বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে একের পর এক যান্ত্রিক ত্রুটির ঘটনা ঘটছে। কোনো উড়োজাহাজ মেরামতের পর উড্ডয়ন করছে, আবার কোনোটা গ্রাউন্ডেড করা হচ্ছে। নিয়মিত শিডিউল বিপর্যয়ের পাশাপাশি বাতিল হচ্ছে ফ্লাইট। এর খেসারত দিতে হচ্ছে যাত্রী ও বিমান কর্তৃপক্ষকে।
গত এক মাসে দেশি-বিদেশি রুটে অন্তত ৯টি উড়োজাহাজে বিভিন্ন ধরনের ত্রুটি শনাক্ত হয়েছে। যদিও বড় ধরনের দুর্ঘটনা এড়ানো গেছে, তবে এসব ঘটনায় যাত্রীসেবা ও রক্ষণাবেক্ষণ প্রক্রিয়া নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে।
বিমানের তথ্য অনুযায়ী, গত ৩০ দিনে আবুধাবি, ব্যাংকক, সিঙ্গাপুর ও কুয়ালালামপুরসহ একাধিক রুটে মাঝ আকাশে বা উড্ডয়নের আগে সমস্যা দেখা দিয়েছে। কোথাও টয়লেট বিকল, কোথাও ইঞ্জিন ত্রুটি, আবার কোথাও রানওয়েতে আটকে পড়েছে উড়োজাহাজ। এতে যাত্রীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা, সংযোগ ফ্লাইট মিস এবং গন্তব্যে যেতে না পারার ঘটনা ঘটেছে।
রোববার (১০ আগস্ট) রোমের লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি বিমানবন্দরে একটি বোয়িং ড্রিমলাইনার ডানার ফ্ল্যাপ ত্রুটির কারণে 'গ্রাউন্ডেড' হয়। লন্ডন থেকে যন্ত্রাংশ এনে মেরামতের আগে ২৬২ যাত্রীকে হোটেলে রাখা হয়। পরদিন সোমবার (১১ আগস্ট) ড‍্যাশ-৮ মডেলের একটি অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট কেবিনের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় ২০ মিনিট উড়ে ঢাকায় ফিরে আসে।
আগস্টের শুরুর দিকেও তিনটি উড়োজাহাজে ত্রুটি দেখা দেয়। এরমধ্যে ৬ আগস্ট ব্যাংককগামী বোয়িং ৭৩৭ ইঞ্জিন কম্পনের কারণে ফিরে আসে, ৭ আগস্ট আবুধাবিগামী বোয়িং টয়লেট বিকল হয়ে ঢাকায় ফেরে এবং ৯ আগস্ট সিঙ্গাপুর থেকে ফেরার পথে বোয়িংয়ে সমস্যা হয়।
গতকাল ১২ আগস্ট ঢাকা থেকে কুয়েত ও দুবাইয়ের দুটি ফ্লাইটই পরিচালিত হওয়ার কথা ছিল বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজ দিয়ে। উড়োজাহাজ সংকটে উভয় ফ্লাইটই বাতিল হয়েছে । এর মধ্যে ঢাকা-কুয়েত রুটের বিজি ৩৪৩ ফ্লাইটটি ছিল বিকেল ৩ টা ৪৫ মিনিটে । আর ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে দুবাইগামী ফ্লাইটটি ছিল বিকেল ৫টা ৫ মিনিটে ।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের জনসংযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) এ বি এম রওশন কবীর ইউএনবিকে জানান, গতকাল ১২ আগস্ট বাতিল হওয়া কুয়েত ও দুবাইয়ের ফ্লাইটটি আগামীকাল যাবে । ঢাকা-কুয়েত রুটের বিজি ৩৪৩ ফ্লাইটটি আগামীকাল (১৩ আগস্ট )সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টায় যাবে। আর ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে দুবাইগামী ফ্লাইটটি আগামীকাল (১৩ আগস্ট) একই সময়ে বিকাল ৫টা ৫ মিনিটে ছেড়ে যাবে। নতুন সময়সূচি যাত্রীদের জানানো হচ্ছে ।
কেন ২ টি ফ্লাইট বাতিল করা হলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, উড়োজাহাজ সংকট। কারণ রোমে যে ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজটি গ্রাউন্ডেড আছে সেটি উড্ডয়ন উপযোগী করতে ১২ আগস্ট বিমানের নিজস্ব ৫ জন প্রকৌশলী গেছেন । আশা করা যাচ্ছে, ঐদিন সন্ধ্যা নাগাদ উড়োজাহাজটি উড্ডয়ন উপযোগী হবে।
বিমানের ফ্লাইটে একের পর এক যান্ত্রিক ত্রুটি বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যাত্রীদের নিরাপত্তা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পায় এবং ত্রুটি সম্পূর্ণ সমাধান না হওয়া পর্যন্ত উড়োজাহাজ আকাশে ওঠে না।
এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব ঘটনা আকস্মিক নয়; বরং না হওয়ায় ছোট ত্রুটি বড় ঝুঁকিতে পরিণত হচ্ছে।
বিমানের পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সদস্য ও আরেক এভিয়েশন বিশ্লেষক কাজী ওয়াহিদুল আলম ইউএনবিকে বলেন, একের পর এক যান্ত্রিক ত্রুটি ঘটনা ঘটছে এটি সত‍্যি। বহরের বেশির ভাগ উড়োজাহাজ অনেক পুরনো হওয়ায় সমস্যা নিয়মিত দেখা দিচ্ছে। এসব ত্রুটি বিমান শনাক্ত করে আগে থেকেই ব‍্যবস্থা নিতে হবে। আরও তদারকি বাড়াতে হবে। তবে এসব ত্রুটি প্রতিষ্ঠানটির ভাবমূর্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
তিনি আরও বলেন, যেহেতু উড়োজাহাজ গুলো পুরনো, তাই নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ও মান নিয়ন্ত্রণ পরীক্ষা করতে হবে। ইন্জিনিয়ার ও পাইলট নিয়োগে সজনপ্রীতি করা যারে না। যোগ্য লোক নিয়োগ দিতে হবে।
জুলাইয়েও কয়েকটি বড় ধরনের ত্রুটি ধরা পড়ে, যার মধ্যে দুবাই ও শারজায় ড্রিমলাইনার ও বোয়িং উড়োজাহাজ গ্রাউন্ডেড হওয়ার ঘটনা রয়েছে।
বর্তমানে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বহরে রয়েছে ১৯টি উড়োজাহাজ। এর মধ্যে ১৪টি যুক্তরাষ্ট্রের বোয়িং এবং ৫টি কানাডার ড্যাশ-৮ কিউ৪০০ মডেলের। বোয়িংয়ের উড়োজাহাজগুলোর মধ্যে রয়েছে: ৪টি বোয়িং ৭৩৭-৮০০,৪টি বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর, ৪টি বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার,২টি বোয়িং ৭৮৭-৯ ড্রিমলাইনার।
বিমান সুত্রে জানা যায়, যাত্রী ভোগান্তি কমাতে দুটি উড়োজাহাজ লিজ নেওয়ার প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে রয়েছে, পাশাপাশি নতুন ক্রয় পরিকল্পনাও হাতে নেওয়া হয়েছে।