চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির হাইদচকিয়া বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে কাগজ-কলমে শিক্ষার্থী সংখ্যা ৫২ জন। তাদের মধ্যে নিয়মিত ক্লাস করেন ২ থেকে ৪ জন। এরিমধ্যে শিক্ষক-শিক্ষার্থী শূন্য ছিল গত ৫ দিন। কর্তৃপক্ষের দাবী; চলমান এইচএসসি পরিক্ষার প্রভাবে এক প্রকার বন্ধই ছিল প্রতিষ্ঠান। এভাবে খুঁড়িয়ে চলছে প্রতিষ্ঠানটির কলেজ শাখার কার্যক্রম।

এলাকার বাসিন্দা, অভিভাবক ও সচেতনদের শঙ্কা রাজনৈতিক তদবিরে পাওয়া কলেজ শাখার পাঠদান অনুমতি সহসাই বন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। রোববার (২৭ জুলাই) সরেজমিনে গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে।

সেখানে গিয়ে দেখা যায়, কাগজে কলমে কলেজে তিন শিক্ষক বিদ্যমান থাকার কথা। আছেন এক জন। একটি শ্রেণিকক্ষে মাত্র দুই শিক্ষার্থী। দু’জনই ছাত্রী। কর্তৃপক্ষের দাবী, বৃষ্টি আর এইচএসসি পরীক্ষা চলমান থাকায় উপস্থিতি কম। বিদ্যালয় শাখায় পাঠদান চললেও দো’তলায় কলেজ শাখার তিন শ্রেণিকক্ষের দু’টিই ফাঁকা। পুরো ফ্লোরটিতে যেন সুনসান নীরবতা।

বিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা গোপনীয়তা রক্ষা করে জানান, গত ২০ থেকে ২৪ জুলাই পর্যন্ত কলেজ শাখার কোন বিভাগেই কোন শিক্ষক ও শিক্ষার্থী কলেজে আসেন নি। একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমন চিত্রে এলাকাবাসীকে দারুণ ভাবাচ্ছে।

সরেজমিনে আরও দেখা যায়, একাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান শাখায় পাঠ দিচ্ছেন খন্ডকালিন শিক্ষক আব্দুল্লাহ আল রায়হান। কম শিক্ষার্থীর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বৃষ্টি আর অনুষ্ঠিত এইচএসসি পরিক্ষার কারণে শিক্ষার্থী কিছুটা কম।’ পাশের কক্ষটি কলেজ শিক্ষকদের মিলনায়তন। যেখানে টেবিলে এলোমেলো পড়ে আছে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের হাজিরা খাতাসহ অন্যান্য সরঞ্জাম। তবে এ সময় একজন শিক্ষক ছাড়া পাওয়া যায়নি অন্যদের। দুপুর পৌনে ১২ টায় আসেন খন্ডখালীন শিক্ষক সায়েম উদ্দিন চৌধুরী। তখনও আসেননি শিক্ষক মঞ্জুর ইসলাম।

প্রতিষ্ঠানটির সুত্রে জানা যায়, ১৯২৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বিদ্যালয়টি। সুচনালগ্ন থেকে সুনামের সাথে সফলতা অর্জন করে প্রাচীন এ বিদ্যাপীঠটি। শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে ও শিক্ষার গুণগত মান ছড়িয়ে দিতে ফটিকছড়ি সরকারি কলেজ থেকে সোয়া দুই কিলোমিটার দুরে হাইদচকিয়া বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয়টিকে ২০১৮ সালে ৪০ জন শিক্ষার্থী ও ৮ জন শিক্ষক নিয়ে কলেজ পর্যায়ে উন্নীত করা হয়। পরে ২০১৯ সালে জুলাইয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড থেকে পাঠদানের অনুমতি পায় পায় কলেজটি। সে বছর এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ফলাফল ভালো করলেও এরপর থেকে একটানা বিপর্যয় ঘটে ফলাফলে। সর্বশেষ ২০২৪ সালের এইচএসসিতে মাত্র ২৩ শতাংশ শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হন। চলতি এইচএসসিতে মানবিক ও ব্যবসা শিক্ষায় অংশ নেন ৪৮ জন শিক্ষার্থী। শতবর্ষী প্রতিষ্ঠানের বেহাল অবস্থার ফলে এলাকার বাসিন্দা, অভিভাবক ও সচেতন মহলের শংখা রাজনৈতিক তদবিরে পাওয়া কলেজ শাখার পাঠদান অনুমতি বন্ধ হওয়ার উপক্রম। তারা যোগ্য নেতৃত্বে কার্যক্রম তরান্বিত করারও সুপারিশ করেছেন।

স্থানীয় বাসিন্দা শিক্ষাবিদ মুহাম্মদ জিয়াউদ্দিন বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানটি আমাদের গর্বের। এটি এভাবে চলতে পারে না। আশা করি শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের অনুসন্ধান ও মনিটরিং এর মাধ্যমে ব্যবস্থা নেবেন। অথর্ব-অযোগ্যদের রাহু থেকে প্রতিষ্ঠানটি রক্ষা পাবে।’

প্রাক্তন শিক্ষার্থী সাংবাদিক সালাউদ্দিন জিকু বলেন, ‘কলেজ ব্যবস্থাপনায় আমুল পরিবর্তন দরকার। রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তিতে আমরা শিক্ষার গুণগতমান হারাতে পারিনা। এখন প্রতিষ্ঠানটি ধ্বংশের ধারপ্রান্তে। যোগ্য নেতৃত্বে কলেজের কার্যক্রম তরান্বিত হোক।’

প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্ব তাঁর হাতে রাখতে চরম অনীহা দেখিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির কলেজ শাখার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সুনব বড়ুয়া। তিনি বলেন, ‘অপারগতার বিষয়টি অনেকবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরীকে জানিয়েছি। তিনি অত্র কলেজ কমিটির সভাপতি। কিন্তু আর্থিক দৈন্যতায় কলেজ শাখায় শিক্ষক যেমন নেয়া যাচ্ছে না, তেমনি সামনেও আগানো যাচ্ছে না। আমি প্রাণের প্রতিষ্ঠানের স্কুল শাখাটিকে সাজানোর চেষ্টা করছি।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও হাইদচকিয়া বহুমহুখী উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের এডহক কমিটির সভাপতি মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘আর্থিক দৈন্যতায় ইতিমধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক বেতনের তিন শিক্ষকের ছয় মাসের বেতন বকেয়া। মানসম্মত শিক্ষকও নিয়োগ দেয়া যাচ্ছেনা। আমরা চেষ্টা করছি সম্মিলিত প্রচেষ্টায় কলেজ শাখাটিকে এগিয়ে নিতে। এতে সবার সহযোগীতা প্রয়োজন। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অনুপস্থিতির বিষয়ে তিনি বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’