সরকারি স্কুলে ভর্তির ক্ষেত্রে এবারও লটারির মাধ্যমে শিক্ষার্থী নির্বাচন করা হবে। তবে লটারি ব্যবস্থায় অনিশ্চয়তা তৈরি হওয়ায় ভালো স্কুলে ভর্তি নিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে শঙ্কা রয়ে গেছে। লটারির মাধ্যমে ‘অসুস্থ প্রতিযোগিতা’ কমানোর কথা বলা হলেও বিভিন্ন কোটার কারণে আপত্তি জানাচ্ছেন অনেকে।
প্রকাশিত ভর্তি নীতিমালা অনুযায়ী, এ বছরও ৬৩ শতাংশ কোটা বহাল রাখা হয়েছে। এর মধ্যে ক্যাচমেন্ট এরিয়া কোটা ৪০ শতাংশ—যা নিয়ে সবচেয়ে বেশি অসন্তোষ অভিভাবকদের। বিশেষ করে কর্মসূত্রে ঢাকায় অস্থায়ীভাবে বসবাসরত পরিবারগুলো এই কোটা বাতিলের দাবি জানাচ্ছেন।
অন্যদিকে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও মাউশির কর্মকর্তারা বলছেন, ক্যাচমেন্ট এরিয়া কোটা রাখার ফলে বিশৃঙ্খলা ও ভোগান্তি কমে, পাশাপাশি শিশুরা নিকটস্থ বিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পায়। তাদের মতে, বাকি কোটাগুলো খুবই সীমিত।
নীতিমালা অনুযায়ী, মোট শূন্য আসনের ৪০ শতাংশ রাখা হয়েছে ক্যাচমেন্ট এরিয়ার জন্য। এ কোটায় ভর্তির জন্য স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয় থেকে প্রত্যয়নপত্র নেওয়া বাধ্যতামূলক। ভাড়াটিয়া পরিবারগুলো এ ক্ষেত্রে অনেক সময় অতিরিক্ত ভোগান্তির শিকার হন।
অভিভাবরা বলছেন, গত বছর তিনি সন্তানের ভর্তিতে ক্যাচমেন্ট কোটা নিয়ে সমস্যায় পড়েছিলেন। তার অভিযোগ, অনেকেই অনলাইনে ভুয়া ঠিকানা দেখিয়ে ক্যাচমেন্টের সুবিধা নেন। পরে লটারিতে নাম উঠলে মোটা অঙ্কের বিনিময়ে প্রত্যয়নপত্র জোগাড় করেন—যা এক ধরনের জালিয়াতি।
এদিকে, নীতিমালার বাকি ২৩ শতাংশ কোটা বণ্টন করা হয়েছে এভাবে—মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ৫ শতাংশ, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও অধীন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তান ১ শতাংশ, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ১০ শতাংশ, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থী ২ শতাংশ এবং অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীর যমজ ও সহোদরদের জন্য ৫ শতাংশ।
ষষ্ঠ শ্রেণির ক্ষেত্রে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পাস করা শিক্ষার্থীদের জন্য ১০ শতাংশ আসন বাধ্যতামূলক রাখা হয়েছে।
নীতিমালার বাইরে আরেকটি অলিখিত কোটা রয়েছে—দূর থেকে বদলি হয়ে আসা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানের জন্য ৫ শতাংশ আসন। এছাড়া সরকারি হাইস্কুলের শিক্ষক-কর্মচারীদের সন্তানদেরও বিশেষ সুযোগ দেওয়া হয়।
মাউশির মাধ্যমিক বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও অধীন দপ্তরের কর্মীদের জন্য রাখা কোটা খুবই কম হলেও এটি প্রয়োজনীয় নয়। আর ক্যাচমেন্ট এরিয়া নিয়ে জালিয়াতির অভিযোগ সত্য বলে তথ্য রয়েছে, তাই কঠোরভাবে নিয়ম মানলে এ কোটার নেতিবাচক দিক কমে আসবে।
মাউশির মহাপরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) বি এম আব্দুল হান্নান বলেন, মন্ত্রণালয়ের সভার মাধ্যমে নীতিমালা চূড়ান্ত করা হয়েছে। এ বছরও ভর্তি লটারির মাধ্যমেই হবে। নীতিমালা নিয়ে কোনো আপত্তি উঠলে মন্ত্রণালয় তা পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে।