পরিবারের মানুষদের জন্য ভালো ভবিষ্যৎ গড়বে, দেশে সুন্দর বাড়ি বানাবে- এমনই আশা ছিল চাঁদপুরের নাজমুল শিপু, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আবেদ মিয়া ও চট্টগ্রামের সাইফ উদ্দিন রায়হানের চোখে। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার পথে পা বাড়িয়ে সেই স্বপ্ন শেষ হলো জাম্বিয়ার দুর্গম জঙ্গলে।
দালালদের মিথ্যা আশ্বাসে তারা ভেবেছিল সরাসরি ফ্লাইটে পৌঁছে যাবে তাদের গন্তব্যের দেশে। বাস্তবে অপেক্ষা করছিল অনাহার, শারীরিক নির্যাতন আর মৃত্যুর ফাঁদ। কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে দালালরা তাদের ইথিওপিয়া থেকে সড়কপথে মালাউই ও জাম্বিয়া হয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা পাঠানোর নামে ফেলে দেয় মানব পাচারের ভয়ংকর রুটে।
ফলে জাম্বিয়ার সীমান্ত ঘেঁষা জঙ্গলে নাজমুল ও আবেদ অনাহারে মৃত্যুবরণ করেন। রায়হান ছিলেন এসএসসি পাস তরুণ। তার সঙ্গীদের বর্ণনায়, স্থানীয় গাইডরা তাকে টেনে নিয়ে যাওয়ার একপর্যায়ে মাটিতে ফেলে দেয়। সেখানেই থেমে যায় তার নিঃশ্বাস। মৃত্যুর আগে রায়হান নাকি বলেছিলেন, ‘আমার পাসপোর্ট আর জুতাজোড়া আব্বুর কাছে পৌঁছে দিয়েন।’
তিন পরিবারের জীবনে এখন শুধু শোক আর অনিশ্চয়তা। কেউ লাশ ফিরে পাওয়ার আশায় দিন গুনছেন, কেউবা দালালদের হুমকি ও প্রতারণায় দিশেহারা। রায়হানের বাবা সালাউদ্দিন, যিনি দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রবাসী। তিনি বলেন, ‘ছেলেকে নিজের কাছে আনতে চেয়েছিলাম, এখন তাকে শুধু স্মৃতিতে পাবো।’
বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের এক কর্মকর্তা জানান, প্রবাস জীবনের স্বপ্নে বুক বাঁধা তরুণেরা প্রতিনিয়ত এমন প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। সরকারের নানা সতর্কবার্তা ও আইনগত পদক্ষেপ থাকা সত্ত্বেও আদম ব্যবসায়ীরা এখনো সক্রিয়। কয়েক লাখ টাকার বিনিময়ে তারা তরুণদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে আফ্রিকার পাহাড়-জঙ্গলে।