ইবি রিপোর্টার : ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) ‘মানবতা ও ইসলাম’ শীর্ষক শীর্ষক আন্তর্জাতিক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। রবিবার (৯ নভেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ধর্মতত্ত্ব ও ইসলামী শিক্ষা অনুষদ ভবনের ৪০১ নং কক্ষে ইনস্টিটিউট অব ইসলামিক এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ (আইআইইআর) এবং ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স ডিভিশিন (আইএডি)-এর যৌথ আয়োজনে এটি অনুষ্ঠিত হয়।
সেমিনারে আইআইইআর-এর পরিচালক প্রফেসর ড. মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম. এয়াকুব আলী ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম উপস্থিত ছিলেন। মুখ্য আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইরানের আল-মুস্তাফা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বাংলাদেশ কান্ট্রি ডিরেক্টর হুজ্জাতুল ইসলাম শাহাবুদ্দিন মাশায়েখি রাদ। এছাড়াও থিওলজি অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সেকান্দার আলীসহ দেড় শতাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন দাওয়াহ এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাসউদ আল মাহদী এবং স্বাগত বক্তব্য দেন ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স ডিভিশিন (আইএডি)-এর পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. নাছির উদ্দিন মিঝি। সেমিনারে আলোচকরা ইসলামী মানবাধিকারের স্বরুপ বিশ্লেষণ এবং বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ নিয়ে আলোচনা করেন।
মূখ্য আলোচকের বক্তব্যে হুজ্জাতুল ইসলাম শাহাবুদ্দিন মাশায়েখি রাদ বলেন, “বিশ্বের মানবাধিকার নীতিতে নারী-পুরুষ সমঅধিকারের কথা বলেছে কিন্তু ইসলামে যার যতটুকু অধিকার তা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। নারীরা হলো ঘরের সৌন্দর্য, পুরুষরা তাদের সুরক্ষা দিবে, নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। কিন্তু মনুষ্যসৃষ্ট মানবাধিকার নারীদের রাস্তায় নামিয়ে এনেছে, সম্মানহানি ঘটিয়েছে। নারীদের রাস্তায় নামিয়ে নারীদের নারিত্ব নষ্ট করে পুরুষত্বের খলসে রুপান্তর করতে চাই এসব মানবাধিকার সংগঠন। নারীরা হলো রাণী মৌমাছির মতো, যেখানে পুরুষ মৌমাছিরা মধু-খাবারসহ নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন। পুরুষ মানুষেরও নারীদের নিরাপত্তা ও অধিকার নিশ্চিতে এরকম ভূমিকা রাখা উচিত। বিশ্বের বড় সংস্থাগুলো মানবাধিকারের কথা বললেও সুদান, ফিলিস্তিন ও গাঁজা ইস্যুতে ভূমিকা রাখছে না। যেখানে ইসলামের বাণী হলো সকল ধর্মের-বর্ণের মানুষের অধিকার যথাযথভাবে নিশ্চিত করা।
মানবাধিকারের পরিচয় দিয়ে গিয়ে মাশায়েখি রাদ বলেন, ‘মূল বিষয়টি হলো হক (অধিকার) এবং তাকলীফ (দায়িত্ব)-এর মধ্যকার সম্পর্ক। যদি আমার কোনো বিষয়ে অধিকার থাকে, তবে অন্যদের দায়িত্ব বর্তায় তা প্রদান করা; আবার অন্যদের অধিকার থাকলে আমার ওপর দায়িত্ব বর্তায় তা আদায় করে দেওয়া। তবে ইসলাম শুধু এমন দ্বিমুখী সম্পর্ক চায় না। ইসলাম বলে, আমি অধিকারপ্রাপ্ত হওয়ার সাথে সাথেই অন্যদের ব্যাপারে দায়িত্বপ্রাপ্তও হই। কাল কিয়ামতের ময়দানে আমাকে অবশ্যই প্রশ্ন করা হবে যে অন্যদের ব্যাপারে আমার কিছু করার ছিল কি না, অর্থাৎ আমি অন্যদের প্রতি দায়িত্ব পালনে কতটুকু সচেষ্ট ছিলাম।’
সারা বিশ্বে চলমান মানবাধিকার লঙ্ঘনের ব্যাপারে তিনি বলেন, “আমরা শুধু মুখে মানবাধিকারের কথা বলি কিন্তু বাস্তবে তা করি না। আমরা এখন এমন একটি সময় পার করছি যখন গাজা, সুদান ও বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে প্রতিনিয়ত মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে, যা বোঝার জন্য কোনো দার্শনিক আলোচনার প্রয়োজন নেই, একটু তাকালেই দেখা যায়। আমার দৃষ্টিতে, বর্তমান বিশ্বে আমেরিকা এই মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের মধ্যে সর্বোৎকৃষ্ট পর্যায়ে অবস্থান করছে। আমেরিকা ইসরায়েলকে গাজার মানুষদের ওপর বোমা নিক্ষেপ করে মেরে ফেলার বা ৭০ হাজার মানুষকে “কতল” করার অধিকার দিয়েছে, যা হিরোসিমা-নাগাসাকির ঘটনার মতোই সীমালঙ্ঘন।”
জাতিসংঘের মানবাধিকার আইন সম্পর্কে আরো বলেন, “তারা আমাদের অর্থাৎ ইরানের বিরুদ্ধেও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ আনে। এর কারণ হিসেবে তারা দেখায় আমাদের পুলিশ বা সেনাবাহিনীতে নারী নেই, আমরা ফিলিস্তিনিদের সাহায্য করি এবং আমরা আমেরিকার বিরোধিতা করি। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আমরা বিশ্ব মুসলিমের অধিকার রক্ষায় সোচ্চার ভূমিকা পালন করি বলেই তারা আমাদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ এনেছে। আমি মনে করি, বর্তমানে যারা আমেরিকার ছত্রছায়ায় চলছে না, তারাই মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী করছে বলে গণ্য হচ্ছে। আমরা জাতিসংঘ থেকে প্রণীত মানবাধিকার আইনকে উপেক্ষা করি, এবং আমরা আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের পক্ষ থেকে প্রণীত মানবাধিকার বাস্তবায়ন করার জন্য কাজ করে যেতে গর্ববোধ করি।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ড নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, ‘ইসলাম মহান রাব্বুল আলামিনের সর্বশেষ মনোনীত ধর্ম। এটি মানবতার ধর্ম। এটি ধর্ম-বর্ণ-শ্রেণি নির্বিশেষে সবাইকে সহানুভূতি, ন্যায় এবং সম্মান প্রদর্শনের শিক্ষা দেয়। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) আমাদের দেখিয়েছেন, প্রকৃত ইবাদত হল মানবতার সেবায় নিয়োজিত হওয়া। আজকের বিশ্বে যদি আমরা এই মূল্যবোধগুলোকে মানি, তবে আমরা একটি শান্তিপূর্ণ, সহমর্মী এবং নৈতিক শক্তিতে পূর্ণ সমাজ গঠন করতে পারব।’