এটাই প্রকৃত চিত্র, অতিরিক্ত নম্বর দেওয়ার জন্য কাউকে বলা হয়নি: আন্ত:শিক্ষা বোর্ড সভাপতি

কোন আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই চলতি বছরের এসএসসি, দাখিল ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। এ বছর দেশের ১১টি শিক্ষা বোর্ডে গড় পাসের হার ৬৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ। গত বছর অর্থাৎ, ২০২৪ সালে গড় পাসের হার ছিল ৮৩ দশমিক ০৪ শতাংশ। সে হিসাবে এবার পাসের হার ১৪.৫৯ শতাংশ কমেছে।

বোর্ড পাস (%) জিপিএ-৫

ঢাকা ৬৭.৫১% ৩৭০৬৮

রাজশাহী ৭৭.৬৩% ২২৩২৭

কুমিল্লা ৬৩.৬০% ৯৯০২

যশোর ৭৩.৬৯% ১৫৪১০

চট্টগ্রাম ৭২.০৭% ১১৮৪৩

বরিশাল ৫৬.৩৮% ৩১১৪

সিলেট ৬৮.৫৭% ৩৬১৪

দিনাজপুর ৬৭.০৩% ১৫০৬২

ময়মনসিংহ ৫৮.২২% ৬৬৭৮

মাদ্রাসা ৬৮.০৯% ৯০৬৬

কারিগরি ৭৩.৬৩% ৪৯৪৮

মোট ৬৮.৪৫% ১৩৯০৩২

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ২টার দিকে এ ফল প্রকাশ করা হয়। ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের সম্মেলনকক্ষে ফলাফলের বিস্তারিত তুলে ধরেন বাংলাদেশ আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. খন্দোকার এহসানুল কবির।

প্রকাশিত ফলাফল পর্যালোচনা করে দেখা যায়, চলতি বছর দেশের ৩ হাজার ৭১৪টি কেন্দ্রে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় অংশ নেয় ১৯ লাখ ৪ হাজার ৮৬ জন। তাদের মধ্যে পাস করেছে ১৩ লাখ ৩ হাজার ৪২৬ জন। পাস করাদের মধ্যে ছাত্র ৬ লাখ ২৬ হাজার ৯৮১ জন এবং ছাত্রী ৬ লাখ ৭৬ হাজার ৪৪৫ জন।

দেশের ১১টি শিক্ষা বোর্ডে এবার গড় পাসের হার ৬৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ। ছাত্রদের পাসের হার ৬৫ দশমিক ৮৮ শতাংশ এবং ছাত্রীদের পাসের হার ৭১ দশমিক ০৩ শতাংশ।

এবার মোট জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১ লাখ ৩৯ হাজার ৩২ জন। তাদের মধ্যে ছাত্র ৬৫ হাজার ৪১৬ জন এবং ছাত্রী ৭৩ হাজার ৬১৬ জন।

দেশের ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয় ১৫ লাখ ৭৯ হাজার ৩১০ জন। তাদের মধ্যে পাস করেছে ১০ লাখ ৬ হাজার ৫৫৪ জন। গড় পাসের হার ৬৮ দশমিক ০৪ শতাংশ।

এসএসসিতে পাস করাদের মধ্যে ছাত্র ৪ লাখ ৫৫ হাজার ৪৭৭ জন এবং ছাত্রী ৫ লাখ ৫১ হাজার ৭৭ জন। পাসের হার যথাক্রমে ছাত্র ৬৫ দশমিক ১১ শতাংশ এবং ছাত্রী ৭০ দশমিক ৬৭ শতাংশ।

৯টি সাধারণ বোর্ডের অধীনে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ২৫ হাজার ১৮ জন। তাদের মধ্যে ছাত্রী ৬৬ হাজার ৭৮০ জন এবং ছাত্র ৫৮ হাজার ২৩৮ জন।

গতকাল দুপুরে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড সভাকক্ষে বাংলাদেশ আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি ও ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. খন্দোকার এহসানুল কবির বলেন, যে ফল প্রকাশিত হয়েছে, সেটি প্রকৃত ও সত্য। কোনো ধরনের অতিরিক্ত নম্বর দেওয়ার জন্য কাউকে বলা হয়নি। সামগ্রিকভাবে এবারের ফলে প্রকৃত চিত্র উঠে এসেছে। তিনি বলেন, আগে কী হয়েছে, সেটি আমরা বলব না। তবে, এখন যে তথ্য দিয়েছি, সেটিই প্রকৃত। যা হয়েছে সেটি উপস্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যে আমাদের কোনো হাত নেই। আমাদের ওপর মহল থেকে কোনো ধরনের চাপ ছিল না। আমাদের বলা হয়েছে, যে রেজাল্ট হবে, সেটিই দিতে হবে। আমরা পরীক্ষকদের এ অনুরোধ জানিয়েছি। তাদের যথার্থভাবে খাতা মূল্যায়ন করার জন্য বলা হয়েছে।

দাখিলে পাস ৬৮.০৯ শতাংশ, জিপিএ-৫ ৯০৬৬ জন: মাদরাসা বোর্ডের অধীনে দাখিল পরীক্ষায় অংশ নেন ২ লাখ ৮৬ হাজার ৫৭২ জন। পাস করেছে ১ লাখ ৯৫ হাজার ১১৫ জন। তাদের মধ্যে ছাত্র ৯৬ হাজার ৯৩৫ এবং ছাত্রী ৯৮ হাজার ১৮০ জন।

