এবার বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) কম্বাইন্ড ডিগ্রির দাবিতে চলমান আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর বহিরাগতরা হামলা চালিয়েছে। চট্গ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে এই হামলার অনেকটাই মিল রয়েছে বলে মনে করছেন অনেকেই। এ ঘটনার পর ভিসির বাসভবন ঘেরাও করে রেখেছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। গতকাল রোববার রাতে এ ঘটনা ঘটে। রাত সাড়ে ৯টায় এ রিপোর্ট লিখা পর্যন্ত ক্যাম্পাসে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছিল।
সূতমতে, গতকাল দুপুর ১টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন মিলনায়তনে কম্বাইন্ড ডিগ্রির সমাধানে জরুরি অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল মিটিং বসে। বিদ্যমান দুটি ডিগ্রি রেখেই শিক্ষার্থীদের কম্বাইন্ড ডিগ্রি দাবি চালু সিদ্ধান্ত নিলে শিক্ষার্থীরা সব মিলিয়ে একটাই ডিগ্রির দাবি করে এবং দুই শতাধিক শিক্ষকসহ অডিটোরিয়ামে তালা দেয়। সন্ধ্যার সময় বহিরাগত কিছু লোক এসে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে। এতে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছে বলে জানা গেছে।
এদিকে এর আগে ‘কম্বাইন্ড ডিগ্রি’ চালুর দাবি পূরণ না হওয়ায় ভিসিসহ দুই শতাধিক শিক্ষককে অবরুদ্ধ করেন পশুপালন ও ভেটেরিনারি অনুষদের শিক্ষার্থীরা। বেলা একটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন মিলনায়তনে তাদের অবরুদ্ধ করে তালা ঝুলিয়ে দেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। সন্ধ্যা ছয়টায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত শিক্ষকেরা অবরুদ্ধ ছিলেন। তবে বহিরাগতদের আন্দোলনের পর ও তারা সেখানে ছিলেন বলে জানা গেছে।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের পশুপালন ও ভেটেরিনারি অনুষদের শিক্ষার্থীদের ‘কম্বাইন্ড ডিগ্রির’ (বিএসসি ইন ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল হাজবেন্ড্রি) দাবিতে চলমান আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে রোববার বেলা ১১টায় একাডেমিক কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন মিলনায়তনে এই সভায় কম্বাইন্ড ডিগ্রি চালুর পাশাপাশি পশুপালন ও ভেটেরিনারি ডিগ্রিও চালু রাখার সিদ্ধান্ত হয়। তবে মোট তিনটি ডিগ্রি চালু রাখার সিদ্ধান্ত মেনে নিচ্ছেন না পশুপালন ও ভেটেরিনারি অনুষদের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সব অনুষদের দুই শতাধিক শিক্ষক অংশগ্রহণ করেন। সভা শেষে তিন ডিগ্রির সিদ্ধান্ত ঘোষণা দেওয়া হলে ‘এক পেশায় এক ডিগ্রির (কম্বাইন্ড ডিগ্রি)’ দাবিতে মিলনায়তনে তালা ঝুলিয়ে দেন আন্দোলনকারীরা।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো. আসাদুজ্জামান সরকার বলেন, পশুপালন ও ভেটেরিনারি অনুষদের শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আজকে একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় সর্বসম্মতিক্রমে কম্বাইন্ড ডিগ্রির দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে। ডিন কাউন্সিলের আহ্বায়ককে প্রধান করে একটি চার সদস্যবিশিষ্ট কমিটি করা হয়েছে, যারা কম্বাইন্ড ডিগ্রির জন্য কোর্স কারিকুলাম প্রণয়ন করবে। আগামী সেশন থেকে কম্বাইন্ড কোর্সে ১৫০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হবে। এবার যারা ভর্তি হয়েছে, তাদের অপশন থাকবে তারা চাইলে ভেটেরিনারি, পশুপালন বা কম্বাইন্ড নিতে পারবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী দুই অনুষদকে এক করতে পারবেন না। দুই অনুষদ মিলিতভাবে কম্বাইন্ড ডিগ্রি দেবে এবং ধারাবাহিকভাবে দুই অনুষদ থেকেই ডিন হবে।
কম্বাইন্ড ডিগ্রির দাবিতে গত ২৫ জুলাই থেকে নানা আন্দোলন কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনে অংশ নেওয়া পশুপালন অনুষদের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী তাহমিনা আক্তার বলেন, আমাদের দাবি ছিল একটা ডিগ্রি এবং সেটি হলো কম্বাইন্ড ডিগ্রি। শিক্ষকবৃন্দের এই সিদ্ধান্ত আমাদের দাবিকে পূরণ করে না। আমাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত এই অবস্থান কর্মসূচি চলবে।