সাকীফ বিন আলম, ইবি: ইসলামী শিক্ষার সাথে আধুনিক শিক্ষার সমন্বয় সাধনের লক্ষ্য নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হলেও কাল পরিক্রমায় ইসলাম বিদ্বেষকেই বানানো হয়েছিলো তথাকথিত উন্নয়নের হাতিয়ার। যার অংশ হিসেবে ২০১৭ সালে জঙ্গী তৈরীর কারখানা আখ্যা দিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয় ক্যাম্পাসে অবস্থানরত শিক্ষক-কর্মকর্তাদের সন্তানদের ধর্মীয় শিক্ষার নিমিত্তে কেন্দ্রীয় মসজিদে পরিচালিত নূরানী মক্তব। বিরোধী শক্তির জুলুম-নির্যাতনের ভয়ে সেসময় মুখ বুজে থাকলেও জুলাই বিপ্লবোত্তর সময়ে এসে মুখ খুলতে শুরু করেছেন ভুক্তভোগীরা। ইসলামবিদ্বেষ থেকে বন্ধ করা এই মক্তবটিকে পুনরায় চালু করার দাবি জানিয়েছেন তারা।

জানা যায়, জেলা শহর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় বেশ দূরবর্তী হওয়ার কারণে ক্যাম্পাসে অবস্থানরত শিক্ষক-কর্মকর্তাদের সন্তানদের মানসম্মত ধর্মীয় শিক্ষার সুযোগ ছিলো অনেকটাই অপ্রতুল। সেই অভাব ঘোচাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরেই চালু করা হয় এক মক্তব। এরপর থেকেই বিভিন্ন অনুদানে মসৃণ গতিতে চলছিলো এর কার্যক্রম।

ভুক্তভোগী ও সংশ্লিষ্টরা জানান, ইসলামপন্থীদের এমন উত্থান মেনে নিতে পারেননি তৎকালীন প্রক্টর ড. মাহবুব। এই মক্তব বন্ধ করতে আদা-জল খেয়ে লাগেন তিনি। মক্তবের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও সংশ্লিষ্ট অভিভাবকদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে মক্তববিমুখ করতে প্রথমে ‘জঙ্গী কারখানা’র তকমা লাগিয়ে দফায় দফায় পুলিশী তল্লাশী চালানো হয়। কিন্তু তাতে বিশেষ কাজ না হলে ক্ষমতার অপব্যবহার করে করেন স্বার্থসিদ্ধির পথে হাঁটেন তিনি। যার অংশ হিসেবে ২০১৭ সালের ৮ই এপ্রিল কেন্দ্রীয় মসজিদ পরিচালনা কমিটির এক মিটিং বসানো হয় উপাচার্যের কার্যালয়ে। তবে সে মিটিংয়ে রাখা হয়নি মক্তব পরিচালনা কমিটির সদস্য ও মসজিদের ইমামকে। সেই মিটিংয়ে ড. মাহবুব সহ তৎকালীন কোষাধ্যক্ষ, রেজিস্ট্রার, অধ্যাপক দেবাশীষ শর্মা, অধ্যাপক ড. পরেশ চন্দ্র বর্ম্মণসহ নয় শিক্ষকের উপস্থিতিতে মক্তবটি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। অন্যদিকে মক্তবের শূণ্যস্থান পূরণের কথা বলে স্কুলের শিশু শ্রেণী এবং প্রথম-দ্বিতীয় শ্রেণীতে আরবী পাঠদানের জন্য অস্থায়ীভাবে দুজন শিক্ষক নিযুক্ত করা হয়। তবে করোনার সুযোগে তাদের ছাঁটাই করে শিক্ষার্থীদের আরবি শিক্ষার পথ রুদ্ধ করে দেয় তৎকালীন ইসলামবিদ্বেষী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। পরবর্তীতে মক্তবের শিক্ষক ও পরিচালনা কমিটির সদস্যরা মক্তবটি পুনরায় চালু করার উদ্যোগ নিতে গেলে আবারো প্রক্টর মাহবুব কতৃক হুমকির সম্মুখীন হন বলে জানান তারা।

তৎকালীন মক্তবের শিক্ষক খুরশিদ আলম বলেন, মক্তব বন্ধের পর তৎকালীন প্রক্টর আমাদেরকে হুমকি দিয়েছিলো যাতে পুনরায় মক্তব চালুর বিষয়ে কাজ না করি। এছাড়া ক্যাম্পাসের বাইরে কেউ কেউ মক্তবটি চালুর চেষ্টা করলেও প্রক্টর মাহবুবের ভয়ে কেউ আমাদের ঘর দিতে চায়নি।

মক্তব পরিচালনা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. আব্দুল হান্নান শেখ বলেন, মক্তব বন্ধ করার জন্য তৎকালীন প্রক্টর ড. মাহবুব মক্তবকে জঙ্গী কারখানা আখ্যা দিয়ে দুই দফায় পুলিশ নিয়ে এসে তল্লাশী করেন। ২০১৭ সালে জঙ্গী কারখানা ট্যাগ দিয়ে মক্তব বন্ধ করে এর পরিবর্তে স্কুলে একটা আরবী ক্লাসের ব্যবস্থা করা হয়। পরবর্তীতে করোনার সময়ে সেটাও বন্ধ করে দেয়া হয়।

এবিষয়ে তৎকালীন প্রক্টর ড. মাহবুবর রহমান বলেন, এসব অভিযোগ সত্য নয়।