তীব্র শিক্ষক সংকটে বিপর্যয়ের মুখে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের একাডেমিক কার্যক্রম। প্রয়োজনীয় সংখ্যক স্থায়ী শিক্ষকের অভাব এবং অন্য বিভাগ থেকে শিক্ষক ধার করে শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনায় উদ্ভুত এই সংকট সমাধানে দ্রুত শিক্ষক নিয়োগের জোরালো সুপারিশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অনুষদ। গত বুধবার সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের সভায় অনুষদভুক্ত সাতটি বিভাগের সভাপতি ও সিনিয়র শিক্ষকদের উপস্থিতিতে এ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

সভায় অনুষদের ডিন-এর সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন লোক প্রশাসন, অর্থনীতি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ, ফোকলোর স্টাডিজ, সমাজ কল্যাণ এবং কমিউনিকেশন এন্ড মাল্টিমিডিয়া জার্নালিজম বিভাগের সভাপতিগণ ও অন্যান্য সিনিয়র শিক্ষকবৃন্দ।

অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. বেগম রোকসানা মিলি শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, “সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের একাডেমিক সকল সমস্যার মূল শিক্ষক সংকট। এই সংকট নিরসনে আমরা উপাচার্যকে লিখিতভাবে অবহিত করব, যাতে তিনি জোরালো পদক্ষেপ নিতে পারেন।

অনুষদের ভয়াবহ অবস্থার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, “মাত্র তিনজন শিক্ষক দিয়ে একটি বিভাগ কীভাবে চলে? যেখানে ৪৪-৪৫টি কোর্স পড়াতে হয়, তা এত কম শিক্ষক দিয়ে সম্ভব নয়। এটি সম্পূর্ণরূপে একটি গোঁজামিল। একজন শিক্ষক একসাথে ২-৩টি কোর্সের বেশি পড়াতে পারেন না, অথচ এখানে কেউ কেউ ৭-৮টি কোর্স পর্যন্ত নিচ্ছেন। এটা কি পড়ালেখা নিশ্চিত করা সম্ভব? এই অনুষদকে গতিশীল করতে শিক্ষক নিয়োগের কোনো বিকল্প নেই।”

তিনি নিয়োগ প্রক্রিয়ার গতি নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করে যোগ করেন, “৫ আগস্টের পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগ হয়েছে, কিন্তু এখানে কেন হচ্ছে না? আমাদের অনুষদের কয়েকটি বিভাগের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়েছে প্রায় ছয় মাস হতে চলল, কিন্তু নিয়োগ হচ্ছে না। এর কারণ আমি বুঝতে পারছি না, এটি অত্যন্ত দুঃখজনক।”

জানা যায়, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের অধীনে থাকা লোক প্রশাসন, অর্থনীতি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ, ফোকলোর স্টাডিজ, সমাজ কল্যাণ এবং কমিউনিকেশন এন্ড মাল্টিমিডিয়া জার্নালিজম—এই সাতটি বিভাগেই এই সংকট প্রকট। বিভাগীয় সভাপতিদের অভিযোগ, বারবার চাহিদা পাঠানো সত্ত্বেও প্রশাসনের স্বদিচ্ছা ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়া আটকে আছে। এর ফলে শিক্ষার্থীদের মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা অসম্ভবপর হয়ে পড়ছে।

উল্লেখ্য, শিক্ষক সংকট নিরসনে গত ২০ জানুয়ারি থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের ২১টি বিভাগে ৫৯টি পদের জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছিল। তবে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) অর্থ ছাড় না দেওয়ায় নিয়োগ স্থগিত হয়ে যায়। তবে সাম্প্রতিক সময়ে ইউজিসি ছয়টি বিভাগে ছয়টি পদের জন্য অর্থ ছাড় দিয়েছে, যা বর্তমান সংকটের তুলনায় নগণ্য। এই অল্প সংখ্যক নিয়োগও একটি আশার আলো জাগালেও, পুরো সংকট কাটাতে তা সময়সাপেক্ষ হবে বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।