আমতলী (বরগুনা) সংবাদদাতা : আমতলীতে মাধ্যমিক পর্যায়ে নারী শিক্ষার একমাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভবন ৫৮ বছরেও সংস্কার না করায় প্রায় সাড়ে ৪ শতাধিক শিক্ষার্থীকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ক্লাশ করতে হচ্ছে। ৬টি ভবনের মধ্যে সবগুলো ভবনই ব্যবহার অযোগ্য হওয়ায় এখন জোরাতালি দিয়ে চলছে শ্রেণি কার্যক্রম।

বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আমতলীর শিক্ষানুরাগী সাবেক এমএলএ মরহুম মফিজ উদ্দিন তালুকদার ১৯৬৫ সালে আমতলী শহরের প্রাণকেন্দ্রে বঙ্গবন্ধু সড়কের পাশে আমতলী এমইউ (মফিজ উদ্দিন) বালিকা পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি স্থাপন করেন। বিদ্যালয়টিতে বর্তমানে ৪২০জন শিক্ষার্থী রয়েছে। বিদ্যালয়টির ৬টি ভবনের মধ্যে সবগুলো ভবনই ব্যবহার অযোগ্য। বিদ্যালয়টি ১৯৬৫ সালে প্রতিষ্ঠার পর ১৯৬৬ সালে ৪ কক্ষের ১ তলা মূল ভবনটি নির্মাণ করা হয়। এই ভবনে রয়েছে ১টি হলরুম, প্রধান শিক্ষকের বসার কক্ষ, অফিস, শিক্ষক মিলনায়তন ও শেখ রাসেল কম্পিউটার ল্যাব। ভবনটি নির্মাণের পর কোন ধরনের সংস্কার না করায় বর্তমানে ভবনের ছাদে ফাটল ধরে অনেক জায়গা দিয়ে ধসে পরেছে। বর্ষা মৌসুমে ছাদ চুয়ে পানি পরায় মূল ভবনের ভিতরে কেউ বসতে পারে না। এই ভবনের একটি কক্ষে রয়েছে শেখ রাসেল কম্পিউটার ল্যাব। পানি পরার কারণে বর্ষা মৌসূমে তা পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখতে হয়। প্রধান শিক্ষক, অফিসকক্ষসহ সকল রুমের একই অবস্থা। ভবনের অধিকাংশ দরজা জানালা খুলে পরেছে। মূল ভবনের দক্ষিণ পাশে ১৯৭২ সালে ২ কক্ষের একটি টিনসেডের ক্লাশ রুম নির্মাণ করা হয়। সংস্কারের অভাবে ৫ বছর পূর্বে সেটি তালাবদ্ধ করে রাখ হয়েছে। এর পাশেই রয়েছে দোতালা টিনসেডের ১টি বিজ্ঞানাগার ভবন। সংস্কারের অভাবে ব্যবহার অযোগ্য হওয়ায় এটিও বর্তমানে তালাবদ্ধ। ছাউনির টিন দিয়ে পানি পরায় বিজ্ঞানাগারের মালামাল অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। মূল ভবনের দক্ষিণ পাশে শিক্ষার্থীদের ক্লাশের জন্য রয়েছে ২টি ভবন। ১টি তিন কক্ষের আরেকটি দুই কক্ষের। পূর্ব পাশে রয়েছে দোতালা পাঁচ কক্ষের ১টি ভবন। তিন কক্ষের ভবনটি ১৯৮৭ সালে নির্মাণ করা হয়। দুই কক্ষের ভবনটি নির্মাণ করা ২০০৪ সালে। পূর্ব পাশের দোতলা পাঁচ কক্ষের ভবনটি নির্মাণ করা ২০০২ সালে। নির্মাণের পর ভবনগুলো সংস্কার না করায় সব ভবনগুলোই জরাজীর্ন এবং ব্যবহার অযোগ্য হয়ে পরেছে। ভবন ৩টির দেয়াল এবং ছাদের পলেস্তারার খসে পরেছে। দরজা জানালা খুলে গেছে। ছাদে ফাটল ধরায় বর্ষা মৌসুমে ছাদ চুয়ে পানি পরে ফলে বর্ষা মৌসুমে শিক্ষার্থীরা ঠিকমত বসে ক্লাশ করতে পারে না। মেঝে গর্তহয়ে বড় বড় খাদের সৃষ্টি হয়েছে। পূর্ব পাশের দোতালা ৫ কক্ষের ভবনটিতে নির্মানের সময় নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করায় অতি অল্প সময়ে ভবনটি মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ন হয়ে পরে। ভবনটি অধিক নাজুক হওয়ায় ভয়ে কোন শিক্ষার্থীরা দোতালায় উঠতে চান না।

বিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে রয়েছে প্রধান শিক্ষক এবং নৈশ প্রহরীর জন্য দুটি টিন সেডের ঘর। এগুলোও সংস্কার না হওয়ায় জরাজীর্ন অবস্থায় রয়েছে। বসবাসকারীরা নিজেদের টাকায় কোন রকম ঠিক করে বসবাস করলেও রয়েছে ঝুঁকিপূর্ন অবস্থায়।

বিদ্যালয়টি নারী শিক্ষার হলেও স্থাপনের পর থেকে নেই কোন সীমানা প্রাচীর। বিদ্যালয়টি শহরের প্রধান সড়কের পাশে নির্মিত হওয়ায় এবং সড়ক থেকে দেখা যাওয়ার কারণে নারী শিক্ষার্থীরা খেলাধুলায় সংকোচ বোধ করছে। এছাড়া সীমানা প্রাচীর না থাকায় অবাধে গরু ছাগল প্রবেশ করে মাঠ নষ্ট করছে। তাছাড়া সীমানা প্রাচীর না থাকার কারণে রাতের অন্ধকারে বিদ্যালয়ের মাঠ বসে মাদকসেবীদের আড্ডা খানা।

বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ঝিনিয়া আক্তার, লামিয়া নেওয়াজ অর্চি বলেন, আমাদের বিদ্যালয় ভবন অত্যান্ত ঝুঁকিপূর্ন। ছাদ, দেয়াল ও পিলারের পলেস্তাররার খসে পড়েছে। বর্ষ মৌসুমে ছাদ চুয়ে পানি পরে।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শাহ আলম কবীর বলেন, বিদ্যালয়ের ৬টি ভবনের মধ্যে সবভবনগুলো এখন ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পরেছে। ছাদের, দেয়ালের এবং পিলারের পলেস্তারার খসে পরায় ভবনগুলো অত্যান্ত ঝুঁকি পূর্ন অবস্থায় শিক্ষার্থীরা ক্লাশ করছে। এবিষয়ে উর্ধতন কর্তৃপক্ষোর নিকট অনেকবার আবেদন করা হয়েছে।

আমতলী উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার মো. সেলিম মাহমুদ বলেন, আমতলী এমইউ বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভবনগুলো অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ন অবস্থায় রয়েছে।

বরগুনা জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জসিম উদ্দিন বলেন, নতুন ভবন নির্মাণের জন্য উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট সুপারিশ করা হবে। আমতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রোকনুজ্জামান খান বলেন, শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে ভবন সমস্যা সমাধানের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হবে।