বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপ ও সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে দেশের আট বিভাগেই ভারি বৃষ্টিপাতের আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
সেই বৃষ্টিতে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে জলাবদ্ধতা এবং পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধস হতে পারে বলেও সতর্ক করেছে সংস্থাটি।
বৃহস্পতিবার বিকালে অধিদপ্তরের বিশেষ বুলেটিনে বলা হয়, পশ্চিমমধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি উত্তর-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিমমধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থান করছে।
ঘূর্ণীবায়ুর চক্রটি বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৮৩৫ কিলোমিটার, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৮১০ কিলোমিটার, মোংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ৬৬৫ কিলোমিটার এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৮৫ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল।
এটি আরও উত্তর-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে রাত ৯টা নাগাদ ভারতের উড়িষ্যার গোপালপুর এবং পারাদ্বীপের মধ্যে উড়িষ্যা এবং সংলগ্ন অন্ধ্র প্রদেশ উপকূল অতিক্রম করতে পারে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় বায়ুচাপের তারতম্যের আধিক্য বিরাজ করছে।
বুলেটিনে বলা হয়, গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর, বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা ও সমুদ্র বন্দরগুলোর উপর দিয়ে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৮ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ রয়েছে ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার, যা ঝড়ো হাওয়া আকারে ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছে। কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর উত্তাল রয়েছে।
এজন্য চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে, যেন স্বল্প সময়ের নোটিসে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে পারে।
এদিকে গভীর নিম্নচাপ ও সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বৃহস্পতিবার বিকাল তিনটা থেকে পরবর্তী ৪৮ ঘন্টায় রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও ভারি (২৪ ঘন্টায় ৪৪-৮৮ মিলিমিটার) থেকে অতি ভারি (২৪ ঘণ্টায় ১৮৮ মিলিমিটার) বর্ষণ হতে পারে বলে আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
বৃহস্পতিবার বিকালে ভারি বৃষ্টিপাতের সতর্কতাজনিত বিশেষ বার্তায় বলা হয়, ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণের কারণে চট্টগ্রাম বিভাগের পাহাড়ি এলাকার কোথাও-কোথাও ভূমিধসের আশঙ্কা রয়েছে।
সেই সঙ্গে ভারি বর্ষণজনিত কারণে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীর কোথাও-কোথাও অস্থায়ীভাবে জলাবদ্ধতা তৈরি হতে পারে বলেও সতর্ক করা হয়েছে।
বুধবার বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়। সেদিন রাতেই লঘুচাপটি নিম্নচাপে রূপ নেয়। এরপর বৃহস্পতিবার এটি রূপ নেয় গভীর নিম্নচাপে।
এই ঘূর্ণীবায়ুর চক্র ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে কিনা জানতে চাইলে আবহাওয়াবিদ শাহনাজ সুলতানা বিকালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এর প্রভাবে ভারি থেকে অতিভারি বৃষ্টি ঝরবে।”
এদিকে ভারি বৃষ্টিপাতের প্রভাবে ফেনী জেলার মুহুরী, সিলোনিয়া ও ফেনী নদীর পানি বেড়ে আশপাশের নিম্নাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদী বন্যা হতে পারে বলে সতর্ক করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।