এইচ এম আকতার, নিউইয়র্ক থেকে : যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী মুসলমানদের সবচেয়ে বৃহৎ সংগঠন মুসলিম উম্মাহ অব নর্থ আমেরিকার (মুনা)’র তিন দিনব্যাপী ৮ম বার্ষিক মহাসম্মেলন শুক্রবার ( ৮ আগষ্ট ) নিউ ইয়র্ক সময় বিকাল ৩ টায় এই সম্মেলন শুরু হয়। ইসলামের আলোকবর্তিকা বিশ্বব্যাপী ধর্মের প্রচার' এ শ্লোগানে যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যের ফিলাডেলফিয়ার কনভেনশন সেন্টারে এ সম্মেলন চলবে আগামী রোববার (১০ আগস্ট) মধ্যরাত পর্যন্ত। এবারের সম্মেলনে ২০ সহস্রাধিকেরও বেশি বিভিন্ন দেশীয় ধর্মপ্রাণ প্রবাসী মুসলমান অংশ গ্রহণ করছেন।
কনভেনশন সার্থক করতে বিভিন্ন বিভাগ ভিত্তিক একটি শক্তিশালী টিম গঠন করা হয়েছে। টিমের চেয়ারম্যান মুনার ন্যাশনাল এক্সিকিউটিভ ডাইরেক্টর আরমান চৌধুরী, সিপিএ।

উত্তর আমেরিকায় মুনা’র এ মহাসম্মেলনই হবে প্রবাসী বাংলাভাষী মুসলমানদের সর্ববৃহৎ সমাবেশ। যুক্তরাষ্ট্রের দূরের অঙ্গরাজ্যগুলো থেকে একা বা সপরিবারে তিন দিনব্যাপী সম্মেলনে অংশগ্রহণ করতে ফিলাডেলফিয়ায় ছুটে আসছেন হাজারো ধর্মপ্রাণ মুসলমান। প্রতিবছর অংশগ্রহণকারীদের যেমন কষ্ট করতে হয়, তেমনি আয়োজকদেরকেও বিভিন্ন কর্মসূচির বিন্যাস করতে এবং সীমিত সময়ের মধ্যে কর্মসূচি শেষ করতে ভীষণ তাড়াহুড়া করতে হয়। সবকিছুর মধ্যে পরিপূর্ণতার ঘাটতি রয়ে যায় আয়োজক ও অংশগ্রহণকারী সকলের মনে। সাবি যেন অতৃপ্তি থেকে যান। সবদিক বিবেচনা করে মুসলিম উম্মাহ অফ নর্থ আমেরিকা মুনা’র নেতৃত্ব এবারই তিনদিনের জন্য মহাসম্মেলনে আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়ে সে অনুযায়ী স্থান নির্বাচন ও প্রয়োজনীয় সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে সংগঠনটি।

এ সিদ্ধান্ত মুনা’র সকল পর্যায়ে প্রশংসিত হয়েছে এবং আশা করা হচ্ছে যে, পেনসিলভেনিয়া কনভেনশন সেন্টারে আয়োজিত এ কনভেনশনে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য থেকে সকল বয়সের ২০-২৫ হাজার নারী পুরুষ এবং শিশু-কিশোর অংশগ্রহণ করবেন এবারের সম্মেলনে। যুক্তরাষ্ট্রের ৪৮টি অঙ্গরাজ্যে মুনার কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী প্রায় সবকটি অঙ্গরাজ্যে থেকে আসবেন অংশগ্রহণকারীরা।
