নরসিংদীর মাধবদীতে শুক্রবারের ভূমিকম্প আবারও স্মরণ করিয়ে দিল যে দেশের মধ্যাঞ্চল ভূতাত্ত্বিকভাবে অস্থিতিশীল একটি এলাকা। ভূমিকম্পের আগে কোনো সতর্কবার্তা দেওয়ার সুযোগ নেই—তাই আগাম প্রস্তুতি না থাকলে ক্ষতির মাত্রা বহুগুণ বাড়তে পারে।

গতকাল শনিবার বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক সমিতির এক বিবৃতিতে এ সতর্কতা জানানো হয়। বিবৃতিতে সমিতির সভাপতি অধ্যাপক বদরুল ইমাম এবং সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার জাহিদ স্বাক্ষর করেন।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে নরসিংদীর মাধবদীতে ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার গভীরে মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প হয়। রিখটার স্কেলে তীব্রতা ছিল ৫ দশমিক ৫ থেকে ৫ দশমিক ৭ পর্যন্ত। কম গভীরতার কারণে ঝাঁকুনি বেশি অনুভূত হয় এবং ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া পর্যন্ত স্পষ্টভাবে টের পাওয়া যায়। এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে, ঘরবাড়ি ও স্থাপনায় ফাটলসহ বহু ক্ষয়ক্ষতির খবর এসেছে।

ভূতাত্ত্বিক সমিতির মতে, এ অঞ্চল ইন্দো-বার্মা টেকটোনিক প্লেটের সক্রিয় অংশ। ভূমিকম্পটি শীতলক্ষ্যা নদীর ফল্ট লাইনের কাছাকাছি হয়েছে। ফলে ভবিষ্যতে একই মাত্রার আরও ভূমিকম্প ঘটার ঝুঁকি আছে।

তাদের ধারণা, লুকানো ফল্টগুলো দ্রুত ম্যাপিং করে জাতীয় ঝুঁকি মানচিত্রে যুক্ত করা জরুরি। ঘনবসতিপূর্ণ হওয়ায় ঢাকার জন্য পরিস্থিতি আরও জটিল– এ কারণে জরুরি ভিত্তিতে মাইক্রোজোনেশন জরুরি বলে উল্লেখ করেছে তারা।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ভূতাত্ত্বিক অবস্থান জটিল। ইন্ডিয়ান প্লেট বহু বছর ধরে বার্মিজ প্লেটের নিচে ঢুকে যাচ্ছে। এই ধাক্কাধাক্কিই চট্টগ্রাম-সিলেটের পাহাড় তৈরি করেছে। চাপ কমেনি– বরং এখনও জমছে। চাপের গতি-প্রকৃতি বুঝতে আরও সমীক্ষা দরকার।

বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক সমিতি বলছে, ভূমিকম্পের আগাম সতর্কতা নেই, কয়েক সেকেন্ডেই নির্মাণাধীন বা দুর্বল স্থাপনা ধসে পড়তে পারে। তাই প্রস্তুতি ছাড়া বেঁচে থাকা কঠিন। স্কুল, অফিস ও বাড়িতে নিয়মিত মহড়া, পরিকল্পনা এবং ভূমিকম্প বিষয়ে মৌলিক জ্ঞান মানুষের জীবন বাঁচাতে পারে।

বিবৃতিতে বলা হয়, ভূমিকম্প স্বাভাবিক ঘটনা। বাংলাদেশ ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চলের পাশেই। মাঝেমধ্যে কাঁপুনি অনুভূত হওয়ায় বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই। কিন্তু গুজব নয়, তথ্যই নিরাপত্তার মূল চাবিকাঠি।

সমিতির মূল্যায়নে, শুক্রবারের ভূমিকম্প ভূঅভ্যন্তরকে চাপমুক্ত করেছে– এমন ভাবার সুযোগ নেই। বরং চাপ বাড়ছে এবং যে কোনো সময় একই ধরনের বা আরও বড় ভূমিকম্প হতে পারে। দেশের ভেতরে মধুপুর এবং ডাউকি ফল্ট, বাইরের প্লেট বাউন্ডারি ও আরাকান সাবডাকশন জোন সবই বড় ভূমিকম্প তৈরি করতে পারে। আগামী দশকগুলোতেও এই ঝুঁকি কমবে না। এই ভূমিকম্প বিজ্ঞানীদের সামনে নতুন বার্তা নিয়ে এসেছে এবং নীতিনির্ধারকদের সামনে ঝুঁকি কমানোর জরুরি দায়িত্ব তুলে ধরেছে। এ ক্ষেত্রে দেশের ভূমিকম্প ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ও টেকসই উন্নয়নের জন্য ভূতত্ত্ববিদদের সক্রিয় অন্তর্ভুক্তি এখন অত্যাবশ্যক।