রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) ও হল সংসদ ও সিনেট নির্বাচনের শেষ সময়ে প্রার্থীদের প্রচারে ক্যাম্পাস ও নিকটস্থ এলাকাগুলো জমজমাট হয়ে উঠেছে। লিফলেট হাতে প্রার্থীরা ছুটছেন মেস, ছাত্রাবাস, বাসা-বাড়িতে অবস্থানরত ভোটারের দ্বারে দ্বারে গিয়ে দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি। ভোটকে সামনে রেখে এ প্রচার চলবে মঙ্গলবার পর্যন্ত।
নির্বাচনে ছাত্রদল ও ছাত্রশিবির-সমর্থিতসহ মোট ১১টি প্যানেল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। প্যানেলের পাশাপাশি স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও সমানভাবে প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। রাকসু নির্বাচনে ভোটার প্রায় ২৯ হাজার। তবে ভোটারদের ৬৮ শতাংশই অনাবাসিক। বড় ছাত্র সংগঠনগুলোর অনেক নেতাকর্মী থাকায় তারা মেসে থাকা ভোটারদের কাছে পৌঁছাতে পারছেন। রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোর প্রার্থীদের পক্ষে প্রচার চালাচ্ছেন দলীয় নেতাকর্মীরাও। কিন্তু বিপুল সংখ্যক অনাবাসিক ভোটারের কাছে পৌঁছাতে হিমশিম খাচ্ছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। তবে থেমে নেই কোনো প্রার্থী নিজের পরিকল্পনা অনুযায়ী আবাসিক-অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের মাঝে অনলাইনে ক্ষুদ্র বার্তা পাঠিয়ে ভোট ও দোআ চাচ্ছেন। ছাত্রশিবির মনোনীত ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেলের জিএস প্রার্থী ফাহিম রেজা বলেন, ‘অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছেন তারা।’ ছাত্রদল মনোনীত ‘ঐক্যবদ্ধ নতুন প্রজন্ম’ প্যানেলের জিএস প্রার্থী নাফিউল জীবন বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন বর্ষের অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য তাদের ছাত্রাবাসে যাচ্ছি। তাদের সঙ্গে কথা বলছি। তাদের আকাক্সক্ষার কথা শুনছি।’
শিবিরের প্যানেলের বক্তব্য
রাকসু নির্বাচনে শিবির সমর্থিত ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোটের’ ইশতেহারের অধিকাংশই ৬ মাসের মধ্যে বাস্তবায়ন সম্ভব বলে মন্তব্য করেছেন ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের ভিপি প্রার্থী মোস্তাকুর রহমান জাহিদ। শনিবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার মুক্তমঞ্চে রাকসু নির্বাচন কমিশন ও রাজশাহী ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং ফোরাম যৌথ আয়োজনে বিতর্ক অনুষ্ঠানে এক প্রশ্নের জবাবে এ মন্তব্য করেন। এ সময় তিনি আরো বলেন, ‘আমরা যে প্যানেলটি গঠন করেছি সেটি একটি ইনক্লুসিভ প্যানেল। চাইলে শুধু ছাত্রশিবিরের সদস্যদের নিয়েই প্যানেল গঠন করতে পারতাম; কিন্তু আমরা তা করিনি, বরং বিভিন্ন মতাদর্শের শিক্ষার্থীদের অন্তর্ভুক্ত করে প্যানেল দিয়েছি। আমাদের প্যানেলে যেমন ‘জুলাই আন্দোলনে আহত যোদ্ধা’ আছেন, তেমনি আছেন নারী প্রার্থীও। আমরা যে ইশতেহার প্রকাশ করেছি, তা ১২ মাস মেয়াদি হলেও ইনশাআল্লাহ ৬ থেকে ৭ মাসেই অধিকাংশ লক্ষ্য বাস্তবায়ন সম্ভব হবে।’ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী সহসভাপতি (ভিপি) প্রার্থীরা এতে অংশ নেন। তবে ছাত্রদল সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ নতুন প্রজন্ম’ প্যানেলের প্রার্থী শেখ নুর উদ্দীন আবীর উপস্থিত ছিলেন না।
