প্রতি বছরের মতো এ বছরও ১০ অক্টোবর পালিত হতে যাচ্ছে বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস। পৃথিবীর সবার মানসিক স্বাস্থ্যশিক্ষা, সচেতনতার উদ্দেশ্যে দিনটি ১৯৯২ সাল থেকে পালিত হয়ে আসছে।

চিকিৎসার বাইরে ৯০ শতাংশ রোগী

হতাশা, বিষণ্নতা ও অবসাদ থেকে দেশে ভয়াবহ আকারে বাড়ছে মানসিক রোগী। কিন্তু মানসিক সমস্যার ভুক্তভোগী ৯০ শতাংশ মানুষই থেকে যাচ্ছে চিকিৎসাসেবার বাইরে। অসচেতনতা, কুসংস্কার ও লোকলজ্জার ভয়ে চিকিৎসা না নেওয়ায় বাড়ছে বিপদ।

এ পরিস্থিতিতে ‘পরিষেবা প্রাপ্তি-দুর্যোগ এবং জরুরি পরিস্থিতিতে মানসিক স্বাস্থ্য’ এই প্রতিপাদ্য নিয়ে আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস। ‘বাংলাদেশে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণকারী আচরণ : নির্ধারক এবং চিকিৎসার ব্যবধান’ শীর্ষক এক গবেষণায় উঠে এসেছে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে অবহেলার নানা চিত্র। এ গবেষণায় দেখা গেছে, মানসিক সমস্যায় ভোগা ৯০ শতাংশ রোগী চিকিৎসার বাইরে থেকে যাচ্ছেন। গবেষক দলের প্রধান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. রুমানা হক বলেন, মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা এখন একটি বড় জনস্বাস্থ্য ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সামাজিক কুসংস্কার ও ট্যাবু রয়েছে। একই সঙ্গে সচেতনতার অভাব এবং আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে অনেকে চিকিৎসা নিতে চান না।’ সরবরাহ-সংক্রান্ত সমস্যার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘মানসিক স্বাস্থ্যসেবার পরিকাঠামোর দুর্বলতা, দক্ষ জনবলের ঘাটতি, বিনিয়োগ কম এবং স্বাস্থ্য খাতের বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। পাশাপাশি দক্ষ জনবল গড়ে তোলা, মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের ঘাটতি পূরণে সাধারণ স্বাস্থ্যসেবাদানকারীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রাথমিক স্ক্রিনিং ও কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করাও জরুরি।

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য সমীক্ষা ২০১৮-১৯ অনুসারে, দেশের প্রায় ১৮ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক এবং ১৩ শতাংশ কিশোর-কিশোরী বিভিন্ন ধরনের মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত। প্রতি ১ লাখ মানুষের জন্য শূন্য দশমিক ১৩ জন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ এবং শূন্য দশমিক শূন্য ১ জন অন্যান্য বিষয়ক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রয়েছেন। এ ছাড়া রয়েছেন ০.৮৭ জন মানসিক স্বাস্থ্য সেবাদানকারী নার্স, ০.১২ জন মনোবিজ্ঞানী ও অন্যান্য পেশাদার মানসিক স্বাস্থ্যকর্মী। রাজধানীর জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে আউটডোর ও ইনডোর সেবা দেওয়া হয়। এ হাসপাতালের বেড সংখ্যা এখন ৪০০। এ ছাড়া ৫০০ বেডের মাত্র একটি মানসিক হাসপাতাল রয়েছে পাবনায়। বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও কয়েকটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মানসিক রোগের চিকিৎসা দেওয়া হয়। দেশে প্রতি ১ লাখ জনসংখ্যার মানসিক রোগীর জন্য শয্যা সংখ্যা ০.৪টি। মানসিক স্বাস্থ্যে ‘দিবাযত্ন’ (ডে কেয়ার) চিকিৎসা-সুবিধা এখনো এ দেশে প্রতিষ্ঠিত হয়নি। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক (সাইকিয়াট্রি) ডা. মো. জোবায়ের মিয়া বলেন, স্বাস্থ্য খাতে সরকারের মোট বাজেটের মাত্র ৩ দশমিক ৩২ শতাংশ বরাদ্দ থাকলেও, এর মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্যসেবার জন্য ব্যয় হয় ১ শতাংশেরও কম। তিনি আরও বলেন, ‘যেসব প্রতিষ্ঠান মানসিক স্বাস্থ্যসেবা দেয়, সেগুলো সম্পর্কে এখনো অনেকেই জানেন না। মানসিক সমস্যা দেখা দিলে এখনো অনেকে কবিরাজ বা ঝাড়ফুঁকের দিকে ছুটে যান। এ অবস্থার পরিবর্তনে সরকারের বাজেট বরাদ্দ বাড়ানো, মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সমাজের কুসংস্কার দূর করা এবং উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।’