এইচ এম আকতার যুক্তরাষ্ট্র থেকে : যুক্তরাষ্ট্রের পেন্সিলভেনিয়া অঙ্গরাজ্যের ফিলাডেলফিয়ায় মুনার তিন দিনব্যাপী মহাসম্মেলন শেষ হলো। এর মধ্যদিয়েই ভাঙলো মুসলমানদের মিলনমেলা। মহাসম্মেলন বিশ্ব মুসলমানদের কল্যাণ কামনা করা হয়।
গতকাল রোববার স্থানীয় সময় বিকাল দুইটায় মুসলিম উম্মাহ অব নর্থ আমেরিকা (মুনা) মহাসম্মেলন শেষ হয়। সমাপনী অনুষ্ঠানে শিশুদের বিভিন্ন ইভেন্টে বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠিত হয়।

এর আগে মুনা সম্মেলনে বিষয়ে সাংবাদিকদের সাথে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন, মুনার ন্যাশনাল প্রেসিডেন্ট ইমাম দেলোয়ার হোসাইন, সম্মেলন বাস্তবায়ন কমিটির চেয়ারম্যান আরমান চৌধুরী, সাবেক প্রেসিডেন্ট হারুন উর রশিদ, আবু আহমদ নুরুজ্জামান, মিডিয়া এন্ড কালচারাল পরিচালক এবং এসিস্টেন্টএক্সিকিউটিভ ডাইরেক্টর আনিসুর রহমান গাজী, এসিস্টেন্ট এক্সিকিউটিভ ডাইরেক্টর হাফেজ আবদুল্লাহ আল আরিফ,ন্যাশনাল শুরা সদস্য মোশারফ মাওলা সুজন, নিউইয়র্ক নর্থজোনের সেক্রেটারি মমিন মজুমদার প্রমুখ। এসময় সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন মুনার ন্যাশনাল প্রেসিডেন্ট।

তিনি বলেন, আমাদের অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে তারপরেও আমরা চেষ্টা করেছি ভালো কিছু করার জন্য। আমরা কোন রাজনৈতিক আদর্শ নিয়ে কাজ করি না।আমরা শুধু আমাদের আগামী প্রজম্মকে আলোর পথ দেখাতে চাই। দ্বিন প্রচার ছাড়া আমাদের আর কোন কাজ নেই। আগামীতে আমরা যাতে আরও ভালো করতে পারি সে আপনাদের সহযোগিতা চাই।
এর আগে গত শনিবার দিনগত রাতে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশনা করেন এখানে গড়ে উঠা বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো। এতে ফুটে ওঠে বাংলাদেশের জুলাই বিপ্লবের ঘটনা প্রবাহ। উঠে আসে আয়না ঘরের ভয়াবহ চিত্র। যা দর্শক শ্রোতাদের আকৃষ্ট করে।
শেখ মিখাইল আহমেদ বলেন, আমাদের এক কালেমা এক আল্লাহর দিকে ডাকতে হবে। এটি আমাদের কাজ। কিন্তু আমরা আজ এ কাজটি করছি না। আমাদের প্রজম্ম আজ ইসলামকে বুঝতে পারছে না। এটি আমাদের জন্য চিন্তার বিষয়।
তিনি আরও বলেন, আমাদের সব সময় আল্লাহর জিকিরে থাকতে হবে। আমাদের হালাল - হারাম মেনে চলতে হবে। সাহাবারা আল্লাহর বিধান মানার কারণে আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট ছিলেন।
শেখ মোহাম্মদ বেলাল বলেন, আমাদের ব্যবসা বাণিজ্য সব কিছুতেই ইসলাম থাকতে হবে। আমাদের মানবিক সকল গুণাবলী অর্জন করতে হবে। এজন্য আমাদের অনেক পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হবে। এসময় তিনি হযরত ইব্রাহিম আ: এর উদাহরণ দেন।
তিনি আরও বলেন, আমাদের সততার গুণাবলী অর্জন করতে হবে। আমাদের মাঝে আজ সততা খুবই কম।তাহলে অমুসলিমরা কেন আমাদের প্রতি আকৃষ্ট হবে। মসজিদের সাথে আমাদের সম্পর্ক বাড়াতে হবে।
তিনি বলেন, গুগল সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান অর্জন করতে হবে। ইউরোপ আমেরিকায় ইসলাম প্রচার করতে হলে আমাদের ইংরেজি ভাষা জানতে হবে। আমাদের সন্তানরা ইংরেজি জানে তাই তাদেরকে ইসলাম শিক্ষা দিতে হবে। প্রযুক্তি জ্ঞানে তারা অনেক এগিয়ে রয়েছে। আমাদের প্রতিবেশি হলো ইহুদী খ্রীস্টান।
মুনার সাবেক প্রেসিডেন্ট হারুন উর রশিদ বলেন, যারা ইসলামের জন্য জীবন দিতে রাজি আল্লাহ তাদের হাতেই বিজয় দিবেন। জিহাদ ছাড়া আল্লাহ বিজয় দান করবেন না। এটি আল্লাহর সুন্নাহ।
