বিশ্বের ক্যাথলিক খ্রিস্টান ধর্মের সর্বোচ্চ নেতা পোপ ফ্রান্সিস মারা গেছেন। গতকাল সোমবার ৮৮ বছর বয়সে তিনি মারা যান। পোপ ষোড়শ বেনেডিক্ট পদত্যাগ করার পর ২০১৩ সালের মার্চ মাসে তিনি পোপ হয়েছিলেন।
সোমবার তার মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। সংবাদমাধ্যমটি বলছে, ক্যাথলিক চার্চের প্রধান পোপ ফ্রান্সিস মারা গেছেন বলে ভ্যাটিকান জানিয়েছে। মৃত্যুর সময় তার বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর।
পোপ ফ্রান্সিসের প্রকৃত নাম ছিল জর্জ মারিও বারগোলিও। ২০১৩ সালের মার্চে তিনি পোপ নির্বাচিত হন। মূলত তৎকালীন পোপ ষোড়শ বেনেডিক্ট পদত্যাগ করার পরই তিনি এই পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন।
ভ্যাটিকানের দেওয়া বিবৃতিতে জানানো হয়, পোপ ফ্রান্সিস ইস্টার মানডে (২১ এপ্রিল ২০২৫), স্থানীয় সময় সকাল ৭টা ৩৫ মিনিটে ভ্যাটিকানের কাসা সান্তা মার্তা বাসভবনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
কার্ডিনাল ফ্যারেল বলেন, “প্রিয় ভাই ও বোনেরা, গভীর শোকের সঙ্গে জানাচ্ছি আমাদের পবিত্র পিতা ফ্রান্সিস প্রয়াত হয়েছেন। সকাল ৭টা ৩৫ মিনিটে রোমের বিশপ ফ্রান্সিস ‘পিতার ঘরে’ ফিরে গেছেন। তার পুরো জীবন ছিল প্রভু ও গির্জার সেবায় নিবেদিত।”
তিনি আরও বলেন, “পোপ ফ্রান্সিস আমাদের শিখিয়েছেন কীভাবে বিশ্বাস, সাহস ও নিঃস্বার্থ ভালোবাসা দিয়ে গসপেলের মূল্যবোধে বাঁচতে হয়- বিশেষ করে দরিদ্র ও প্রান্তিক মানুষদের পাশে দাঁড়িয়ে।”
কার্ডিনাল ফ্যারেল বলেন, “যিশুখ্রিস্টের একজন প্রকৃত শিষ্য হিসেবে তার জীবনের জন্য আমরা গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। তার আত্মাকে আমরা অসীম করুণাময় ঈশ্বরের কাছে সমর্পণ করছি।”
উল্লেখ্য, পোপ ফ্রান্সিস ২০১৩ সালে রোমান ক্যাথলিক চার্চের ২৬৬তম পোপ হয়েছিলেন। তিনি পোপ ষোড়শ বেনেডিক্টের উত্তরসূরি নির্বাচিত হন। গত ১০০০ বছরে পোপ ফ্রান্সিসই প্রথম ব্যক্তি যিনি ইউরোপীয় না-হওয়া সত্ত্বেও ক্যাথলিক ধর্মের সর্বোচ্চ পদে পৌঁছেছিলেন।
প্রসঙ্গত, ভ্যাটিকান সিটির আয়তন মাত্র ০.৪৪ বর্গকিলোমিটার। এটি ইতালির রোম শহরের মধ্যস্থলে প্রাচীরবেষ্টিত একটি এলাকা। ভ্যাটিকান সিটির অভ্যন্তরে কোনও প্রাকৃতিক জলাশয়ই নেই। শহরটি মূলত একটি ছোট পাহাড়ের ওপর অবস্থিত, যার নাম ভ্যাটিকান পাহাড়।
ভ্যাটিকান সিটি ১৯২৯ সালে অস্তিত্ব লাভ করে। পোপ (বাংলায় ধর্মযাজক বা পাদ্রি) এখানকার রাষ্ট্রনেতা এবং তারা রাষ্ট্র শাসন করেন। ভ্যাটিকান সিটি সারাবিশ্বের রোমান ক্যাথলিকদের প্রতিনিধিত্ব করে। এটি রোমান ক্যাথলিক গির্জার বিশ্ব সদর দপ্তর হিসেবে কাজ করে।
দক্ষিণ আমেরিকার কোন দেশ থেকে আসা প্রথম পোপ ছিলেন তিনি। ক্যাথলিক চার্চের পোপ হওয়ার পর অনেক কিছুই প্রথমবার করলেও ফ্রান্সিস কখনো চার্চের সংস্কার কার্যক্রম বন্ধ করেননি। এরপরও পুরোনোকে আঁকড়ে ধরা ঐতিহ্যবাদীদের মাঝেও তিনি সমানভাবে জনপ্রিয় ছিলেন।
সিরিয়ায় জন্ম নেওয়া তৃতীয় গ্রেগরি ৭৪১ খ্রিস্টাব্দে মারা যাওয়ার পর থেকে রোমে আর কোন অ-ইউরোপিয় বিশপ ছিল না। সেন্ট পিটারের সিংহাসনে নির্বাচিত প্রথম জেসুইটও ছিলেন তিনি।
ঐতিহাসিকভাবেই জেসুইটদের রোম সন্দেহের চোখে দেখতো। জেসুইট বলতে এখানে যিশুখ্রিস্টের সোসাইটির সদস্যদের বুঝানো হয়। যারা অন্যদের সাহায্য করার, ন্যায়বিচার ও সবকিছুতে বিধাতাকে খুঁজে পাওয়ার জন্য নিবেদিত।
ফ্রান্সিসের পূর্বসূরি ষোড়শ বেনেডিক্ট ছিলেন ছয়শ বছরের মধ্যে স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণকারী প্রথম পোপ। ফলে প্রায় এক দশক সময়ের মধ্যে ভ্যাটিকান গার্ডেন দুজন পোপের দেখা পেয়েছে। আর্জেন্টিনার কার্ডিনাল বারগোগ্লিও ২০১৩ সালে পোপ হওয়ার সময় ৭০ বছর বয়সী ছিলেন।
অনেক ক্যাথলিকধারণা করেছিলেন নতুন প্রধান যাজক বা পোপ বয়সে তরুণ হবেন। বারগোগ্লিও নিজেকে একজন কম্প্রোমাইজ ক্যান্ডিডেট হিসেবে উপস্থাপন করেছিলেন।