জুলাই বিপ্লব বাংলাদেশের ইতিহাসের এক অভূতপূর্ব ঘটনা। গৌরবের, আত্মমর্যাদা ও সম্মানের। এই বিপ্লবের আকাঙ্ক্ষা এবং উদ্দেশ্য ছিল পূর্বের বৈষম্য দূর করে বৈষম্যবিরোধী এক নতুন বাংলাদেশের সূচনা করা। তার জন্য প্রয়োজন ছিল পূর্বের সংবিধান, রাজনৈতিক বন্দোবস্ত, নির্বাচনের গুণগত পরিবর্তন যাতে করে বিপ্লব পরবর্তী বাংলাদেশকে পুনরায় পূর্বের অন্ধকার রেজিমে ফেরত যেতে না হয়।
বর্তমানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আগামী নির্বাচনের সময় ঘোষণা করেছেন। বহুল প্রতীক্ষিত নানাবিধ সংস্কার কোনটাই আলোর মুখ দেখেনি। দেশের যেকোনো আঙ্গিকে কাঠামোগত পরিবর্তনের কোন কিছুই আমরা খুঁজে পাচ্ছি না। এ অবস্থায় অসম্পূর্ণ সংস্কার ও পুরনো বন্দোবস্তের নির্বাচন কেমন হবে তা নিয়ে আশঙ্কা, ভয় এবং হতাশা সমগ্র জাতির।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে আজ শনিবার (১৬ আগস্ট) নেক্সাস ডিফেন্স এবং জাস্টিস NDJ সিরডাপ মিলনায়তন হলে "অসম্পূর্ণ সংস্কার ও পুরনো বন্দোবস্তের নির্বাচন চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা" শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করে।
সেমিনারে বক্তারা বলেন যে, বাংলাদেশের ইতিহাসে যত বিতর্কিত, কলঙ্কিত বা প্রহসনের জাতীয় নির্বাচন এর আগে হয়েছে তা নিয়ে আলোচনা বা সমালোচনা যতই হোক না কেন কোন নির্বাচনই কখনো বাতিল করা হয়নি। অর্থাৎ যেনতেনো উপায়ে একবার নির্বাচন করে ফেললেই ক্ষমতায় যাওয়া যায়। বক্তারা বিগত অত্যন্ত সমালোচিত, বিতর্কিত ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ এর নির্বাচনের সাথে জড়িত সকল আমলা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জড়িত সকল কর্মকর্তা, গোয়েন্দা সংস্থা ও সশস্ত্র বাহিনীর জড়িত সকলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন এবং তাদের তালিকা প্রকাশ্যের জন্য বলেন। একই সাথে তারা যেন কোন ভাবেই বর্তমান সরকারের কোন দায়িত্বে না থাকে তা নিশ্চিত করার জন্য বলেন। বক্তারা বলেন যে নির্বাচন কমিশনের পূর্ণাঙ্গ সংস্কার ব্যতীত কোনভাবেই আগামী নির্বাচন করা ঠিক হবে না এবং সঠিক নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনের যথাযথ সংস্কারের বিষয়ে সকল রাজনৈতিক দলেরই ঐক্যমত্য ছিল। নির্বাচন কমিশন সঠিক ভোটার তালিকা প্রণয়ন, বয়স করতে সকল তরুণদেরকে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা, বিগত আমলের সকল জাল ও ভুতুড়ে ভোটারদেরকে বাদ দেওয়া, বিতর্কিত সীমানা পুনর্নির্ধারণ, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নিজেদেরকে আরও শক্তিশালী করা এসব বিষয়ে তেমন অগ্রগতি এখনো দেখা যায়নি। আগামী নির্বাচনে অশিক্ষিত, দুর্বৃত্ত, চাঁদাবাজ, অসৎ ও অপরাধীরা যাতে নির্বাচনে অংশ নিতে না পারে সে বিষয়েও শক্ত কোন পদক্ষেপ এখনো নেয়া হয়নি।
বক্তারা সকলে এক বাক্যে প্রতিধ্বনি করেন যে- প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা ও সশস্ত্র বাহিনী থেকে আওয়ামী লীগের অনুগত ও ভারতের দোসরদেরকে মুক্ত না করতে পারলে কোনভাবেই আগামী নির্বাচন ভালো হবে না, একেবারেই কোন সম্ভাবনা নেই। আওয়ামী লীগের সকল লুট করা টাকা ব্যবহার করে সকল পর্যায়ের আওয়ামী লীগের দোসরা আগামী নির্বাচনে একটা বিপর্যয় সৃষ্টি করবে। কাজেই যেকোনোভাবেই প্রশাসন, আইন শৃঙ্খলা বাহিনী, সশস্ত্র বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে আওয়ামী লীগ মুক্ত করতে হবে অন্যথায় বিপর্যয় অনিবার্য।
