তৌফিক রুবেল, দাউদকান্দি (কুমিল্লা) : কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলা সদর দিয়ে বয়ে গেছে গোমতী নদী। এই নদী একদিকে দাউদকান্দি পৌরসভা, অন্যদিকে সদর উত্তর ইউনিয়নকে আলাদা করেছে। একসময় স্বচ্ছ জল আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর এ নদী ছিল স্থানীয়দের অবসর কাটানোর প্রিয় স্থান। বিকেলের আড্ডা, হাঁটাহাঁটি কিংবা টং দোকানে চা খেতে বসেই উপভোগ করা যেত গোমতীর স্নিগ্ধ রূপ কিন্তু এখন সেই নদী যেন তার সৌন্দর্য হারাচ্ছে। সম্প্রতি দেখা গেছে, দক্ষিণ দিক থেকে ভেসে আসা বিরাট এক ময়লার স্তুপ ধীরে ধীরে নদীর মাঝপথ দিয়ে উত্তরমুখী হয়ে যাচ্ছে। প্লাস্টিক, পলিথিন আর পচনশীল আবর্জনার এ স্তূপ নদীর প্রাকৃতিক দৃশ্যকে শুধু বিকৃতই করছে না, পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্যও তৈরি করছে বড় হুমকি। বাজার কমিটির সাবেক সদস্য রিটু সরকার জানান, “কার্যকর বাজার কমিটি না থাকায় ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। তারা সচেতনভাবে কোনো নিয়ম মানছে না, যেখানে-সেখানে ময়লা ফেলছে।” নদীর আশপাশে প্রতিদিনই ফেলা হচ্ছে বাজার ও বাসাবাড়ির আবর্জনা। খাবারের উচ্ছিষ্ট, পলিথিন ও অন্যান্য বর্জ্যে নদী ক্রমেই দূষিত হচ্ছে। স্থানীয় পরিবেশবাদী সংগঠন ধানসিড়ির সহসভাপতি রোমান মিয়াজী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “নদীর ভেতর ভেসে থাকা ময়লা দেখা অত্যন্ত কষ্টদায়ক। যদি এভাবে আবর্জনা নদীর পানিকে দূষিত করে, তবে তার প্রভাব পড়বে মানুষের জীবন, কৃষি ও জীববৈচিত্র্যের ওপর। শেষ পর্যন্ত আমরাই প্রকৃতির কাছে দায়ী হয়ে যাব।” দাউদকান্দি পৌরসভার প্রশাসক রেদওয়ান ইসলাম স্বীকার করেছেন সমস্যার সত্যতা। তিনি বলেন, “ পৌরসভার নিজস্ব কোনো ডাম্প স্টেশন নেই। ব্যবসায়ীরা বাজারের ময়লা-আবর্জনা কেরোসিন ঘাট, চরচারুয়া ঘাটসহ বিভিন্ন জায়গায় ফেলছে। এতে আমরা বিব্রত হচ্ছি। তবে খুব শিগগির জমি ক্রয় করে হলেও একটি ডাম্পিং স্টেশন নির্মাণ করা হবে।” প্রতিদিন নদীতে মিশছে প্লাস্টিক, পলিথিন ও রাসায়নিক বর্জ্য। ফলে দ্রুত নষ্ট হচ্ছে পানির মান, হুমকির মুখে পড়ছে মাছসহ জলজ প্রাণী। পাশাপাশি নদীর পানির সঙ্গে ছড়িয়ে পড়ছে রোগের জীবাণু। স্থানীয়রা জানান, দুর্গন্ধ ও দূষণের কারণে আগের মতো আর নদীর পাড়ে বসতে চান না কেউ। স্থানীয়দের মতে, শুধু ডাম্পিং স্টেশন নির্মাণ করলেই সমস্যার সমাধান হবে না। দরকার জনসচেতনতা, কঠোর আইন প্রয়োগ এবং নিয়মিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। ব্যবসায়ীদের জন্য নির্দিষ্ট স্থানে বর্জ্য ফেলার ব্যবস্থা ও নিয়মিত আবর্জনা সংগ্রহ নিশ্চিত না হলে গোমতীর দূষণ রোধ করা যাবে না।