রাবি রিপোর্টার : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার ঘোষণায় গত সোমবার রাবি ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা ব্যাপক বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। অনেক ছাত্র ও ছাত্রীকে তাদের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করতে দেখা যায়। রাকসু নির্বাচন পেছানোয় শিক্ষার্থীরা বাড়িমুখী হয়েছেন।
আগামীকাল ২৫ সেপ্টেম্বর হওয়ার কথা ছিল রাকসু নির্বাচন। এ জন্য সকলপ্রকার প্রস্তুতিও নেয়া হয়। কিন্তু ‘শিক্ষক-কর্মচারীদের পোষ্য কোটা পুনর্বহালের দাবিতে সর্বাত্মক কর্মবিরতি’ অব্যাহত রাখার মুখে এই নির্বাচন আগামী ১৬ অক্টোবর বৃহস্পতিবার পুনর্নির্ধারণ করে নির্বাচন কমিশন। এতে ক্ষুব্ধ হন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এই সঙ্গে প্রতিবাদ জানায় নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী ইসলামী ছাত্রশিবির। গত সোমবার রাত সাড়ে ৯টায় রাকসু কার্যালয়ের সামনে একটি সাংবাদিক সম্মেলন করেন তারা। এতে অভিযোগ করে বলা হয়, একটি নির্দিষ্ট দলকে সুযোগ দিতেই বারবার রাকসু নির্বাচন পেছাচ্ছেন রাকসু নির্বাচন কমিশন।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি মুজাহিদ ফয়সাল বলেন, রাকসু নির্বাচন কমিশনারের এমন একতরফা সিদ্ধান্ত আমরা মানি না। একটি দলকে সুযোগ দিতেই বারবার এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। আগামী ১৬ অক্টোবর রাকসু নির্বাচনের যে তারিখ তারা দিয়েছেন সেটি যে পরিবর্তন হবে না তাতেও সন্দেহ রয়েছে। আমরা নির্বাচন কমিশনের এমন একচেটিয়া সিদ্ধান্তের প্রতি তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।
রাবি শাখা শিবিরের সভাপতি ও শিবির সমর্থিত সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট-এর ভিপি পদপ্রার্থী মোস্তাকুর রহমান জাহিদ বলেন, নির্বাচন কমিশনের এমন সিদ্ধান্তকে আমরা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছি। এর আগেও দফায় দফায় রাকসু নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তন করেছেন তারা। ছাত্রদলকে সুবিধা দিতে এর আগেও মনোনয়ন ফরম বিতরণের সময়সীমা বাড়িয়েছিল কমিশন। সোমবারও তারা ছাত্রদলের অবস্থান দেখে রাকসু নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তন করেছেন।
নির্বাচন পেছানোর প্রতিবাদে শিবির রাকসু কার্যালয় থেকে বিক্ষোভ মিছিল করে। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রধান গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের জোহা চত্বরে এসে মিলিত হন তারা। বিক্ষোভ মিছিলে শাখা শিবিরের নেতৃবৃন্দ ও বিভিন্ন হল ইউনিটের নেতারা মিলে সহস্রাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
‘পেছানো ছাড়া কোনো উপায় ছিল না’
রাকসু নির্বাচনের পেছনের কারণ জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মোস্তফা কামাল আকন্দ। তিনি বলেছেন, ক্যাম্পাসে প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে নির্বাচন পেছানো ছাড়া কোনো উপায় ছিল না। গত সোমবার রাতে রাকসু কোষাধ্যক্ষ কার্যালয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে বর্তমান পরিস্থিতির কথা তুলে ধরে মোস্তফা কামাল আকন্দ বলেন, একদিকে ক্যাম্পাসে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার কারণে শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের আন্দোলন চলছিল, অন্যদিকে নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার জন্য শিক্ষকদের প্রয়োজনীয় সহায়তা পাওয়া যায়নি। এজন্য ঘোষিত সময়ে নির্বাচন আয়োজন সম্ভব হয়নি। তিনি বলেন, রাকসু নির্বাচন নিয়ে পুরো জাতির আগ্রহ রয়েছে। আমাদেরও আগ্রহের কোনো ঘাটতি নেই। ১৬ অক্টোবর সব পক্ষকে নিয়ে ইনক্লুসিভ নির্বাচন আয়োজনের জন্য কমিশন বদ্ধপরিকর। মোস্তফা কামাল আকন্দ আরো বলেন, নির্বাচন কমিশন কোনো দল বা মতবাদের পক্ষে কাজ করছে না। ১৬ অক্টোবর ইনশাআল্লাহ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
বাড়িমুখী শিক্ষার্থীরা : পোষ্য কোটা ইস্যুতে অচলাবস্থার কারণে বাড়িমুখী হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। ইতোমধ্যে গত দুই দিনে অধিকাংশ শিক্ষার্থী ক্যাম্পাস ছেড়েছেন। বাকি যারা ক্যাম্পাসে ছিলেন রাকসু নির্বাচন পেছানোর ঘোষণা আসার পর তারাও মঙ্গলবার সকাল থেকে ধীরে ধীরে ক্যাম্পাস ছাড়তে শুরু করেছেন। এদিকে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদের পূর্বঘোষিত কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি পালন করছেন। গত দুদিন কর্মবিরতি থাকা সত্ত্বেও কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির রিডিং রুম খোলা ছিল। তবে মঙ্গলবার নির্ধারিত সময় সকাল ৮টায় রিডিং রুম বন্ধ থাকে। ফলে শিক্ষার্থীরা রিডিং রুম খোলার দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেন। প্রায় দেড় ঘণ্টা পর রিডিং রুম খোলা হয়। এদিন সকাল ৯টা থেকে কর্মবিরতি শুরু হয়। বন্ধ আছে সকল বিভাগের ক্লাস-পরীক্ষা এবং প্রশাসনিক সকল কার্যক্রম। প্রশাসন ভবনের সামনে ও বুদ্ধিজীবী চত্বরে বসে সময় কাটাচ্ছেন কর্মবিরতিতে অংশগ্রহণকারীরা। তবে বিভিন্ন ভবনের তালা খোলা হলে কিছু শিক্ষক ক্লাসও নেন। এদিকে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি খুবই কম। খাবার দোকানগুলোতে আসনও ছিল ফাঁকা। এদিকে রাকসু নির্বাচন উপলক্ষে ইতিপূর্বে ঘোষিত বুধবার ও বৃহস্পতিবার যথাক্রমে ২৪ ও ২৫ সেপ্টেম্বরের ঘোষিত ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
জামায়াতের নিন্দা ও প্রতিবাদ : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপচার্য (প্রশাসন) প্রফেসর ড. মাইনউদ্দিনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা কর্মচারীদের উপর গত শনিবার রাতে জুবেরী ভবনে দুষ্কৃতকারীদের ন্যক্কারজনক হামলার ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী রাজশাহী মহানগরী। সোমবার রাজশাহী মহানগরী জামায়াতের আমীর ড. মাওলানা কেরামত আলী ও সেক্রেটারি ইমাজ উদ্দিন মন্ডল এক যৌথ বিবৃতিতে এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। তারা বলেন, কিছু উচ্ছৃঙ্খল ছাত্র নামধারীরা শিক্ষক কর্মকর্তা কর্মচারীদের ওপর যেই নিপীড়ন চালিয়েছে তা গ্রহণযোগ্য নয়। তাদের চিহিৃত করে আইনের আওতায় এনে দ্রুত শাস্তি দাবি করছি।