১২০ জন আহত ১৪৪ ধারা জারি
হাটহাজারী (চট্টগ্রাম) সংবাদদাতা : চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে আল-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলূম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদরাসার শিক্ষার্থী ও জশনে জুলুস সমর্থকদের মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ৮টার দিকে হাটহাজারী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় শুরু হওয়া এ সংঘর্ষ গভীর রাত পর্যন্ত চলতে থাকে। এ ঘটনায় অন্তত ১২০ জন আহত হয়েছেন এবং বেশ কয়েকটি যাত্রীবাহী বাস ভাঙচুর করা হয়।
রাত সাড়ে ১২টার দিকে প্রায় ৫০০-৬০০ জনের একটি দল চারিয়া মাদরাসায় ইটপাটকেল ছুড়ে হামলা চালালে মূল ফটক ও দেয়ালের আংশিক ক্ষতি হয়। তবে মাইকে ঘোষণা দেওয়ার পর এলাকাবাসী রাস্তায় নামলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। ঘটনাটি নিশ্চিত করেছেন চারিয়া মাদরাসার ভারপ্রাপ্ত মোহতামিম মোহাম্মদ ওসমান।
রবিবার দুপুরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে হাটহাজারী মাদরাসা কর্তৃপক্ষ অভিযোগ করেন, জশনে জুলুসের গাড়ি থেকে আল্লামা আহমদ শফি ও আল্লামা বাবুনগরীর কবরকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ, উসকানিমূলক স্লোগান ও ব্যঙ্গাত্মক অঙ্গভঙ্গি করা হয়। ধৈর্য ধারণ করলেও পরবর্তীতে রাতে তাদের শিক্ষার্থীদের ওপর সশস্ত্র হামলা চালানো হয়, যাতে প্রায় ১৫০ জন আহত হন। তাদের দাবি, হামলাকারীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি দেওয়া এবং প্রয়োজনে বিকল্প রুট নির্ধারণ করা জরুরি।
হাটহাজারী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাজী তারেক আজিজ জানান, আহতদের মধ্যে ১০৭ জনকে হাটহাজারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে এবং গুরুতর আহত ১১ জনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
হাটহাজারী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তাপস কান্তি মজুমদার বলেন, গুরুতর আহতদের দ্রুত চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগ সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রয়েছে।
হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মুমিন জানান, পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে আজ (রবিবার) বিকেল ৪টায় উভয় পক্ষের প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে। আলোচনার মাধ্যমে এ ধরনের অনাকাক্ষিত ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এদিকে ঘটনায় অভিযুক্ত ফটিকছড়ির আরিয়ান ইব্রাহিমকে স্থানীয় থানা পুলিশ আটক করেছে। তিনি ফেসবুকে দেওয়া উসকানিমূলক পোস্টের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখতে উপজেলা প্রশাসন রবিবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত এগারোমাইল থেকে মীরেরহাট বাজার পর্যন্ত এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে সব ধরনের সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করেছে। বর্তমানে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন।
চট্টগ্রামে জশনে জুলুসে পদদলিত হয়ে দুজনের মৃত্যু
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম নগরীতে ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে আয়োজিত জশনে জুলুসে পদদলিত হয়ে এক কিশোরসহ দুজনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ছয়জন। শনিবার দুপুরে নগরীর মুরাদপুর এলাকায় এ মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন-পটিয়ার আইয়ুব আলী (৬০) এবং নগরীর কালামিয়া বাজার এলাকার কিশোর সাইফুল ইসলাম (১৩)।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক (এসআই) নূরে আলম আশিক জানান, জুলুসে প্রচণ্ড ভিড় ও গরমে কয়েকজন অসুস্থ হয়ে মাটিতে পড়ে যান। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় তাদের হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক দুজনকে মৃত ঘোষণা করেন। আহতদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক, তাকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে।
আঞ্জুমানে রহমানিয়া ট্রাস্টের মেডিকেল টিমের সদস্য আমিনুর রহমান বলেন, প্রচণ্ড ভিড়ের মধ্যে কয়েকজন হঠাৎ অসুস্থ হয়ে রাস্তায় পড়ে গেলে পদদলিত হয়ে আহত হন। তাদের মধ্যে আটজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়, তবে দুজনকে আর বাঁচানো সম্ভব হয়নি।
ক্ষতিপূরণ ও চিকিৎসা নিশ্চিতে সিদ্ধান্ত
হাটহাজারীতে গতকাল সংঘটিত অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার শান্তিপূর্ণ সমাধানের লক্ষ্যে ০৭ সেপ্টেম্বর বিকাল ৪টায় উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে বিবাদমান দুই পক্ষ, উপজেলা প্রশাসন,
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও এলাকাবাসীর প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।
সভায় ফলপ্রসূ আলোচনার মাধ্যমে তিন দফা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ প্রদানের ব্যবস্থা করা হবে।
আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিত করা হবে। উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সব ধর্মীয় অনুষ্ঠানে শব্দদূষণসহ যেকোনো গণউপদ্রব নিরসনে প্রতিনিধিদের নিয়ে স্বেচ্ছাসেবক টিম গঠন করা হবে। সভায় সভাপতিত্ব করেন হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মুমিন।