টি, অমর একুশে হলে ৯১টি, কবি সুফিয়া কামাল হলে ৮৮টি, বিজয় একাত্তর হলে ৯৬টি এবং স্যার এ এফ রহমান হলে ৮২টি মনোনয়নপত্র বিক্রি হয়েছে। রিটার্নিং কর্মকর্তাদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, একজন প্রার্থী একাধিক মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমা দিতে পারবেন। তবে একজন প্রার্থী কেবল একটি পদেই নির্বাচন করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে একটি পদ রেখে বাকীগুলোতে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিতে হবে। প্রত্যাহার না করলে সব মনোনয়নপত্রই বাতিল বলে গণ্য হবে।
উল্লেখ্য, ১৮ আগস্ট ২০২৫ মনোনয়নপত্র বিতরণের শেষ দিন থাকলেও বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী মনোনয়নপত্র সংগ্রহের জন্য ভিড় করেন। ফলে শিক্ষার্থীরা কোনো কোনো হল ও কেন্দ্রীয় দপ্তর থেকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করতে পারেন নি। এই অবস্থায় গণতান্ত্রিক অধিকার চর্চার সুযোগ সবার জন্য সমান ও সমুন্নত রাখার তাগিদে মনোনয়নপত্র বিতরণ ও গ্রহণের সময় একদিন করে বাড়িয়ে যথাক্রমে ১৯ আগস্ট ২০২৫, মঙ্গলবার বিকাল ৫টা ও ২০ আগস্ট ২০২৫ বুধবার বিকাল ৫টা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিলেন রিটার্নিং কর্মকর্তারা।