সার আমদানিতে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের সংবাদ প্রকাশের জেরে গণমাধ্যম কর্মীদের হুমকি দেওয়ার প্রতিবাদে কৃষি সচিব এমদাদ উল্লাহ মিয়ানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে ‘বৈষম্য বিরোধী সাংবাদিক সমাজ’। সমাবেশ থেকে কৃষি সচিবের অপসারণ দাবি করা হয়। মঙ্গলবার রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আয়োজিত এ সমাবেশে সাংবাদিক নেতারা কৃষি সচিবের অপসারণ এবং সার কেলেংকারির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে তদন্তের জোর দাবি জানান।

সংগঠনের প্রধান সমন্বয়ক জাকির হোসেনের সভাপতিত্বে ও সমন্বয়ক এসএম তাজুল ইসলামের সঞ্চালনায় এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সাংগঠনিক সম্পাদক এরফানুল হক নাহিদ। এছাড়া বক্তৃতা করেন সাংবাদিক নেতা আব্দুল কাইয়ুম, রাজু আহমেদ প্রমুখ। বক্তারা বলেন, বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে সার আমদানি নিয়ে সরকারি অর্থ লোপাটের সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর কৃষি সচিব সাংবাদিকদের প্রতি অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হন এবং অশ্লীল ভাষায় হুমকি দেন।

সাম্প্রতিক সময়ে কয়েকটি দৈনিক পত্রিকায় একাধিক গণমাধ্যমে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সার আমদানি প্রক্রিয়ায় অনিয়মের অভিযোগ নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এ আলোচনার সূত্রপাত করেন প্রবাসী অনুসন্ধানী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের খান (সামি)। তিনি তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক পোস্টে দাবি করেন, কৃষি মন্ত্রণালয়ের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা দরপত্রের নিয়মনীতি লঙ্ঘন করে নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে সুবিধা দিয়ে লাখ লাখ ডলারের সার আমদানির কার্যাদেশ দিয়েছেন, যা রাষ্ট্রীয় অর্থ লুটপাটের শামিল।

সামির তথ্য অনুযায়ী, মন্ত্রণালয় একই সময়ে একই উৎস দেশ থেকে একই মানের ডাই-অ্যামোনিয়াম ফসফেট (ডিএপি) ও ট্রিপল সুপার ফসফেট (টিএসপি) সার ভিন্ন ভিন্ন দামে একাধিক প্রতিষ্ঠানকে আমদানি করার অনুমতি দিয়েছে, যা সরকারি ক্রয়নীতির সরাসরি লঙ্ঘন। তার পোস্টে উল্লিখিত তথ্যে দেখা যায়- ডিএপি সার ‘বাল্ক ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে দুটি ভিন্ন কার্যাদেশে মিশর থেকে প্রতি টন ৮৭৪ ডলারে এবং চীন থেকে ৮৪৮ ডলারে ডিএপি সার আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়।

একই সময়ে ‘এনআরকে হোল্ডিং’ নামক প্রতিষ্ঠানকেও চীন থেকে একই দরে (৮৪৮ ডলার/টন) সার আমদানির কার্যাদেশ দেওয়া হয়। প্রশ্ন উঠেছে, সর্বনিম্ন দরদাতাকে কাজ না দিয়ে উচ্চমূল্যে কেন সার আমদানির অনুমতি দেওয়া হলো ? টিএসপি সার ‘দেশ ট্রেডিং কর্পোরেশন’কে মরক্কো থেকে ৬৯৪ ডলার/টন এবং লেবানন থেকে ৬৮৮ ডলার/টন দরে টিএসপি সার আমদানির কাজ দেওয়া হয়। এখানেও সর্বনিম্ন দরের নীতিমালা উপেক্ষা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সামি দাবি করেন, দরপত্রের পরিবর্তে ‘নেগোসিয়েশন’ বা সমঝোতার মাধ্যমে এ কার্যাদেশগুলো দেওয়া হয়েছে, যা মূলত পছন্দের প্রতিষ্ঠানকে বাড়তি সুবিধা দেওয়ার একটি কৌশল। বিক্ষোভ সমাবেশে সাংবাদিক নেতারা অভিযোগ করেন, অন্তর্বর্তী সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে এবং ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের অর্জনকে স্নান করতে একটি মহল সক্রিয় রয়েছে।

তাদের মতে, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সুবিধাভোগী কিছু কর্মকর্তা সুকৌশলে দেশে সারের কৃত্রিম সংকট তৈরি করছে। চলতি বোরো মৌসুমের শুরুতেই দেশব্যাপী যে সারের সংকট দেখা দিয়েছিল, তা এই ষড়যন্ত্রেরই অংশ বলে মনে করছেন তারা। বক্তারা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, অবিলম্বে সার সংকটের সমাধান করা না গেলে বোরো মৌসুমের উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে, যা দেশে খাদ্য সংকট তৈরি করতে পারে। সমাবেশ থেকে কৃষি সচিব এমদাদ উল্লাহ মিয়ানের অপসারণ, সাংবাদিকদের হুমকি দেওয়ার ঘটনার বিচার এবংসার আমদানিতে দুর্নীতির অভিযোগের বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানান তারা।