জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম বলেছেন, 'আমাদের এ ক্যাম্পাসে শতকরা ৯০ শতাংশ মুসলিম শিক্ষার্থী থাকা সত্ত্বেও বিগত ফ্যাসিবাদী আমলে তারা নিজেদের ধর্মীয় কার্যক্রম তেমনভাবে পরিচালনা করতে পারেনি। আমরা গত এক বছর ধরে সকল ধর্মের ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলো পালনে সহাবস্থান ও ন্যায্যতা নিশ্চিত করার জন্য কাজ করে যাচ্ছি।'

মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদ প্রাঙ্গণে ইসলামী ছাত্রশিবির আয়োজিত ‘কবি মতিউর রহমান মল্লিক মেরিট অ্যাওয়ার্ড ২০২৫’ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

উপাচার্য বলেন, 'বিগত বছরগুলোতে আমার এমনই মনে হয়েছে এই দেশে মুসলিম হওয়াই অপরাধ। এখন আমাদের ক্যাম্পাসে সবাই স্বাধীনভাবে যার যার ধর্ম পালন করতে পারে। আমরা আমাদের যে কোনো সংকটে মসজিদে যাই, আল্লাহর কাছে সাহায্য চাই। আমাদের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় তথা দেশের যেন কল্যাণ হয়, সেটাই আমাদের কামনা। আমাদের সন্তানেরা মৃত্যুবরণ করলে আমরা মসজিদে যাই, দোয়া করি। সাহায্য চাওয়ার জন্য এর চেয়ে বড় জায়গা আর কী হতে পারে? আমাদের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠিত করতে হবে, একই সঙ্গে অন্য ধর্মাবলম্বীদের সংস্কৃতি পালনে সহযোগিতাও করতে হবে।'

তিনি আরও বলেন, 'বিগত সময়ে এই ক্যাম্পাসে, এমনকি আমার বিভাগেও, অনেক শিক্ষার্থী ছিল যারা শিবির করতো বলে নানান অত্যাচার ও নির্যাতনের শিকার হয়েছে। তারা কত কষ্ট করে শিক্ষাজীবন শেষ করেছে, তা আমরা সকলে অবগত।'

এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী হল প্রভোস্ট অধ্যাপক আঞ্জুমান আরা বলেন, 'আমি ছাত্রশিবিরকে স্টাডি করছি ডাকসু নির্বাচনের সময় থেকে। মেরিট অ্যাওয়ার্ডের মতো প্রোগ্রাম ছাত্রশিবির ছাড়া অন্য কোনো সংগঠনকে করতে দেখিনি। আজকে আমি কোনো শোডাউন দেখি নাই। আমরা পরিবর্তন চাই, আর পরিবর্তনের জন্যই জুলাইয়ে এত মানুষ জীবন দিয়েছে। ছাত্রদল আমার কাজে কোনো প্রভাব বিস্তার করেনি। আশা করি সব রাজনৈতিক দলই মেধাবীদের মূল্যায়ন করবে।'

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ইউনিভার্সিটি টিচার্স লিংক (ইউটিএল)-এর কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বিলাল হোসাইন বলেন, 'শিক্ষার্থীদের অর্জনগুলোকে আমরা স্বীকৃতি দিতে ব্যর্থ হচ্ছি। এর দায় যেমন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের, তেমনি শিক্ষকদেরও। আমরা যদি আমাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারি, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক মান অনেক উন্নত হবে। শিক্ষকের কাজ কোনো রাজনৈতিক দলের লেজুড়বৃত্তি করা নয়; বরং একাডেমিক জায়গায় নিজেদের স্বাক্ষর রেখে যাওয়াই আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত।'

প্রধান আলোচকের বক্তব্যে ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম বলেন, 'কবি মতিউর রহমান মল্লিক সুস্থ সাংস্কৃতিক পরিবেশ তৈরি করতে চেয়েছিলেন। আজ আমাদের এই অবস্থান নিয়ে অহংকার করা যাবে না, কারণ অহংকার মানুষকে পতনের দিকে নিয়ে যায়। এ সফলতার পেছনে মা-বাবা, পরিবার, আত্মীয়স্বজন, শিক্ষকসহ অনেকের অবদান রয়েছে। আমার বার্তা হলো- আপনারা সৎ থাকবেন, নিজেদের সৎ, দেশপ্রেমিক ও দক্ষ নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলবেন।'

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হল–১-এর প্রভোস্ট মো. আসাদুজ্জামান সাদি, কৃষিবিদ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মো. আলী আফজাল, বোটানি বিভাগের অধ্যাপক ড. শাখাওয়াত হোসেনসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অন্যান্য সক্রিয় ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।