ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুস আহমাদ দৈনিক ইনকিলাবের বিরুদ্ধে তাঁর দলকে জড়িয়ে ‘নির্জলা মিথ্যা ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত প্রপাগান্ডা’ চালানোর অভিযোগ করেছেন। আজ ১৭ জুলাই বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে তিনি এ অভিযোগ করেন।

বিবৃতিতে তিনি বলেন, সাংবাদিকতা রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। ন্যায়নিষ্ঠ ও সত্য সাংবাদিকতা জাতীর জন্য আলোকবর্তিকা। কিন্তু সাংবাদিকতার নামে মিথ্যাচার করা, নির্দিষ্ট দলের হয়ে প্রচারনা চালানো কোনভাবে কাম্য না। বিশেষ করে ইনকিলাবের মতো একটি ঐতিহ্যবাহী পত্রিকা যখন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মতো একটি শুদ্ধধারার রাজনৈতিক সংগঠনের বিরুদ্ধে নির্জলা মিথ্যা ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত যুক্তি ব্যবহার করে প্রপাগান্ডা চালায় তখন প্রথমত আমরা বিস্মিত হই এবং ব্যথিত হই। আমরা আশা করি দৈনিক ইনকিলাব মিথ্যাযুক্ত প্রতিবেদন প্রত্যাহার করে সুস্থ্য সাংবাদিকতায় তার ঐতিহ্য ধরে রাখবে।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব বলেন, আজ ১৭ জুলাই দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকার প্রথম পাতায় “জামায়াতের নেতৃত্বে ‘ইসলামী জোট’ গঠনের প্রচারণা তুঙ্গে। বিএনপির দিকে তাকিয়ে ইসলামী ধারার দলগুলো” শিরোনামে প্রতিবেদন করা হয়েছে। সেখানে অভিযোগ করা হয়েছে “ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ আওয়ামী ছত্রছায়ায় বেড়ে ওঠা দল”। এই ব্যাপারে বিগত ১৫ বছরের বাস্তবতা সাক্ষ দেবে যে, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ফ্যাসিবাদের আমলে প্রতিটি অন্যায়-অবিচার, দুর্নীতি ও দুঃশাসনের বিরুদ্ধে মাঠে ছিলো। ফ্যাসিবাদের আমলে সকল রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ অপরাপর রাজনৈতিক সংগঠনের সাথে সামঞ্জস্য রেখেই রাজনৈতিক অবস্থান নিয়েছে। কোন কোন ক্ষেত্রে আরো কঠোর অবস্থান নিয়েছে। ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের প্রাক্কালে সকল রাজনৈতিক দল স্বৈরাচারী প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণ গ্রহণ করলেও ইসলামী আন্দোলন ঘৃণ্যাভরে তা প্রত্যাখ্যান করেছে। ফ্যাসিবাদ বিরোধী অনেক সংগঠন নানা সময়ে নানা চাপে স্বৈরাচারের মন্ত্রী ও পালের গোঁদা শেখ হাসিনার সাথে বৈঠক করতে বা সাক্ষাতে যেতে বাধ্য হয়েছে। ইসলামী আন্দোলন সেইসব বৈঠক ও সাক্ষাৎও দৃঢ়তার সাথে এড়িয়ে গেছে।

২০১৪ ও ২৪ এর নির্বাচন অন্যান্য রাজনৈতিক দলের মতো ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশও বর্জন করেছে। এবং ২০১৮ এর নির্বাচনে অন্যরা অংশ নিলে আমরাও অংশ নিয়েছি। ফ্যাসিষ্ট আমলের স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিএনপিসহ অন্যরাও অংশ নিয়েছে। ২০১৬ সালের স্থানীয় নির্বাচনে বিএনপি ধানের শীষ প্রতিকে লড়াই করেছে। ২০২০ সালে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপিসহ অন্যরাও অংশ নিয়েছে। ফ্যাসিষ্ট আমলে চট্রগ্রাম, কুমিল্লা ও গাজীপুরে বিএনপির মেয়ররা নির্বাচিত হয়ে নগর পরিচালনাও করেছেন। ২০২১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি বিএনপি আনুষ্ঠানিকভাবে স্থানীয় নির্বাচন বয়কট করে। ২০১৮ সালের জালিয়াতিপূর্ণ নির্বাচনে বিএনপি থেকে ৭ জন এমপি নির্বাচিত হয়, তারা ১১ ডিসেম্বর-২০২২ পর্যন্ত সংসদে ছিলো। ফলে ফ্যাসিষ্ট আমলে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নেয়ার কারণে ইসলামী আন্দোলনকে দোষারোপ করা একচোখা সমালোচনা। নির্বাচনে অংশ নেয়ার কারণে ইসলামী আন্দোলনকে দোষারোপ করলে বিএনপিও একই দোষে দোষী। তবে আমরা মনে করি এবং বিএনপি নেতৃবৃন্দের তৎকালীন বক্তব্যও এটা ছিলো যে, দলকে চাঙ্গা রাখা, স্থানীয় পর্যায়ে দলের ক্ষমতা মজবুত করা এবং স্থানীয় সরকারেও পুরো মাত্রায় ফ্যাসিষ্ট চেপে বসা থেকে জাতীকে রক্ষা করতেই স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সবাই অংশ নিয়েছে। আজকের এই দিনে সেই বিষয়কে কেন্দ্র করে রাজনীতিকে বিভাজন তৈরি করার অপচেষ্টা দৈনিক ইনকিলাব থেকে কেউ আশা করে না। দৈনিক ইনকিলাবের মতো একটা পত্রিকা এই ধরণের কাজ করছে এটা হতাশাজনক।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব বলেন, ইনকিলাবের প্রতিবেদনের ভাষ্যমতে বিএনপির বিরোধিতা করাকে ভারতীয় এজেন্ডা সাব্যস্ত করা হয়েছে। আগে আওয়ামী লীগের বিরোধিতাকে পাকিস্তানের এডেন্ডা বলা হতো, এখন বিএনপি বিরোধিতাকে ভারতের এজেন্ডা বলা হচ্ছে। এই নোংরামী নিয়ে কিছু বলার নাই। তবে জুলাই অভ্যুত্থানের পরে রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে ইতিবাচক ধারা তৈরির যে চেষ্টা ছিলো তা ইনকিলাব নষ্ট করছে দেখে আমরা আশাহত হই।

মাওলানা ইউনুস আহমদ বলেন, পিআর সারা বিশ্বে পরীক্ষিত একটি পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে জনমতের শতভাগ রাষ্ট্র ক্ষমতায় প্রতিফলিত হয়। এর বিপক্ষে কথা থাকতে পারে। কিন্তু দৈনিক ইনকিলাব পিআরের দাবীকেও যেভাবে ভারতের এজেন্ডা বলে অভিহিত করছে তা অতি সস্তা যুক্তি। আমরা দৈনিক ইনকিলাবের কাছে আরো শক্ত যুক্তি আশা করি। কুযুক্তি নয়।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব বলেন, রাজনীতিতে ভিন্নমত থাকবে। দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক প্রতিযোগীতা থাকবে। তর্ক হবে। যুক্তি হবে। এটাই সৌন্দর্য। কিন্তু ইনকিলাব পত্রিকা যা করছে তা শোভনীয় না। আমরা দৈনিক ইনকিলাব থেকে এমনটা আশা করি না। আমরা আশা করি, দৈনিক ইনকিলাব কর্তৃপক্ষ আজকের বিতর্কিত এই প্রতিবেদন প্রত্যাহার করে সুস্থ্য ধারার রাজনীতি বিকাশে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।