বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী বলেছেন, সাংবাদিকতার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে মিথ্যার সঙ্গে লড়াই করা। এজন্য সাংবাদিকদের হতে হবে সৎ, সাহসী ও নিষ্ঠাবান। তিনি বলেন, সত্য বলার সাহসিকতাই সাংবাদিকতার মূলমন্ত্র, আর সাংবাদিকতা মানেই সত্যের আরাধনা।

রোববার দুপুরে গাজীপুর প্রেসক্লাব মিলনায়তনে তত্ত্বাবধায়কমন্ডলীর দায়িত্ব গ্রহণ ও “চব্বিশ পরবর্তী নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে গণমাধ্যমের ভূমিকা” শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান আলোচক হিসেবে এসব কথা বলেন তিনি। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন গাজীপুর প্রেসক্লাব আহ্বায়ক খন্দকার গোলাম সরওয়ার এবং সঞ্চালনা করেন সাংবাদিক মাজহারুল ইসলাম মাসুম।

কাদের গনি চৌধুরী বলেন, গণমাধ্যমকে সমাজের দর্পণ বলা হয়, সাংবাদিকরা হচ্ছেন সমাজের ওয়াচডগ। অন্যায়-অবিচার, শোষণ-বঞ্চনা, হত্যা-খুন, গুম-অপহরণ, দুর্নীতি ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকা সাংবাদিকতার দায়িত্ব। ভয়-ভীতিকে উপেক্ষা করে নিরপেক্ষভাবে সত্য প্রকাশ করাই একজন সাংবাদিকের কর্তব্য। তিনি সতর্ক করেন, জনগণ দাস সাংবাদিকতাকে ঘৃণা করে, তাই সততা ও বস্তুনিষ্ঠতাকে সাংবাদিকতার মূল ভিত্তি হিসেবে ধারণ করতে হবে।

তিনি বলেন, “গণমাধ্যম রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। অন্য তিনটি স্তম্ভ নড়বড়ে হলেও গণমাধ্যম শক্ত থাকলে রাষ্ট্র গণমুখী হয়, কিন্তু গণমাধ্যম দুর্বল হলে রাষ্ট্র বিপদগ্রস্ত হয়।” তিনি ফরাসি দার্শনিক অ্যালেক্সিসের উক্তি উদ্ধৃত করে বলেন, সভ্যতা টিকে থাকে গণমাধ্যমের শক্তির ওপর। একইভাবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জেফারসনের বক্তব্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, সংবাদপত্রবিহীন সরকার নয়, বরং সরকারবিহীন সংবাদপত্রই মানুষের জন্য গ্রহণযোগ্য।

সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের বিচার না হওয়াকে জাতীয় লজ্জা হিসেবে আখ্যায়িত করে কাদের গনি চৌধুরী বলেন, ১২১ বার তদন্ত প্রতিবেদন পিছিয়েছে অথচ সত্য উদঘাটন হয়নি। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও সাইবার নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে সাংবাদিকদের কণ্ঠরোধ করা হচ্ছে, অথচ সাংবাদিকদের সুরক্ষায় কোনো আইন নেই। তিনি প্রশ্ন রাখেন, “গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণে ৩২টি আইন থাকতে পারে, কিন্তু সাংবাদিকদের সুরক্ষায় কেন একটি আইনও নেই?”

বিএফইউজে মহাসচিব দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, অপসাংবাদিকতা, দলদাস সাংবাদিকতা, তথ্য সন্ত্রাস ও হলুদ সাংবাদিকতা আজ গণমাধ্যমের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করছে। ডিএফপি ও পিআইডির কিছু অসাধু কর্মকর্তার ছত্রছায়ায় বগল সম্পাদকদের উত্থান ঘটেছে, অথচ প্রকৃত সম্পাদকরা কোনঠাসা। তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, সত্য প্রকাশ করতে গিয়ে ইতোমধ্যে ৬৮ জন সাংবাদিক জীবন দিয়েছেন, সাগর-রুনির মতো মেধাবী সাংবাদিককে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে।

আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ সোহেল হাসান, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খন্দকার মুদাচ্ছির বিন আলী, সাংবাদিক দেলোয়ার হোসেন, শরীফ আহমেদ শামীম, শাহ শামসুল হক রিপন, খায়রুল ইসলাম, বেলাল হোসেন, আমিনুল ইসলাম, মুকুল কুমার মল্লিক, শেখ আজিজুল ইসলাম প্রমুখ।