তিনি বলেন আমাদের প্রজম্ম আজ হারিয়ে যাচ্ছে। প্রযুক্তি আজ আমাদের জন্য অভিশাপ হয়ে দাড়িয়েছে। মোবাইল ইন্টারনেটের হাত থেকে আমাদের বাচতে হবে। কালচার এবং ধর্ম আমরা আলাদা করতে পারি না। মধ্যপাচ্যের কালচারকে আমাদের ধর্মের অংশ মনে করি।
তিনি আরও বলেন, আমরা যদি ইমানদার হই তাহলে বিজয় দান করবেন। এজন্য আমাদের ইমানদার হতে হবে।
হামিদ হোসাইন আজাদ বলেন, আল্লাহ সমস্ত উত্তমকে পছন্দ করেন। এজন্য আল্লাহ মানুষকে পরিক্ষা করেন। পুরো জীবনই হলো পরিক্ষা। দুনিয়ার জীবনকে কাজে লাগাতে হবে। পরিক্ষা ছাড়া আল্লাহ মানুষকে জান্নাত দিবেন না। এটি তাকে অর্জন করতে হবে। সফলতা অর্জন করতে হলে পরিক্ষায় ভালো করতে হবে। তাহলেই জান্নাত পাওয়া যাবে।
তিনি আরও বলেন, ভালো সময় আমরা ভালো মানুষ হওয়ার চেষ্টা করি এটি ঠিক না।
ড: আবুল কালাম আজাদ বাশার নিজেকে এবং পরিবারকে বাচানো এ বিষয়ে আলোচনা করতে গিয়ে বলেন, যে নিজেকে চিনেছে সে আল্লাহকে চিনেছে। মানুষ কখনো নাস্তিক হতে পারে না। কারণ তার ভিতরে স্রষ্টাকে চেনার অনেক কিছু রয়েছে।
যে নিজেকে চেনার চেষ্টা করে সে অহংকারি হতে পারে না। এসময় তিনি মানুষ সৃষ্টির রহস্য তুলে ধরে কুরআনের আয়াত তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, মানুষ খুবই দুর্বল, সে জম্মের পর হাটতে পারে না, নিজের হাতে খেতে পারে না। ভালো মন্দ জ্ঞান তার থাকে না। তারপরেও সে অহংকার করে।
তিনি আরও বলেন, মানুষকে আল্লাহর রঙে রঙ্গিন হতে হবে। আল্লাহর আদেশ নিষেধ মেনে চলতে হবে। শুধু ইবাদত করলে চলবে না, তার জমিনে তার দ্বিন প্রতিষ্টা করতে হবে। নিজের পরিবারকে যদি ইসলামের অনুস্মরণ না করানো যায় তাহলে হাশরে তার সন্তানরা মামলা করবে।
তিনি আরও বলেন, নিজেকে অর্থ কামানোর মেশিন বানাবেন না। মনে রাখবেন দ্বিনের দাওয়াত ছাড়া অমুসলিম দেশে থাকা জায়েজ নেই। তাই দ্বিনের প্রচার করতে হবে।
ড:আলতাফ হোসেন বলেন, ইসলামের প্রচার করতে হলে নতুন প্রজম্মকে আকৃষ্ট করতে হবে। আগামীর পৃথিবী তারাই নেতৃত্ব দিবেন। দ্বিনের যারা দায়ী তাদের সত্য কথা বলতে হবে। তাদের দেয়া ওয়াদা রক্ষা করতে হবে। কথা এবং কাজে মিল থাকতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের উত্তর চরিত্র এবং ভালো ব্যবহার দিয়েই মানুষের মন জয় করতে হবে। আমাদের টাকার পিছনে দৌড়ালে চলবে না। আল্লাহর সাথে দেয়া ওয়াদা আমাদের রক্ষা করতে হবে। আমরা যে দেশেরই হই না কেন আমাদের পরিচয় মুসলিম। মুনার প্রেসিডেন্ট ইমাম দেলোয়ার হোসাইন বলেন, দায়ী হিসেবে আমাদের নিয়তের বিশুদ্ধতা দরকার। আমাদের ভাষা হতে হবে সুন্দর। থাকতে হবে প্রযুক্তির জ্ঞান। ইসলাম প্রচার করতে হলে আমাদের যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। ইসলামকে সহজ করতে হবে। কঠিন করা যাবে না।
তিনি আরও বলেন, মুনা আমেরিকার প্রতি ঘরে ঘরে দাওয়াত পৌঁছাতে চায়। দাওয়াত ছাড়া আমাদের কোন কাজ নেই। দ্বিনের কাজ আমাদের করতে হবে। বসে থাকার সময় আমাদের হাতে নেই। এসময় তিনি উম্মে শুরাই এর ইসলাম গ্রহনের উদাহরণ বর্ননা করেন।
ইমাম সিরাজ ওয়াহাজ বলেন, প্রতিটি মানুষকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। কেউ মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পাবে না। আমাদের সম্পদ ইসলাম প্রচারে ব্যয় করতে হবে