কনভেনশনে তাদের সাথে পরিচয় ঘটবে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাষ্ট্রের বাইরের দেশ থেকে আগত ইসলামী চিন্তাবিদ,গবেষক এবং কোরআনের নন্দিত তাফসিরকারক ও খ্যাতিমান হাদিসবিদদের। তাদের বক্তব্য অংশগ্রহণবারীদের জ্ঞানভান্ডারকে সমৃদ্ধ করবে বলে সম্মেলন আয়োজকদের বিশ্বাস এবং বাস্তবে কনভেনশন আয়োজনের প্রেক্ষাপটই হচ্ছে, অংশগ্রহণকারী প্রত্যেকের জ্ঞানভান্ডারকে সমৃদ্ধ করা এবং তাদের মনে ইসলামের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে যে প্রশ্নগুলো রয়েছে সেসব বিষয়ে বিজ্ঞজনদের নিকট থেকে সুষ্পষ্টভাবে জেনে নেয়া। বিজ্ঞ ইসলামিক আলোচকরা তিন দিনের মহাসম্মেলনে বিভিন্ন পর্বে তাদের মূল্যবান বক্তব্য পেশ করবেন। এবারে আলোচকবৃন্দদের তালিকায় রয়েছেন-ড. ওমর সুলাইমান, ইমাম দালোয়ার হোসাইন, সামি হামদি, মোহাম্মদ এলশিনাউই, ড. আলতাফ হোসাইন, ইমাম টম ফ্যাচাইন, হামজাহ আব্দুল-মালিক, ইমাম সিরাজ ওয়াহাজ, আসিফ হিরানি, শেখ আব্দুল নাসির জাংদা প্রমুখ। এছাড়াও ভার্চুয়াল তাফসির ও কুরআনভিত্তিক আলোচনায় অংশ নেবেন তফসিরে অংশ নেবেন দেশ ও বিদেশের অন্যতম আলোচিত ইসলামি বক্তা ড. মিজানুর রহমান আজহারী।
সম্মেলনের শুরু হয় জুমআর নামাজের মাধ্যমে। জুমআয় খুতবা দেন ইমাম সিরাজ ওয়াহাজ। এছাড়াও বাংলাদেশিদের জন্য পারিবারিক জীবন নিয়ে আলোচনা করেন মাওলানা আবুল কালাম আজাদ বাশার। এর আলোচনা অংশ নেন ইমাম সিরাজ ওয়াহাজ।
মাওলানা আবুল কালাম আজাদ বাশার বলেন, ইসলামের অনুস্মরণ না থাকাতে আমাদের পরিবারগুলো ভেঙে যাচ্ছে। আমাদের কুরআনের সাথে সম্পর্ক বাড়াতে হবে। আমেরিকার মাটিতে মুনা আমাদের জন্য একটি রহমত।আমাদের সন্তানদের ধর্মীয় কালচার শিক্ষা দিতে হবে। তা না হলে আমাদের পরিবারগুলো জাহান্নামে আগুনের দিকে দাবিত হচ্ছে। আমাদের পরিবারগুলোকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাচাতে হবে।
এছাড়া উত্তর আমেরিকার নতুন প্রজন্মের মুসলিম তরুণ তরুণীদের আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে বিশিষ্ট উদীয়মান ইসলামী চিন্তাবিদ, তরুণ বক্তা কনভেনশনে তরুণদের উদ্দেশ্যে ইসলামের বিভিন্ন দিক, বিশেষত পাশ্চাত্যে ভিন্ন ধর্মীয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিবেশে মুসলিম হিসেবে নিজেদের স্বকীয়তা বজায় রেখে সত্য পথকে সমুন্নত করে সামনে এগিয়ে নিতে হবে সে সম্পর্কে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য পেশ করবেন। শিশুদের জন্যও কনভেনশনে থাকবে বিভিন্ন প্রতিযোগিতা ও বিনোদনমূলক ব্যবস্থা।
কনভেনশনের একটি উল্লেখযোগ্য দিক হিসেবে থাকবে রকমারী সামগ্রীর বাজার, যেখানে পাওয়া যাবে নারী পুরুষের পোশাক পরিচ্ছদ, অলঙ্কার, হস্তশিল্প সামগ্রী, গিফট আইটেমস ও খাবারের দোকান। এ ছাড়াও শেষ দিনে থাকবে আকর্ষণীয় সাংস্কৃতিক পর্ব।