জাকসু নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হলে জাহাঙ্গীরনগর একটি নতুন গণতান্ত্রিক যুগে প্রবেশ করবে"— এমনটাই প্রত্যাশা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৯২ সালের পর আর কোনো কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়নি। ফলে প্রজন্মের পর প্রজন্ম বঞ্চিত থেকেছে প্রাতিষ্ঠানিক ছাত্র নেতৃত্ব, স্বতঃস্ফূর্ত মত প্রকাশ এবং নীতিনির্ধারণী প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের অধিকার থেকে।
৩০ এপ্রিল ঘোষিত নির্বাচনী তফসিলের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যে সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছে, তা নিঃসন্দেহে যুগান্তকারী। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ৩১ জুলাই অনুষ্ঠিত হবে এই বহুল প্রতীক্ষিত নির্বাচন। শিক্ষার্থীদের আশা—এই নির্বাচনের মাধ্যমে তারা ফিরে পাবে তাদের সাংবিধানিক অধিকার, প্রতিনিধিত্ব এবং জবাবদিহিতামূলক নেতৃত্ব। শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা নির্ধারিত সময়ে সুষ্ঠু-সুন্দর পরিবেশে 'জাকসু' নির্বাচন গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে শিক্ষার্থীদের গণতন্ত্র চর্চার রোল মডেল হবে৷
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতিশূন্য থাকলেও শিক্ষার্থীরা বারবার জাকসু নির্বাচনের দাবি তুলে এসেছে। সর্বশেষ ২০১৩ সালে নেয়া উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন এর উদ্যোগটি মনোনয়নপত্র বিতরণের পর আর নির্বাচন পর্যন্ত আগাতে পারেনি। তবে ২০২৪ সালের জুলাইয়ে সংঘটিত গণআন্দোলন এই দাবিকে নতুন গতি দেয়। শিক্ষার্থীদের ঐক্যবদ্ধ অবস্থান এবং প্রশাসনের ওপর সৃষ্টি হওয়া চাপই দীর্ঘ ৩৩ বছর পর ৯ম জাকসু নির্বাচন আয়োজন উপলক্ষ্যে তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব ৪৯তম আবর্তনের শিক্ষার্থী শাহাদাত হোসেন বলেন, ১৬ বছরের স্বৈরাচারী শাসন ও ৩২ বছরের নির্বাচনহীন অচলাবস্থা কাটিয়ে জাকসুর তফসিল ঘোষণার মাধ্যমে বাংলাদেশ নতুন রাজনৈতিক ধারায় প্রবেশ করেছে। জাকসু নির্বাচন হতে পারে জাতীয় নির্বাচনের পূর্বপ্রস্তুতির একটি পরীক্ষামূলক ধাপ।
তিনি বলেন, এ নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ করা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ। এর মাধ্যমে গণতন্ত্রচর্চার বার্তা দেশবাসীকে দেওয়া সম্ভব। এখন সময়ই বলে দেবে, জাতীয় নির্বাচন কতটা প্রস্তুত বাংলাদেশ।
এবিষয়ে গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী শাফায়াত মীর বলেন, "সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন না হলে এই প্রত্যাশিত গণতান্ত্রিক যাত্রা বাধাগ্রস্ত হতে পারে। আমাদের দাবি—প্রশাসন যেন সব পক্ষের মতামত ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে এমন একটি নির্বাচন আয়োজন করে, যা সত্যিকারের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হয়। তবে এই যাত্রা সহজ নয়। প্রশাসনের আন্তরিকতা, নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা, প্রার্থীদের দায়িত্বশীলতা এবং শিক্ষার্থীদের সচেতন অংশগ্রহণ—সব মিলিয়েই এই সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দিতে হবে।"
লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী মার্যিউর রহমান চৌধুরী বলেন, "জাকসু ছিল জুলাই গণঅভ্যুত্থানের একটি গুরুত্বপূর্ণ ওয়াদা। আজ ৩৩ বছর পর জাবিতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হতে যাচ্ছে। জাবির শিক্ষার্থীরা এবার নিজের হাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকানা অনুভব করবে। নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে প্রশাসনের কাছ থেকে নিজেদের প্রাপ্য বুঝে নিতে পারবে। জাকসু নিয়ে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। জুলাইয়ের পর জাকসুর মাধ্যমে দেশে প্রথম ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আমরা এক ঐতিহাসিক মুহূর্তের অংশ হতে যাচ্ছি।"
প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী হুসনে মোবারক বলেন, "আমরা চাই একটি গণতান্ত্রিক পরিবেশ, যেখানে আমাদের কথা বলার সুযোগ থাকবে, সিদ্ধান্ত গ্রহণে অংশ নিতে পারব। যেখানে ছাত্রদের সমস্যা, চাহিদা ও প্রস্তাব তুলে ধরার জন্য একটি গঠনমূলক প্ল্যাটফর্ম থাকবে। জাকসু আমাদের সেই প্ল্যাটফর্ম। এবার সত্যিই কিছু বদল আসতে পারে।"