জবি সংবাদদাতা: বর্ষার ও মাহিরের সম্মিলিত পরিকল্পনায় খুন করা হয় জোবায়েদকে। জোবায়েদকে মাহির বাসার নিচ থেকে আঘাত করা শুরু করে মাহির ও তার বন্ধু ফারদীন আহমেদ আয়লান। এসময় জোবায়েদের খুনের সময় উপস্থিত ছিলো বর্ষা।
মঙ্গলবার ( ২১ অক্টোবর) ডিএমপির সংবাদ সম্মেলনে লালবাগ জোনের ডিসি মল্লিক আহসান সামী এ কথা বলেন, তিনি বলেন, ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে জোবায়েদকে হত্যার পরিকল্পনা করে বর্ষা-মাহির।
হত্যার দিনে মাহিরের সাথে তার আরো দুই বন্ধু ছিলো। হত্যার জন্য তারা নতুন দুইটা সুইচ গিয়ার কেনে। এদিন এলোপাতাড়ি ছুরি চালায় মাহির।
পুলিশ জানায়, বর্ষার সাথে মাহিরের ৯ বছরের সম্পর্ক ছিলো। কিন্তু মাঝে আবার বর্ষা জোবায়েদের উপর দূর্বল হয়ে পড়ে। এসময় বর্ষা মাহিরকে না করে দেয়। এবং সে জোবায়েদেকে পছন্দ করে বলে জানায়। কিন্তু কিছুদিন পরেই তার বয়ফ্রেন্ড মাহিরকে জানায় যে জোবায়েদকে আর ভালো লাগে না। তখন জোবায়েদকে হত্যার পরিকল্পনা করেন বর্ষা ও মাহির। জোবায়েদের সাথে মাঝে তিন মাসের প্রেমের সম্পর্ক ছিলো বর্ষার। কিন্তু পরবর্তীতে জোবায়েদের থেকে সরে আসতে চায় বর্ষা। জোবায়েদের সাথে এই তিন মাসের রিলেশন থাকা সময়েও বর্ষা মাহিরকে নিজের গহনা বেচে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা দিয়ে বাইক কিনে দেন।
ডিসি বলেন, এদিন বিকালে জীবন বাচাতে জোবায়েদ নিচে থেকে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠতে থাকে। তিন তলায় উঠার পরে সে আর হাটতে পারে না। এসময় সিড়িতে জোবায়েদের সাথে বর্ষার দেখা হয়। বর্ষাকে জোবায়েদকে বলে আমাকে বাচাও। কিন্তু বর্ষা বলে, তোমাকে না মারলে আমি মাহিরের হবো না। এসময় জোবায়েদের গলার ডান পাশে সুইচ গিয়ার দিয়ে আঘাত করে মাহির। ছুরি মেরে পালিয়ে যাওয়ার সময় মাহির তার বন্ধু আইলানকে ছুরি তুলে আনতে বলে।
ডিসি বলেন, এঘটনায় তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এবং মাহিরের একজন বন্ধুকে প্রিতমকে আমরা সাক্ষী হিসেবে রেখেছি। মাহির খুন করে প্রিতমের কাছে স্বীকার করে। এবং রক্ত ক্ষত নিয়ে তার বন্ধুর বাসায় যায়।
জোবায়েদ হোসাইন বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯- ২০ শিক্ষাবর্ষের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। একই সাথে তিনি কুমিল্লা জেলা ছাত্র কল্যাণের সভাপতি ও শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সদস্য ছিলেন। গত এক বছর ধরে জোবায়েদ হোসাইন পুরান ঢাকার আরমানীটোলায় ১৫,নুরবক্স লেনে রৌশান ভিলা নামের বাসায় বর্ষা নামের এক ছাত্রীকে ফিজিক্স ক্যামেস্ট্রী ও বায়োলজি পড়াতেন। ওই ছাত্রী বর্ষার বাবার নাম গিয়াসউদ্দিন।
রোববার আনুমানিক বিকাল ৪ টার ৪৫ মিনিটের দিকে ছাত্রীর বাসার তিন তলায় উঠতে সিড়িতে তিনি খুন হন। বাসার নিচ তলার সিড়ি থেকে তিন তলা পর্যন্ত সিড়িতে রক্ত পড়েছিলো। তিন তলার সিড়িতে উপুড় হয়ে পড়ে থাকতে দেখা যায়। পরবর্তীতে আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবিতে বংশাল থানার সামনে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি তারা তাতীবাজার মোড় অবরোধ করে রাখে।
রবিবার রাত ১১ টার দিকে ওই ছাত্রী বর্ষাকে হেফাজতে নেয় পুলিশ। দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদের পর পুলিশ ওই ছাত্রীকে হেফাজতে নেয়। এদিন রাত ১১ টার সময় আরমানিটোলার নূরবক্স রোড়ের নিজ বাসা থেকে তাকে পুলিশ প্রটোকলে পুলিশের গাড়িতে তোলা হয়। গতকাল জোবায়েদকে তার গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়।
তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা -আটক সবাই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী ও জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মোঃ জুবায়েদ হত্যার ঘটনায় তার ছাত্রী বার্জিস শাবনাম বর্ষা (১৯) ও তার প্রেমিক মোঃ মাহির রহমান (১৯) ও ফারদিন আহমেদ আয়লানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার সকালে বংশাল থানায় এ মামলা দায়ের করে জোবায়েদের ভাই এনায়েত হোসেন সৈকত। এছাড়া অজ্ঞাতনামা আরো ৪/৫ জনকে আসামী করা হয়েছে। এঘটনায় তিনজনকেই গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
মামলার বাদী মামলার বাদি এনায়েত হোসেন সৈকত বলেন, মামলায় যারা প্রকৃত আসামি আমরা তাদের নাম উল্লেখ করেই মামলা করেছি। আমরা চাই কোন নির্দোষ ব্যক্তি যেন ফেসে না যায় যারা প্রকৃত অপরাধী তারাই শাস্তি পাক। মামলায় যাদের নাম উল্লেখ করেছি তাদের সকলকেই পুলিশ গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে। এজন্য পুলিশকে ধন্যবাদ জানাই। আমরা সুষ্ঠ বিচার চাই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড তাজাম্মুল হক বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় চায় দ্রুত সময়ে স্বচ্ছ বিচার।
যেখানে শুধু মাত্র ইভিডেন্সিয়াল প্রুভ অনুযায়ী অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।