তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও ব্র্যাকের চেয়ারপার্সন, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ডক্টর হোসেন জিল্লুর রহমান বলেছেন, রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় মানসম্মত প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার এখনই সময়। প্রতিষ্ঠার পর প্রথম ১৫ বছর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় কাক্সিক্ষত অগ্রগতি অর্জন করতে পারেনি। তবে প্রতিষ্ঠানটি বর্তমান সময়ে নতুন করে পুনর্জাগরণের পথে রয়েছে। তিনি বলেন, এখন প্রয়োজন বিশ্ববিদ্যালয়টিকে উন্নতমানের জ্ঞানের কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার জন্য প্রশাগণ, অ্যালামনাই এসোসিয়েশন এবং সামাজিক সহায়তার প্ল্যাটফর্মগুলোর যৌথ উদ্যোগ।
শিক্ষাবান্ধব মানসিকতার শিক্ষক-শিক্ষার্থীর প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, অবকাঠামোগত ঘাটতি পূরণের পাশাপাশি প্রকৃতিবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়কে নব উদ্যমে এগিয়ে নেয়ার যাত্রায় সংযুক্ত থাকার আগ্রহ প্রকাশ করে তিনি বলেন, সঠিক দিক নির্দেশনা পেলে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় উত্তরবঙ্গ তথা দেশের মধ্যে উন্নত জ্ঞানের প্রতিষ্ঠান হিসেবে আগামীতে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবে।
তত্তা¡বধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ডক্টর হোসেন জিল্লুর রহমান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন। এতে প্রধান আলোচক ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপার্চায প্রফেসর ডক্টর মোহাম্মদ লুৎফর রহমান। প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন রংপুর বিশ্ববিদ্যালয় বাস্তবায়নকালীন সমন্বয় পরিষদের আহবায়ক প্রফেসর ডক্টর মোহাম্মদ রেজাউল হক। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপার্চায প্রফেসর ডক্টর মোহাম্মদ এনামউল্যা, কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ডক্টর মোহাম্মদ রাশেদুল ইসলাম, বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ডক্টর মোহাম্মদ শওকাত আলী।
অনুষ্ঠানে ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালক প্রফেসর ডক্টর মোহাম্মদ ইলিয়াছ প্রামানিকের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের ডিন মোহাম্মদ ফেরদৌস রহমান, ১৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্যাপন কমিটির আহবায়ক প্রফেসর ডক্টর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, রেজিস্ট্রার ডক্টর মোহাম্মদ হারুন-অর রশিদ, প্রতিষ্ঠাকালীন কর্মকর্তা অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ ময়নুল আজাদ।
প্রতিষ্ঠাকালীন ‘রংপুর বিশ্ববিদ্যালয় বাস্তবায়ন সমন্বয় পরিষদ’ এর আহবায়ক শিক্ষাবিদ প্রফেসর ডক্টর রেজাউল হক বলেন, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় কেবল উত্তরবঙ্গের নয়, গোটা দেশের উচ্চশিক্ষা বিকাশের এক উজ্জ্বল প্রতীক। এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পেছনে ছিল একটি দীর্ঘ আন্দোলন ও সংগ্রামের ইতিহাস, যা উত্তরবঙ্গের মানুষের শিক্ষা-আকাক্সক্ষাকে বাস্তবে রূপ দিয়েছে। ১৭ বছর আগে এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার মধ্য দিয়ে উত্তরাঞ্চলের শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার নতুন দুয়ার উন্মোচিত হয়েছিল।
প্রধান আলোচক বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাকালীন উপাচার্য প্রফেসর ডক্টর এম লুৎফর রহমান বলেন, একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শক্তি তার শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও গবেষণার মানের মধ্যে নিহিত। তাই এখন সময় এসেছে গবেষণাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়ার। একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি ও প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষা অপরিহার্য। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে চিন্তা চেতনার বিকাশ সাধন, মুক্তবুদ্ধি, মানবিক মূল্যবোধ ও সৃজনশীলতার পরিবেশ তৈরি করতে পারি তাহলেই বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় সত্যিকার অর্থে জ্ঞান-আলোকের কেন্দ্র হয়ে উঠবে।
কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ডক্টর মোহাম্মদ রাশেদুল ইসলাম বলেন, বর্তমান প্রশাসনের বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ইতোমধ্যে একটি স্বনামধন্য উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।
রংপুর বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম বলেন, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ইতোমধ্যে শিক্ষা ও গবেষণায় দৃশ্যমান অগ্রগতি অর্জন করেছে। ভবিষ্যতে এই বিশ্ববিদ্যালয় দেশের মানবসম্পদ উন্নয়ন ও দক্ষ গ্রাজুয়েট তৈরিতে আরও কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
সভাপতির বক্তব্যে উপাচার্য প্রফেসর ডক্টর মোহাম্মদ শওকাত আলী বলেন, প্রতিষ্ঠার পর নানা চ্যালেঞ্জ পেরিয়ে আমরা এখন এক নবজাগরণের পর্যায়ে এসে পৌঁছেছি। বর্তমান প্রশাগই বিশ্ববিদ্যালয়কে একাডেমিক উৎকর্ষের পথে এগিয়ে নিতে কাজ করছে। আমরা ইতিমধ্যে গবেষণারসুযোগ সম্প্রসারণ, নতুন ইনস্টিটিউট ও গবেষণা কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছি। শিক্ষার্থীদের হাতে কলমে শেখার সুযোগ তৈরি করতে শিল্প-একাডেমিক সংযোগ জোরদার করা হচ্ছে। আমাদের লক্ষ্য হলো বেরোবিকে আন্তর্জাতিক মানের জ্ঞানচর্চার কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা। আমরা খুব শিগগিরই বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়কে দেশের শীর্ষস্থানীয় উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সারিতে স্থান করে নেবে।
এ সময় ‘কিক মেক দ্যা ডিফারেন্স স্কলারশীপ ২০২৫’ এর আওতায় বেরোবির ৫ শিক্ষার্থীকে বৃত্তি প্রদান করা হয়। কিক রিটেইলার ব্র্যান্ড এর অর্থায়নে ও জার্মান উন্নয়ন সংস্থা জিআইজেড ইন্টারন্যাশনাল সার্ভিসেস এর সহায়তায় এই বৃত্তি বেরোবিতে চলমান রয়েছে।
বেলুন ও ফেষ্টুন উড়িয়ে গত রোববার রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদ্বোধন করা হয়। দিনব্যাপী কর্মসূচীর উদ্বোধন শেষে অনুষ্ঠিত হয় বর্ণাঢ্য আনন্দ শোভাযাত্রা। বর্ণিল এ আনন্দ শোভাযাত্রা বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ছাড়াও পার্কের মোড়সহ নগরীর প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। শেষে আলোচনা মঞ্চে কেক কাটেন অতিথিবৃন্দ। আলোচনা পর্বে জুলাই আহত শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা প্রদান করা হয়। দিনব্যাপি আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিকেলে ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, বাদ আছর মিলাদ মাহফিল এবং সন্ধায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৭তম বর্ষপূর্তিতে রঙ্গিন সাজে সজ্জিত করা হয় পুরো ক্যাম্পাস। প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাকালীন উপাচার্য, প্রতিষ্ঠা আন্দোলনের আহ্বায়ক, শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বাড়িয়ে তোলে আয়োজনের গভীরতা। এসময় স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তুলে ধরেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্মলগ্নের নানা চ্যালেঞ্জ, সংগ্রাম ও সফলতার কথা। তারা বলেন, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় উত্তরাঞ্চলের মানুষের স্বপ্ন ও সংগ্রামের প্রতীক। প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে যারা অংশ নিয়েছিলেন, তাদের অবদানের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানো হয়। প্রতিষ্ঠানের সাথে স্মরণীয় হয়ে থাকবে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী জুলাই আন্দোলনের প্রথম শহীদ আবু সাঈদ।