বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের আমিরে শরিয়ত ও হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা আতাউল্লাহ হাফেজ্জী (৭৬) ইন্তিকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। গতকাল শুক্রবার বেলা ১১টার পর রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর নিজ মাদরাসা জামিয়া নূরিয়া ইসলামিয়া মাদরাসায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। আতাউল্লাহ হাফেজ্জী দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছিলেন। তিনি ঢাকার কামরাঙ্গীরচরে হাফেজ্জী হুজুর প্রতিষ্ঠিত জামিয়া নূরিয়া ইসলামিয়া মাদরাসার মুহতামিম ও কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বেফাকের সহ সভাপতি ছিলেন। গতকাল শুক্রবার দিনগত রাত ১০টায় কামরাঙ্গীরচর মাদরাসায় নামাযে জানাযার পর তাকে হযরত হাফেজ্জী হুজুর রহ. এর কবরের পাশে দাফন করা হয়।
মাওলানা আতাউল্লাহ হাফেজ্জীর জীবনী: প্রখ্যাত আলেম মাওলানা মোহাম্মদ উল্লাহ হাফেজ্জী হুজুরের ছেলে মাওলানা আতাউল্লাহ। চার ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার ছোট। এর মধ্যে বড় ভাই আহমদুল্লাহ আশরাফ, মেজ ভাই ওবায়দুল্লাহ ও সেজ ভাই হামিদউল্লাহ আগেই মারা গেছেন। মাওলানা আতাউল্লাহ হাফেজ্জীর স্ত্রী, দুই পুত্র ও এক কন্যাসন্তান সহ অসংখ্য ছাত্র, ভক্ত, মুরিদ রেখে গেছেন।
মাওলানা আতাউল্লাহ হাফেজ্জী ১৯৪৮ সালের ১০ জানুয়ারি রাজধানীর লালবাগ কেল্লার মোড়ে পিত্রালয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেম, রাজনৈতিক ও আধ্যাত্মিক নেতা মাওলানা মুহাম্মাদুল্লাহ হাফেজ্জী হুজুর রহ, এর চতুর্থ ও ছোট ছেলে ছিলেন। বাল্যকালেই তিনি পবিত্র কুরআন মুখস্ত করেন এবং কওমি মাদরাসার শিক্ষা ধারায় লালবাগ জামিয়া কোরআনিয়া আরাবিয়া, গোহারডাঙ্গা মাদরাসা, করাচি দারুল উলুম মাদরাসা ও নিউটন মাদরাসায় অধ্যয়ন করে দাওরায় হাদিস (মাস্টার্স)পাশ করেন।
মাওলানা আতাউল্লাহ হাফেজ্জী দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় আলেম ও ক্বারী ছিলেন। বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের প্রধান আমীরে শরীয়ত এর দায়িত্ব (২০১৪ ইং ২৯ নবেম্বর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত) ১১ বছর পালন করেন। তিনি সক্রিয় রাজনীতির পাশাপাশি জামিয়া নুরিয়া ইসলামিয়ার মহাপরিচালক, কওমি মাদরাসার সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা হাইয়াতুল উলইয়ার সদস্য এবং বেফাকের সহ-সভাপতি এবং দীর্ঘদিন কারওয়ান বাজার আম্বর শাহ শাহী জামে মসজিদের ইমাম ও খতিবের দায়িত্ব ছিলেন। দেশের শীর্ষ অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ এর কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র নায়েবে আমীর এবং আন্তর্জাতিক মজলিসে তাহাফফুজে খতমে নবুওয়াত বাংলাদেশ এর সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে গেছেন। তাঁর জীবদ্দশায় অনেক মসজিদ মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা করেন ও সকল প্রতিষ্ঠানের মুরব্বি ছিলেন তিনি। তিনি ১৯৯২ সালে ভারতের অযোধ্যার বাবরি মসজিদ ভাঙ্গার প্রতিবাদ আন্দোলন, ১৯৯৪ সালে নাস্তিক তাসলিমা নাসরিনের শাস্তির দাবিতে আন্দোলন, ২০০১ সালে ফতুয়া বিরোধী আন্দোলন, ২০১৩ সালে নাস্তিক মুরতাদ ও ব্লগার বিরোধী আন্দোলনসহ সকল ইসলাম বিরোধী তৎপরতা বিরোধী আন্দোলনের তিনি একজন সক্রিয় এবং সম্মুখ সারির নেতা ছিলেন।
খেলাফত আন্দোলনের আমীরের ইন্তিকালে পীর সাহেব চরমোনাই’র শোক: হাফেজ্জী হুজুর রহ. এর সর্বকনিষ্ঠ সন্তান বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের আমীরে শরিয়াত মাওলানা ক্বারী শাহ আতাউল্লাহ হাফেজ্জীর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে মরহুমের মাগফিরাত কামনা করেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই।
গতকাল শুক্রবার এক শোকবাণীতে ইসলামী আন্দোলনের আমির বলেন, মাওলানা আতাউল্লাহ হাফেজ্জী রহ. ইসলামের প্রচার ও ইসলামী রাজনীতিতে অসামান্য অবদান রেখেছেন। তিনি হাফেজ্জী হুজুর রহ. এর মতই ইসলামবিরোধী শক্তির মোকাবেলায় অসামান্য অবদান রেখে গেছেন। তার ইন্তিকালে ইসলামী রাজনৈতিক অঙ্গনে যে শূণ্যতা সৃষ্টি হয়েছে তা সহজে পুরণ হবার নয়। পীর সাহেব চরমোনাই তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সময় বেদনা জানান সেইসাথে পরিবার পরিজন, ভক্ত অনুরক্ত, রাজনৈতিক সহকর্মীদের সবর করার তৌফিক কামনা করেন।
খেলাফত মজলিসের শোকবাণী: মাওলানা আতাউল্লাহ হাফেজ্জীর ইন্তিকালে গভীর শোক ও সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা আব্দুল বাছিত আজাদ ও মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের। এক শোকবাণীতে খেলাফত মজলিস নেতারা মরহুমের জন্য মহান আল্লাহর দরবারে মাগফিরাত ও জান্নাত কামনা করেন। শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন। খেলাফত মজলিস নেতারা বলেন, মাওলানা আতাউল্লাহ হাফেজ্জী খেলাফত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে রাজপথে নেতৃত্ব দিয়েছেন। বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। আল্লাহ তার সব দ্বীনি খেদমত কবুল করুন।
আম্বরশাহ শাহী জামে মসজিদ ও মাদরাসা পরিচালনা কমিটির শোক: মাওলানা আতাউল্লাহ হাফেজ্জীর মৃত্যুতে শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়ে শোক বিবৃতি দিয়েছেন আম্বরশাহ শাহী জামে মসজিদ ও মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি সাইফুল আলম নিরব, সিনিয়র সহ-সভাপতি মু.আতাউর রহমান সরকার ও সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব বেলায়েত হোসেন। বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, তিনি ১৯৮৫ সাল থেকে আম্বরশাহ শাহী জামে মসজিদের প্রধান খতিবের দায়িত্ব বিশ্বস্ততার সঙ্গে পালন করেছেন। উনার ইন্তিকালে আমরা একজন দেশ সেরা আলেমকে হারিয়েছি। আমরা শোক সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি সাথে সাথে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে দোয়া করছি আল্লাহ যেন মরহুমকে বেহেশতের সর্ব্বোচ্চ আসনে সম্মানিত করেন।