দাখিলে এবার গড় পাসের হার ৬৮ দশমিক ০৯ শতাংশ। ছাত্রদের পাসের হার ৬৫ দশমিক ৮৩ এবং ছাত্রীদের পাসের হার ৭০ দশমিক ৪৭ শতাংশ।

এবার দাখিলে সারাদেশে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৯ হাজার ৬৬ জন। তাদের মধ্যে ছাত্র ৪ হাজার ৮৮৭ জন এবং ছাত্রী ৪ হাজার ১৭৯ জন।

কারিগরিতে পাসের হার ৭৩.৬৩ শতাংশ: কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এবার পরীক্ষায় অংশ নেয় ১ লাখ ৩৮ হাজার ২০৪ জন। তাদের মধ্যে পাস করেছে ১ লাখ ১ হাজার ৭৫৭ জন। মোট পাস করাদের মধ্যে ছাত্র ৭৪ হাজার ৫৬৯ জন এবং ছাত্রী ২৭ হাজার ১৮৮ জন।

এবার কারিগরিতে গড় পাসের হার ৭৩ দশমিক ৬৩ শতাংশ। তার মধ্যে ছাত্ররা পাস করেছেন ৭১ দশমিক ০৯ শতাংশ এবং ছাত্রীদের পাসের হার ৮১ দশমিক ৬২ শতাংশ।

কারিগরি বোর্ডের অধীনে এবার সারাদেশে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪ হাজার ৯৪৮ জন। তাদের মধ্যে ছাত্র ২ হাজার ২৯১ জন এবং ছাত্রী ২ হাজার ৬৫৭ জন।

গণিতে ভরাডুবি : এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় এবার ভয়াবহ ফল বিপর্যয় হয়েছে। বিগত বছরের চেয়ে এবার পাসের হার কমেছে ১৪ দশমিক ৫৯ শতাংশ। মূলত গণিত বিষয়ে ফেল করার কারণে এবার ফলাফল খারাপ করেছে অধিকাংশ বোর্ড। যে শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষার্থীরা গণিত বিষয়ে ভালো করেছে, সেখানে গড় পাসের হারও বেড়েছে।

প্রকাশিত ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এবার ১১টি শিক্ষা বোর্ডে গড় পাসের হার ৬৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ। এরমধ্যে সবচেয়ে নিচে রয়েছে বরিশাল বোর্ড। এ বোর্ডে পাসের হার মাত্র ৫৬ দশমিক ৩৮ শতাংশ। অর্থাৎ প্রতি ১০০ জনে ফেল করেছে প্রায় ৪৪ জন।

বোর্ড সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বরিশাল বোর্ডে এবার ফল বিপর্যয়ের নেপথ্যে গণিতের ভরাডুবি বড় কারণ। এবার বোর্ডটিতে গণিতে পাসের হার ৬৪ দশমিক ৬২ শতাংশ। অর্থাৎ, বরিশাল বোর্ডে প্রতি ১০০ জনে ৩৫ জনই গণিতে ফেল করেছেন।

একই অবস্থা ময়মনসিংহ বোর্ডেরও। এ বোর্ডে গড় পাসের হার মাত্র ৫৮ দশমিক ২২ শতাংশ। প্রকাশিত ফলাফলে দেখা যায়, ময়মনসিংহ বোর্ডে গণিতে পাসের হার মাত্র ৬৪ দশমিক ২৭ শতাংশ। যার ধাক্কা লেগেছে গড় পাসের হারেও।

এছাড়া ঢাকা, কুমিল্লা, দিনাজপুর ও মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডেও গণিতে পাসের হার ৭০ শতাংশের ঘরে। ঢাকা বোর্ডে গণিতে পাস করেছেন ৭৫ দশমিক ১৪ শতাংশ শিক্ষার্থী। কুমিল্লায় ৭২ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ, দিনাজপুরে ৭১ দশমিক ৩৫ শতাংশ এবং মাদরাসা বোর্ডে ৭৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ। ফলে এ বোর্ডগুলোতেও গড় পাসের হার ‘সন্তোষজনক’ হয়নি।

তবে পাসের হারে ভালো অবস্থানে থাকা রাজশাহী বোর্ডের পরীক্ষার্থীরা গণিতে বেশ ভালো করেছে। এ বোর্ডে গড় পাসের হার ৭৭ দশমিক ৬৩ শতাংশ। আর রাজশাহী বোর্ডে গণিতে পাসের হার ৮৬ দশমিক ৫২ শতাংশ।

দ্বিতীয় স্থানে থাকা যশোর বোর্ডও গণিতে তুলনামূলক ভালো ফল করেছে। এ বোর্ডে গণিত বিষয়ে পাসের হার ৮৫ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ। গড় পাসের হারে তৃতীয় অবস্থানে থাকা কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে গণিতে পাসের হার সবচেয়ে বেশি। এ বোর্ডে গণিত বিষয়ে পাস করেছেন ৮৮ দশমিক ৭২ শতাংশ শিক্ষার্থী। এছাড়া গণিতে ৮০ শতাংশের বেশি পাসের হার রয়েছে চট্টগ্রাম (৮১ দশমিক ৫৩) ও সিলেট (৮৩ দশমিক ১৭) বোর্ডে।