সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিতের লক্ষ্যে দুটি আইন সংশোধনের প্রস্তাব অনুমোদন করেছে উপদেষ্টা পরিষদ। আইন দুটি হলো- নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইন ২০০৯ এবং নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন ১৯৯১। একই সঙ্গে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সংশ্লিষ্ট অর্থসংক্রান্ত কয়েকটি আইন সংস্কারের প্রস্তাবও অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর তেজঁগাওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের সভায় এসব প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
সভা শেষে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি জানান, সভায় নির্বাচন কমিশন সংশ্লিষ্ট দুটি আইন সংশোধনের প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়। একটি নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইন ২০০৯ (২০০৯ সালের ৫ নম্বর আইন) সংশোধন, অপরটি নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন ১৯৯১ (১৯৯১ সালের ১৩ নম্বর আইন) সংশোধন।
প্রেস সচিব বলেন, এই দুই আইন সংশোধনের ফলে নির্বাচন কমিশনের কার্যক্রম আরও গতিশীল হবে এবং নির্বাচন পরিচালনায় দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা যাবে। বিশেষ করে নির্বাচনী দায়িত্বে অবহেলা করলে শাস্তির বিধান আরও স্পষ্ট হবে।
শফিকুল আলম জানান, নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন ১৯৯১-এর সংশোধনে ধারা ২, ধারা ৫ ও ধারা ৬-এ গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনা হয়েছে। এর মধ্যে নির্বাচন কর্মকর্তার সংজ্ঞা নতুনভাবে নির্ধারণ, শৃঙ্খলামূলক শাস্তি সংক্রান্ত ধারা হালনাগাদ এবং নতুন উপধারা সংযোজন ও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
অন্যদিকে, উপদেষ্টা পরিষদ এনবিআরের উদ্যোগে প্রণীত ‘অর্থসংক্রান্ত কতিপয় আইন (দ্বিতীয় সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫’-এর খসড়ার নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে। এর আওতায় মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন ২০১২ সংশোধন করে নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে বিশেষ আদেশ দ্বারা ভ্যাট অব্যাহতি প্রদানের বিধান করা হয়েছে। পাশাপাশি আয়কর আইন ২০২৩-এ সংশোধনের মাধ্যমে সরকারি সিকিউরিটি বা অনুমোদিত সিকিউরিটিতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কোম্পানি করদাতার উৎসে কর ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে।
এছাড়া বাণিজ্যিকভাবে পরিচালিত বাস ও পরিবহন খাতে কর সংগ্রহকে চূড়ান্ত করযোগ্য আয় হিসেবে গণনা করার বিধান সংযোজন করা হয়েছে।
প্রেস সচিব আরও জানান, বৈঠকে সংস্কার কার্যক্রম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। সভায় জানানো হয়, পূর্ববর্তী ব্যাচে গৃহীত ১২১টি সংস্কার প্রস্তাবের মধ্যে অতি গুরুত্বপূর্ণ ৭৭টি সংস্কারের অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হয়। এর মধ্যে ২৪টি ইতোমধ্যেই বাস্তবায়িত হয়েছে, ১৪টি আংশিক বাস্তবায়ন হয়েছে, আর বাকিগুলো দ্রুতগতিতে বাস্তবায়নের পথে রয়েছে।
তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা সভায় নির্দেশ দিয়েছেন-প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবিত সংস্কারের পাশাপাশি নিজেদের উদ্যোগে সম্পন্ন সংস্কারগুলোর একটি তালিকা দ্রুত প্রস্তুত করে জমা দেবে। আগামী মাসের মধ্যে এসব তথ্য একত্র করে একটি সংকলন প্রকাশ করা হবে, যাতে সংস্কারের পূর্ণ চিত্র সবার কাছে পৌঁছে দেওয়া যায়।
শফিকুল আলম বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর আলোচনা এখনও চলমান রয়েছে এবং এই আলোচনার মাধ্যমেই রাজনৈতিক মতভিন্নতার শান্তিপূর্ণ সমাধান আসবে। ফেব্রুয়ারিতে জুলাই সনদের ভিত্তিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানসহ কয়েক দফা দাবিতে জামায়াতে ইসলামী ও অন্যান্য দলের বিক্ষোভ কর্মসূচি সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
প্রেস সচিব বলেন, ‘আমরা আশাবাদী যে ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর আলোচনার মাধ্যমেই সবকিছুর সমাধান হবে।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে শফিকুল আলম জানান, চলতি বছর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে প্রধান উপদেষ্টার আমন্ত্রণে রাজনৈতিক দলের নেতারা অংশ নেবেন। তিনি স্পষ্ট করেন, এই সফর বাংলাদেশের নির্বাচন কেন্দ্রিক কোনো মধ্যস্থতা বা আলোচনার জন্য নয়, বরং গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের উদ্দেশ্যে। তিনি বলেন, ‘তারা সরকারের অংশীদার হিসেবে এ ধরনের বৈশ্বিক প্ল্যাটফর্মে অংশ নিচ্ছেন।
ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার ও প্রধান উপদেষ্টার সিনিয়র সহকারী প্রেস সচিব ফয়েজ আহম্মদ উপস্থিত ছিলেন।