১২-১৫ ঘণ্টার মধ্যেই ফল : ভিসি
১২ থেকে ১৫ ঘণ্টার মধ্যেই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশ করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন উপাচার্য প্রফেসর সালেহ হাসান নকীব। রোববার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। উপাচার্য বলেন, ‘রাকসু নির্বাচন অত্যন্ত স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন করা হবে। ভোট গ্রহণের পর থেকে ফলাফল ঘোষণা পর্যন্ত সমস্ত কার্যক্রম ক্যামেরার মাধ্যমে দেখানো হবে। আমরা আশা করছি আমাদের যে লজিস্টিক সাপোর্ট টিম আছে তারা খুব দক্ষ। ভোট গ্রহণের পর ১২ থেকে সর্বোচ্চ ১৫ ঘণ্টার মধ্যে আমরা ফলাফল প্রকাশ করতে পারবো। এখানে দুই থেকে তিন দিন সময় লাগবে না। তিনি বলেন, ১৬ অক্টোবর রাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠান দৃঢ় প্রত্যয়। সেই লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশনার, রিটার্নিং অফিসার ও প্রার্থীসহ সংশ্লিষ্ট সবাই নিরলসভাবে কাজ করছি। রাকসু নির্বাচন সফল করার জন্য শিক্ষক শিক্ষার্থী কর্মচারী সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাই।’ এ সময় উপ-উপাচার্য প্রফেসর মাইন উদ্দীন ও ড. ফরিদ উদ্দীন খান, ট্রেজারার প্রফেসর মতিয়ার রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
১০ দফা ইশতেহার ছাত্রদলের
রাকসু নির্বাচনে ১০ দফা ইশতেহার ঘোষণা করেছে ছাত্রদল সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ নতুন প্রজন্ম’ প্যানেল। রোববার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে এই ইশতেহার ঘোষণা করা হয়। এসময় লিখিত বক্তব্যে ১০ দফা ইশতেহার পাঠ করে জিএস পার্থী নাফিউল ইসলাম জীবন বলেন, ড. শামসুজ্জোহা স্যারের শহীদ হওয়ার দিনটিকে ‘জাতীয় শিক্ষক দিবস’ হিসেবে ঘোষণা, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করে একাডেমিক উৎকর্ষ নিশ্চিতকরণ এবং বিশ্ববিদ্যালয়কে মুক্ত জ্ঞানচর্চার কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের লাইব্রেরি, ইন্টারনেট ও বিদ্যুৎ সেবা উন্নয়ন, ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে শিক্ষার্থীদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, ক্যাম্পাসের চিকিৎসা কেন্দ্র আধুনিকায়ন, নারী শিক্ষার্থী এবং বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতকরণ, ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের সামাজিক সহাবস্থান এবং মুক্ত সাংস্কৃতিক চর্চার পরিবেশ নিশ্চিতকরণ, আবাসন সংকট নিরসন, স্বাস্থ্যসম্মত খাবার ও বিশুদ্ধ পানি নিশ্চিত করাসহ, দূরবর্তী শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমাতে রাবি রেলস্টেশন সচল করা এবং শিক্ষার্থীদের জন্য ডিসকাউন্ট টিকিটের ব্যবস্থা করা ক্যাম্পাস বাসের রুট এবং ট্রিপ সংখ্যা বৃদ্ধি করা।’ ইশতেহার ঘোষণা শেষে ভিপি পদপ্রার্থী শেখ নূর-উদ্দীন আবির বলেন, ‘আমাদের ইশতেহার ঘোষণা করতে একটু বিলম্ব হয়েছে। আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে, তাদের মতামত নিয়ে ইশতেহারগুলো সাজিয়েছি। আমরা যে ইশতেহারগুলো দিয়েছি তা কোনোটাই অসম্ভব নয়, শিক্ষার্থীরা যদি আমাদের সাথে থাকেন এবং প্রশাসনের সাথে যদি আমরা সমন্বয় করতে পারি তাহলে অল্প সময়ের মধ্যেই এগুলো বাস্তবায়ন করতে পারব।’