রাজশাহীতে পদ্মা নদীর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। জুলাই মাস থেকে টানা বৃষ্টি ও উজানের ঢলে পানি বাড়লেও আগস্টের প্রথম সপ্তাহে তা অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। ফলে পদ্মা তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়েছে এবং প্রায় একশ পরিবারের মানুষ নিরাপদ স্থানে সরে গেছেন। নদীর চরাঞ্চলও পানিতে ডুবে গেছে, অনেকে আশ্রয়ের খোঁজে রাজশাহী শহরে আসছেন।
রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, গত মাসের শেষ দিকে পানি বাড়া শুরু হয়। ১০ আগস্ট সকাল ৬টায় পদ্মার পানির উচ্চতা ছিল ১৭.১৩ মিটার, যা ১১ আগস্ট বেড়ে দাঁড়ায় ১৭.৩২ মিটার এবং ১২ আগস্ট ১৭.৪৩ মিটারে পৌঁছায়। বিপৎসীমা ১৮.০৫ মিটার হওয়ায় এখনও সামান্য নিচে থাকলেও পানি বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রয়েছে।
পানি বৃদ্ধিতে রাজশাহী শহরের তালাইমারী, কাজলা, পঞ্চবটি, পাঠানপাড়া, লালনশাহ মঞ্চ ও শ্রীরামপুরসহ নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়েছে। তালাইমারী ও পঞ্চবটি এলাকায় পরিস্থিতি সবচেয়ে নাজুক। অনেকেই রাতের বেলায় পানি ঢুকে পড়ায় ঘরবাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। নিম্নাঞ্চলে সাপের ভয়ও দেখা দিয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, গত পাঁচ বছরে এবারই পানি সবচেয়ে বেশি বেড়েছে।
এছাড়া গোদাগাড়ী উপজেলার চর আষাড়িয়াদহ, পবার চরখিদিরপুর ও বাঘার চকরাজাপুরের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। নদীপাড়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে, বিশেষ করে চকরাজাপুরে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেশি। অনেক বাড়ি ও এমনকি কবরও নদীতে বিলীন হচ্ছে। চরখিদিরপুরের বাসিন্দারা গবাদিপশু ও মালপত্র নিয়ে নৌকায় নিরাপদ স্থানে যাচ্ছেন।
চকরাজাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জানিয়েছেন, ভাঙনের কারণে গত কয়েক বছরে তিনবার স্কুল স্থানান্তর করতে হয়েছে, এবারও একই আতঙ্ক বিরাজ করছে।
এদিকে রাজশাহীর জনপ্রিয় পর্যটনস্থল ‘টি-বাঁধ’ এলাকায় পানি বিপৎসীমায় পৌঁছানোর কাছাকাছি চলে যাওয়ায় পানি উন্নয়ন বোর্ড সোমবার সন্ধ্যা থেকে সাধারণ মানুষের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে। দোকানপাট সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুর রহমান বলেন, ভারতে অতিবৃষ্টি ও ফারাক্কার অধিকাংশ কপাট খোলা থাকায় পদ্মার পানি দ্রুত বাড়ছে। জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ‘টি-বাঁধ’ এলাকায় কঠোরভাবে প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করা হবে।