DailySangram-Logo-en-H90
ই-পেপার আজকের পত্রিকা

বাংলাদেশ

কর্ণফুলীতে গ্যাস নিতে আসা সিএনজি অটোরিকশার অধিকাংশই চলে রুট পার্মিট ও ফিটনেস ছাড়া

দক্ষিণ চট্টগ্রামের প্রবেশদ্বার কর্ণফুলীর মইজ্যারটেক এলাকায় ছয়টি সিএনজি ফিলিং স্টেশন রয়েছে। এসব সিএনজি ফিলিং স্টেশন থেকে গ্যাস নিতে আসে দক্ষিণ চট্টগ্রামের সাত উপজেলার সিএনজি অটোরিকশা।

চট্টগ্রাম ব্যুরো
Printed Edition

দক্ষিণ চট্টগ্রামের প্রবেশদ্বার কর্ণফুলীর মইজ্যারটেক এলাকায় ছয়টি সিএনজি ফিলিং স্টেশন রয়েছে। এসব সিএনজি ফিলিং স্টেশন থেকে গ্যাস নিতে আসে দক্ষিণ চট্টগ্রামের সাত উপজেলার সিএনজি অটোরিকশা। এছাড়া কক্সবাজারের পেকুয়া ও মহেশখালী উপজেলা থেকে সিএনজি অটোরিকশা গ্যাস নিতে আসে। প্রতিদিন এসব এলাকার লক্ষাধিক গ্রাম সিএনজি অটোরিকশা এখান থেকে গ্যাস নেয়। এখানে গ্যাস নিতে আসা প্রায় সব সিএনজি অটোরিকশা সড়কে চলাচল করে অনটেস্টে (নম্বরবিহীন)।

হাতেগুনা দুয়েকটি সিএনজি অটোরিকশার কাগজপত্র (ডকুমেন্টে) থাকলেও আছে দুর্বলতা। কোনো সিএনজি অটোরিকশায় ফিটনেস নেই, কোনোটির নেই রুটপারমিট, আবার কোনোটির নেই ট্যাক্স টোকেন। এসব কাগজপত্র থাকলেও কোনোটির না কোনোটির মেয়াদ নেই। আবার কোনো কোনো চালকের লাইসেন্স নেই। চালকের সঙ্গে থাকেনা মালিকানা স্মর্টকার্ড। গাড়িগুলোর এসব দুর্বলতা “পোয়াবারো“ ট্রাফিক পুলিশ।

মামলা ও টু (গাড়ি জব্দ) করার ভয় দেখিয়ে কোনো গাড়ি থেকে ৫ হাজার টাকা, কোনো গাড়ি থেকে ৪ হাজার টাকা, কোনো গাড়ি থেকে ৩ হাজার টাকা, কোনো গাড়ি থেকে ২ হাজার টাকা টাকা ও কোনো গাড়ি থেকে ১৫শ‘ টাকা আদায় করে ট্রাফিক পুলিশ। প্রথমে সংকেত দিয়ে গাড়ি থামানো হয়। এরপর ট্রাফিক কনস্টেবল, দালাল মাহিন ও টোকেন ব্যাপারিখ্যাত ইউসুফ এগিয়ে যায়। তারা সিএনজি অটোরিকশার চালককে বলে টুঁ করলে গাড়ি ছাড়াতে ৭/৮ হাজার টাকা লাগবে। ৫ হাজার টাকা দিলে গাড়ি ছেড়ে দেওয়া হবে। এভাবে যার কাছ থেকে যতটাকা নেওয়া য়ায়, ততটাকা নিয়ে গাড়ি ছেড়ে দেওয়া হয়। এতে ট্রাফিক পুলিশের পকেট ভারি হলেও প্রতিমাসে লাখ লাখ টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। ঘুস দিয়ে পার পেয়ে যাওয়ায় গাড়ির কাগজপত্র (ডকুমেন্ট আপটেড) হালনাগাদ করছেন না মালিকরা।