একই সাথে বক্তারা বলেন বিগত ১৬ বছরে কোন রাজনৈতিক দলই সুষ্ঠুভাবে তাদের রাজনৈতিক প্রোগ্রাম বা চর্চা করতে পারেননি। দলগুলো সমাবেশ করতে পারেনি, দলে কোন কাউন্সিল হয়নি, দলের ভেতরে কোন নির্বাচন হয়নি, দলের গঠনতন্ত্র বা কাঠামোর কোন পরিমার্জন হয়নি এবং দলগুলো এখনো ঠিকমতো গোছানো হয়নি। বস্তুত বিগত ১৬ বছরে হত্যা গণহত্যা, জুলুম নির্যাতন, হামলা মামলার কারণে দলগুলো অনেকটা গুপ্ত রাজনীতি করেছে। কাজেই রাজনৈতিক দলগুলোকেও বর্তমানের মুক্ত পরিবেশে এ সকল কাজগুলো সমাপ্ত করার জন্য বক্তারা অনুরোধ করেন।
সেমিনারের সভাপতিত্ব করেন নেক্সাস ডিফেন্স অ্যান্ড জাস্টিস (NDJ) এর সভাপতি, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ হাসান নাসির (অবঃ)। কী নোট পেপার উপস্থাপন করেন- নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি, SIPG সাউথ এশিয়ান ইনস্টিটিউট অফ পলিসি এন্ড গভর্নেন্স এর পরিচালক – অধ্যাপক এসকে তৌফিক এম হক, প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কবি ও দার্শনিক – ফরহাদ মজহার।
অতিথি আলোচক হিসেবে আরও বক্তব্য রাখেন- সাবেক সচিব ও রাজনীতিবিদ এ এফ এম সোলায়মান চৌধুরী, বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তর আমীর জনাব সেলিম উদ্দীন , NSU, বিজনেস স্কুল এর ডিন – অধ্যাপক ওয়ারেসুল করিম, NSU, DHP এর চেয়ারম্যান – অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান , মানারাত ইন্টা. ইউনিভার্সিটি উপাচার্য ও বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির সাবেক চেয়ারম্যান – প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আবদুর রব, সুপ্রিম কোর্টের বিজ্ঞ আইনজীবি – এডভোকেট মহসীন রশীদ, সুপ্রিম কোর্ট এর এডভোকেট – আবু হেনা রাজ্জাকী, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) এর সহ সভাপতি – রাশেদ প্রধান, গনঅধিকার পরিষদের মুখপাত্র – ফারুক হাসান, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর – এডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, সাবেক কূটনীতিক – সাকিব আলি, সাবেক সচিব – কাশেম মাসুদ, মেজর জিয়াউল হক এর মা – জাহানারা বেগম, সাংবাদিক নেতা (DUJ) এর সভাপতি – শহীদুল ইসলাম, বিশিষ্ট আইনজীবী ও গণমুক্তি জোট এর চেয়ারম্যান – ড. শাহরিয়ার ইফতেখার ফুয়াদ, সাংবাদিক ও কলাম লেখক – সাদেক রহমান, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির এর কেন্দ্রীয় পাবলিক রিলেশন সম্পাদক এসএম তানভীর উদ্দিন, জাতীয় বিপ্লবী পরিষদ এর সহকারী সদস্য সচিব – গালীব ইহসান, বিচারিক হত্যাকান্ডের শিকার মাওলানা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর পুত্র শামীম সাইদী, পাবলিক রিলেশন্স এক্সপার্ট ও পরামর্শক – আলী আহমেদ তাহকীক, ব্রি: জে: এ টি এম জিয়াউল হাসান, কর্ণেল মোহাম্মদ শাহনূর রহমান (অব), লে কর্ণেল ফেরদৌস আজিজ (অব), কর্ণেল জাকারিয়া হোসাইন (অব), নেক্সাস ডিফেন্স এন্ড জাস্টিস এর প্রধান সমন্বয়ক – মেজর রেজাউল হান্নান শাহীন (অব), সাবেক কমান্ডার খন্দকার ইলিয়াস কাঞ্চন, লে কমান্ডার মশিউর (অব) সহ আরো উপস্থিত ছিলেন সশস্ত্র বাহিনীর ঊর্ধ্বতন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাগন।
সবাইকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন NDJ সেক্রেটারী-জেনারেল লেঃ কর্নেল হাসিনুর রাহমান, বীর প্রতিক (বরখাস্ত)।
উল্লেখ্য, নেক্সাস ডিফেন্স অ্যান্ড জাস্টিস (NDJ) একটি প্রিমিয়ার নীতি-গবেষণা প্রতিষ্ঠান, যা বাংলাদেশের নিরাপত্তা খাতে প্রমাণভিত্তিক বিশ্লেষণ ও অংশগ্রহণমূলক সংলাপের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণকে সমৃদ্ধ করার লক্ষ্যে কাজ করে। সংস্থাটি নিরাপত্তা নীতিমালা, সামরিক সংস্কার ও জাতীয় স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে নিবেদিত।