কিশোরগঞ্জ জেলার হাওড় অঞ্চলে বিবাহিত হয়েও অবিবাহিত দাবি করে নাঈম হাছান নামের একজন শিক্ষার্থী এসআই পদে মনোনীত হয়েছিলেন। এলাকার স্থানীয় এক যুবক কিশোরগঞ্জ পুলিশ সুপার কার্যালয়ে নাঈম হাসানের বিয়ের কাবিননামার কপিসহ লিখিত অভিযোগ দায়ের করে। তদন্ত শেষে পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশে গত বৃহস্পতিবার ৩ জুলাই নিয়োগটি বাতিল করা হয়েছে।
এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মুকিত সরকার।
অভিযোগে জানা যায়, ইটনা উপজেলার আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ও চৌগাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি কিষ্টপুর গ্রামের আব্দুল মোতালিবের ছেলে নাঈম হাছান বিয়ের তথ্য গোপন করে পুলিশের ক্যাডেট সাব-ইন্সপেক্টর পদে পরীক্ষা দিয়ে চাকরি পেয়েছিলেন। চৌগাঙ্গা ইউনিয়নের বিড়ারভিটা গ্রামের মৃত শাহেদ আলীর ছেলে আব্দুর রব গত ৩০ জুন পুলিশ সুপার কার্যালয়ে নাঈম হাছানের কাবিননামার কপিসহ একটি লিখিত অভিযোগ জমা দেন। এর পরই তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা পায় জেলা পুলিশ।
বিষয়টি পুলিশ সদর দপ্তরে অবহিত করলে নাঈম হাছানের নিয়োগটি গত বৃহস্পতিবার বাতিল করা হয়। অভিযোগকারী আব্দুর রব তার অভিযোগে নাঈম হাছানকে নিষিদ্ধ ঘোষিত বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কর্মী বলেও উল্লেখ করেছেন।
জানা যায়, ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে পুলিশের ক্যাডেট সাব-ইন্সপেক্টর পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হলে নাঈম হাছান নিজেকে অবিবাহিত দাবি করে নিয়োগ পরীক্ষা দিয়ে মনোনীত হন। নাঈম হাছানের নাম নিয়োগের চূড়ান্ত তালিকার ৪৬০ নম্বর ক্রমিকে ছিল। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষানবিশকাল শেষ না হওয়া পর্যন্ত অবিবাহিত থাকার শর্ত উল্লেখ ছিল।
অভিযোগ সূত্রে আরো জানা যায়, ২০২৪ সালের ২৬ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে করেন নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগ কর্মী নাঈম হাছান। তার শ্বশুরবাড়ি জেলার পাকুন্দিয়া উপজেলার এগারসিন্দুর ইউনিয়নের খামা গ্রামে। খামা গ্রামের জসীম উদ্দীনের মেয়ে আজিজুন্নাহার সাথীর সাথে বিবাহের বরযাত্রী ছিলেন চৌগাংগা ইউপি চেয়ারম্যান ছাইফুল ইসলাম। ছয় লাখ টাকা মোহরানায় নাঈম হাছান ও আজিজুন্নাহার সাথীর বিয়েতে ১ নম্বর সাক্ষীও ছিলেন ইউপি চেয়ারম্যান ছাইফুল ইসলাম।
বিয়ের বরযাত্রী হিসেবে যাওয়া ও বিয়ের সাক্ষী হওয়ার পরও কিভাবে অবিবাহিত হিসেবে সনদ দিলেন এ প্রশ্নের জবাবে চৌগাংগা ইউপি চেয়ারম্যান ছাইফুল বলেন, বিয়েতে সাক্ষী ছিলাম কি না মনে নেই। তবে একটা প্রত্যয়ন লিখে এনে আমাকে দস্তখত করার কথা বলেছিলো, দস্তখত করে দিয়েছি। এখন অভিযোগ পাওয়ার পর মঙ্গলবার (১ জুলাই) আবার বিবাহিত হিসেবে নতুন করে প্রত্যয়ন দিয়েছি। বিষয়টি সম্পর্কে আমার ধারণা না থাকায় এমনটি হয়েছে।তিনি বিশ্বাসের ওপর সনদটি না দেখেই স্বাক্ষর করেছিলেন।
পুলিশ ভেরিফিকেশনের সময় বৈবাহিক অবস্থার তথ্য গোপনের বিষয়টি কেন ধরা পড়েনি এ প্রশ্নের জবাবে ইটনা থানার ওসি মো. জাফর ইকবাল বলেন, তখন পুলিশকে এ ব্যাপারে কেউ তথ্য দেয়নি। তাই আমরা বিষয়টি জানতে পারিনি। এখন বিষয়টি জানার পর সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে ।
অভিযুক্ত নাঈম হাছানকে একাধিকবার ফোন করলেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তাই, তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে তার বাবা আব্দুল মোতালিব স্বীকার করেন, তার ছেলে বিয়ের তথ্য গোপন করে চাকরির আবেদন করেছিলেন। তবে নাঈম আগেই সিদ্ধান্ত নিয়ছিলেন তিনি চাকরিটা করবেন না। কারণ নাঈম বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।