ঢাকার ৯৮ শতাংশ শিশুর রক্তে সিসার উপস্থিতি পাওয়া গেছে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) গবেষণায়। শিশুসহ যে কোন মানুষের শরীরে সিসার পরিমাণ ৬৭ মাইক্রো গ্রাম বা তার বেশি হলে তা উদ্বেগজনক বলছেন গবেষকরা।

গতকাল বুধবার এ গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। অনুষ্ঠানে আইসিডিডিআরবি’র গবেষক ডক্টর মো. মাহবুবুর রহমান ও ড. জেসমিন সুলতানা ২০২২-২৪ সালের মধ্যে ঢাকায় পরিচালিত একটি সামগ্রিক গবেষণার প্রাথমিক ফলাফল তুলে ধরেন। সাথে ছিলেন স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির স্কুল অফ মেডিসিনের প্রফেসর স্টিভলবি। গবেষণায় ২ থেকে ৪ বছর বয়সি ৫০০ শিশুকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তিনি জানান, প্রতিটি শিশুর রক্তে সিসার উপস্থিতি পাওয়া গেছে এবং ৯৮ শতাংশ শিশুর রক্তে সিসার উপস্থিতির মাত্রা ৩৫ মাইক্রোগ্রাম/লিটারের চেয়ে বেশি ছিল। এই গবেষণায় দেখা যায়, সিসানির্ভর শিল্প স্থাপনার ১ কিলোমিটার মধ্যকার বসবাসকারী শিশুদের রক্তে সিসার পরিমাণ ৫ মাইক্রোগ্রাম প্রতি কিলোগ্রাম, যা দূরস্থানীয় শিশুদের তুলনায় ৪০ শতাংশ বেশি। সিসার অন্যান্য উৎসগুলোর মসলায় ব্যবহৃত ক্ষতিকর রং, ঘরের ধুলা-ময়লা, সিসাযুক্ত প্রসাধনী সামগ্রী ও রান্নার পাত্র।

Untitled

এদিন অনুষ্ঠানের সংবাদ সংগ্রহে আসা সংবাদকর্মীদের রক্তের সিসার পরিমাণ নির্ণয় করা হয়। তাতে দেখা যায় অধিকাংশ সংবাদ কর্মীর শরীরের রক্তে সিসার পরিমাণ বিপজ্জনক পর্যায়ে রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা জানান, রক্তে সিসার পরিমান বেড়ে গেলে রক্তচাপ বেড়ে যায় এবং হার্টের কার্যক্ষমতা লোপ পায়। ফলে হাট অ্যাটাকের ঝুকি বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও শিশুদের রক্তে সিসা বৃদ্ধির কারণে মস্তিস্ক কার্যক্ষমতা হারায়। এতে একটি জাতির ভবিষ্যত ঝুঁকির মধ্যে পড়ে।

এই আলোচনা সভায় সীসানির্ভর শিল্পস্থাপনা, যেমন লেড–অ্যাসিড ব্যাটারি তৈরি বা রিসাইক্লিং কারখানা বাসস্থান, অথবা যেসব কারখানা বা স্থাপনায় সিসা গলানো বা পোড়ানো হয়, এগুলোকে দ্রুত বন্ধ করার সুপারিশ করা হয়। কারণ, এই স্থাপনাগুলো সরিয়ে নিয়ে বা দূষণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা নিয়ে এলাকার শিশুদের সঠিকভাবে সিসা থেকে দূরে রাখা সম্ভব।

আইসিডিডিআরবি’র নির্বাহী পরিচালক ডা. তাহমিদ আহমেদ বলেন, সিসার বিষক্রিয়া নীরবভাবে আমাদের শিশুদের ভবিষ্যৎ সংকুচিত করে দিচ্ছে। এটি তাদের মেধা ক্ষমতা ও সৃজনশীল বিকাশ বাধাগ্রস্ত করে। বাংলাদেশে প্রতিবন্ধী শিশুদের হার বাড়িয়ে দিচ্ছে। তাই আমাদের দ্রুত সীসা নিয়ন্ত্রণ নীতি ও উদ্যোগ গ্রহণ করা দরকার, যাতে প্রতিটি শিশু সুস্থ হয়ে দেশ উন্নয়নের কাজে অবদান রাখতে পারে।