সরেজমিনে দেখা যায়, শনিবার সকাল ৭ থেকে মইজ্যারটেকের দক্ষিণে পিডিবি ভবনের অপরপাশে খুপড়ি চা দোকানে বসে আছেন ট্রাফিক সার্জেন্ট মশিউর। সড়কে গাড়ি থামাচ্ছেন ট্রাফিক কনেস্টেবল মাসুদ, শওকত ও প্রসনজিত। গ্যাস নিয়ে যাওয়ার পথে প্রায় সব সিএনজি অটোরিকশাকে সংকেত দিয়ে থামাচ্ছেন তারা। এসব গাড়ি থেকে সমানে টাকা আদায় করা হচ্ছে। কোনো গাড়িকে মামলা দেওয়া কিংবা টুঁ করা হচ্ছে না। টাকা নিয়ে সব গাড়ি ছেড়ে দিচ্ছেন দায়িত্বে নিয়োজিত ট্রাফিক পুলিশ।

এসময় কথা হয় সিএনজি অটোরিকশা চালক সুমনের সঙ্গে। তিনি সকাল ৮টায় বোয়ালখালী থেকে চট্টগ্রাম-থ-১৪-৫৪৩৮ নং সিএনজি অটোরিকশা নিয়ে মইজ্যারটেকে এসেছেন গ্যাস নিতে। তৈয়বশাহ সিএনজি ফিলিং স্টেশন থেকে গ্যাস নিয়ে চলে যাওয়ার সময় তাকে সংকেত দিয়ে থামানো হয়। যথারীতি তিনি গাড়ি থামালে কাগজপত্র দেখতে চায় ট্রাফিক পুলিশ। গাড়ির ডকুমেন্ট দেওয়া হয়। ডকুমেন্ট নিয়ে খুপরি চা দোকোনে ঢুকে ট্রাফিক। সেখানে বসা টোকেন ব্যাপারিখ্যাত ইউসুপের কাছে গিয়ে ডকুমেন্টগুলো দেখানো হয়। তার কাছেই বসে আছেন সার্জেন্ট মশিউর। এসময় দালাল মাহিন বলে উঠেন মামলা দিয়ে দেন স্যার। ইউসুপ বলে টুঁ করলে ৭/৮ হাজার টাকা খরচ হবে। ৫ হাজার টাকা দিলে ছেড়ে দেওয়া হবে। শেষমেষ ১ হাজার ৭শ টাকায় রফা হয়। ১৫শ টাকা ট্রাফিক পুলিশকে ও ২শ টাকা ইউসুপকে দিতে হবে। কিন্তু চালকের কাছে টাকা নেই। বিকাশে বাড়ি থেকে টাকা আনা হয়েছে। কলেজ বাজার এলাকায় গিয়ে টাকা ক্যাশআউট করা হয়। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন ইউসুপ। ততক্ষণে ওই এলাকা ত্যাগ করে মইজ্যারটেক মোড়ে চলে আসেন ট্রাফিক। টাকা ক্যাশ করে ইউসুপসহ গিয়ে ট্রাফিক পুলিশের হাতে দিলে গাড়ির কাগজপত্র ফেরত দেওয়া হয়। পরে গাড়ি নিয়ে চালক সুমন বাড়িতে চলে যায়।

তিনি দু:খ প্রকাশ বলে বলেন, কিস্তি (ঋণ) নিয়ে সিএনজি অটোরিকশাটি কিনেছি। খেয়ে-না খেয়ে কিস্তি পরিশোধ করতে হয়। খালি গাড়ি নিয়ে গ্যাস আনতে গেলাম। গ্যাসভরে খালি গাড়ি নিয়ে চলে আসলাম। মাঝখানে ট্রাফিক পুলিশকে দিতে হলো এতগুলো টাকা। কী করার আছে আমাদের ?

এভাবে প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে ৯টা পর্যন্ত চলে ট্রাফিক পুলিশের চাঁদাবাজি। টিআই ( ট্রাফিক ইনচার্জ) কর্ণফুলী মইজ্যারটেক আসার আগেই পকেট ভারী করে ফেলেন দায়িত্বে নিয়োজিত সার্জেন্ট ও ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা। সারাদিন টি আই এর ভয় দেখিয়ে তার অগোচরে চাঁদাবাজি করে ট্্রাফিক পুলিশ। এতে নির্বিকার চালকরা। কারণ দুর্বলতা তো তাদের আছেই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মহানগর ট্রাফিক পুলিশের (বন্দর জোন) উপ কমিশনার কবির আহমেদ বলেন, আপনার কাছে চাঁদাবাজির ছবি, ভিডিও অথবা অন্য কোনো প্রমাণ থাকলে আমার কাছে পাঠান। কিংবা একটি লিখিত অভিযোগ দেন, আমি ব্যবস্থা নিব।