কক্সবাজারের উখিয়াতে প্রায় এক লাখ রোহিঙ্গার সঙ্গে ইফতার করেছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তেনিও গুতেরেস। গতকাল শুক্রবার প্রধান উপদেষ্টার উদ্যোগে এই ইফতার পার্টির আয়োজন করা হয়। এর আগে অধ্যাপক ইউনূস ও গুতেরেসকে বহনকারী বিমানের চার্টার্ড ফ্লাইটটি শুক্রবার দুপুর ১২টা ৪৮ মিনিটের দিকে কক্সবাজার বিমানবন্দরে অবতরণ করে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বিমানবন্দরে তাদের স্বাগত জানান।
সফরের অংশ হিসেবে প্রধান উপদেষ্টা কক্সবাজার বিমানবন্দরের একটি প্রকল্প উদ্বোধন করেন এবং খুরুশকূল জলবায়ু উদ্বাস্তু কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। পরে ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও অ্যান্তোনিও গুতেরেস উখিয়ায় প্রায় ১ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর সঙ্গে ইফতারে যোগ দেন।
বিকালে উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন শেষে অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করে আমি দুটি স্পষ্ট বার্তা পেয়েছি। প্রথমত, আশ্রিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী মিয়ানমারে ফিরে যেতে চায়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই মিয়ানমারে শান্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠা নিশ্চিত করতে হবে এবং রোহিঙ্গাদের অধিকার নিশ্চিত করে কোনও ধরনের বৈষম্যের শিকার তারা যেন না হয় সেদিকেও লক্ষ রাখতে হবে।
জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, ‘দ্বিতীয়ত, রোহিঙ্গারা আরও ভালো পরিবেশ চায় ক্যাম্পে। দুর্ভাগ্যবশত যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য অনেক দেশ সম্প্রতি নাটকীয়ভাবে মানবিক সহায়তা কমিয়ে দিয়েছে। এই কারণে আমাদের মানবিক সহায়তার মধ্যে খাবারের রেশন কমাতে হয়েছে। আমি প্রতিশ্রতি দিয়েছি, আমি আমার জায়গা থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো। যত দেশ সম্ভব আমি কথা বলবো, যাতে ফান্ড পাওয়া যায় এবং এর থেকে আরও খারাপ পরিস্থিতি না আসে।
এর আগে জাতিসংঘ মহাসচিব গুতেরেস কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকে সরাসরি উখিয়ায় যান। দুপুর ২টায় সেখানে পৌঁছে তিনি ইউনিসেফ পরিচালিত ফেন্সি লার্নিং সেন্টারে অধ্যয়নরত রোহিঙ্গা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। এ ছাড়াও তিনি রোহিঙ্গাদের সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ও পাটজাত পণ্যের উৎপাদন কেন্দ্র পরিদর্শন করেন।
অপরদিকে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস কক্সবাজার বিমানবন্দরের একটি প্রকল্প উদ্বোধন করেন এবং খুরুশকূল জলবায়ু উদ্বাস্তু কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। সেখানে খুরুশকুল জলবায়ু উদ্বাস্তু পুর্নবাসন প্রকল্পের অগ্রগতি সম্পর্কে বিভিন্ন বিষয়ে জানতে চেয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। প্রকল্পের ঘর কাদেরকে দেওয়া হয়েছে, কী প্রক্রিয়ায় দেওয়া হয়েছে এ বিষয়ে জানতে চান তিনি। তালিকা করার ক্ষেত্রে স্বচ্ছ প্রক্রিয়া অনুসরণ এবং দায়িত্ব বণ্টন ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে জোর দেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘যাদেরকে পুর্নবাসন করার কথা তারাই বাড়ি-ঘরগুলোতে উঠতে পারছে কি না, অন্য কেউ এসে নিয়ম না মেনে অসাধু উপায়ে উঠে পড়ছে কি না এগুলো অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে দেখতে হবে। ভবন তো টাকা দিলেই নির্মাণ হচ্ছে কিন্তু যে লক্ষ্যে ভবন নির্মাণ করতে চাচ্ছি সেটা পূরণ না হলে তো এসবের কোনো অর্থ নেই। প্রকল্পের একটি জমি ২০১৭ সাল থেকে বেক্সিমকো গ্রুপ দখলে রেখেছে বলেও সংশ্লিষ্টরা প্রধান উপদেষ্টাকে জানান। আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই এটি নিয়ে আদালতের রায় হওয়ার কথা রয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এতদিন ধরে অসীম দুর্নীতি চলেছে। যাদের সুবিধা পাওয়ার কথা তাদের না দিয়ে নিজেদের পছন্দের লোকজনকে দিয়ে দিয়েছে, টাকা-পয়সারও লেনদেন হয়েছে। কিন্তু যাদের নায্য পাওনা ছিল তারা পায়নি। কিন্তু এ ভুল আর করা যাবে না। প্রক্রিয়া স্বচ্ছ হতে হবে যেন কোনো ধরনের দুর্নীতি হতে না পারে। তত্ত্বাবধান ঠিকমতো হতে হবে, কার কী দায়িত্ব পরিষ্কার হতে হবে,’ বলেন তিনি।
দিনের শুরুতে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে তার কার্যালয়ে সাক্ষাৎ করেন।
এছাড়া আজ শনিবার ঐক্যমত কমিশনের সাথে দেখা করার পর যৌথ ব্রিফিংয়ের কথা রয়েছে। প্রঙ্গত,প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আমন্ত্রণে চার দিনের সফরে বৃহস্পতিবার ঢাকায় আসেন অ্যান্তোনিও গুতেরেস। আগামিকাল রোববার সকাল ৯টা ৫৫ মিনিটে এমিরেটসের একটি ফ্লাইটে জাতিসংঘ মহাসচিবের ঢাকা ত্যাগ করার কথা রয়েছে।