জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক কার্যালয়ের (ওএইচসিএইচআর) প্রকাশিত প্রতিবেদনে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ান (র‍্যাব) বিলুপ্ত, বিজিবিকে সীমান্তে রাখাসহ বিভিন্ন সুপারিশের বিষয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। গতকাল র‍্যাবের বিলুপ্তি ও পুলিশসহ ৫ খাতে সংস্কারের সুপারিশ করেছে ওএইচসিএইচআর।

বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে বিদেশি নাগরিকদের জন্য অন অ্যারাইভাল ও ট্রানজিট ভিসা আবেদনের সুযোগ দিয়ে করা অনলাইন অ্যাপ উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।

জাতিসংঘ র‍্যাব বিলুপ্তিসহ বিভিন্ন সুপারিশ ও প্রস্তাবনা নিয়ে আপনাদের অবস্থান কী- জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘একটা প্রস্তাব তারা দিয়েছে, আমরা সবাই বসবো। বসার পর আমাদের যা ডিসিশন (সিদ্ধান্ত) সেটা আমরা জানাবো। তাদের এই তদন্তের বিষয়ে আমরা তো সবাই স্বাগত জানিয়েছি। তারা একটা ভালো কাজ করেছে। আমরা বসে একটা সিদ্ধান্ত নেবো।’

অনুষ্ঠানে বিদেশি নাগরিকদের জন্য অন অ্যারাইভাল ও ট্রানজিট ভিসা আবেদনের সুযোগ দিয়ে করা অনলাইন অ্যাপ সম্পর্কে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, এখন থেকে অনলাইনে ১০ মিনিটে ওয়ান অ্যারাইভ্যাল ভিসা পাবেন বিদেশি নাগরিকরা। ৩০ দিনের জন্য এই ভিসা দেয়া হবে। বর্তমানে ১৪টি দেশের নাগরিকরা বাংলাদেশের ওয়ান অ্যরাইভাল ভিসা পেয়ে থাকেন।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশের ছাত্র-জনতার আন্দোলন ঘিরে গত বছরের ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়ের অনুসন্ধানী দল। বুধবার জেনেভায় এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ফলকার টুর্ক ও অন্যরা।

বুধবার জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশন (ওসিএইচসিআর) জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকারের নৃশংসতা নিয়ে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেই প্রতিবেদনে এ সুপারিশ করা হয়।

প্রতিবেদনে ওসিএইচসিআর বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে তাদের কাজ কেবল সীমান্ত নিয়ন্ত্রণের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার কথা বলেছে এবং ডিজিএফআইকে (প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা পরিদপ্তর) সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার মধ্যে তাদের কাজ সীমাবদ্ধ রাখার পরামর্শ দিয়েছে।

এটি সরকারকে আগে যেসব কর্মকর্তা র‌্যাব, ডিজিএফআই বা ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখায় দায়িত্ব পালন করেছেন কিংবা ২০২৪ সালের আন্দোলন বা এর আগে অন্য কোনো আন্দোলন দমনে ভূমিকা রেখেছেন, তাদের কাউকে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের জন্য মনোনীত না করতে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের সঙ্গে একমত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

হাইকমিশন এও বলেছে যে আন্দোলনরত জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে প্রাণঘাতী মেটাল লোড করা আগ্নেয়াস্ত্র বা গোলাবারুদ ব্যবহারের নির্দেশ দেওয়া যাবে না। কেবল গুরুতর আঘাত থেকে বাঁচতে বা প্রাণ রক্ষার্থে এটি ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া যাবে।

এটি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষার কাজের অংশ হিসেবে পুলিশসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের প্রাণঘাতী মেটাল লোড করা শটগানসহ সজ্জিত হওয়া বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে। সেইসঙ্গে পুলিশ কর্তৃক গণহারে মামলা ও গ্রেপ্তার বন্ধেরও আহ্বান জানানোর পাশাপাশি জাএকটি স্বাধীন নির্যাতন প্রতিরোধ ও আটক পর্যবেক্ষণ কর্মসূচি প্রতিষ্ঠা ও নির্যাতনবিরোধী ঐচ্ছিক প্রটোকল মেনে চলার বিষয়টিও বিবেচনার কথা জানানো হয়েছে।

পুলিশ বাহিনীতে নিয়োগ, পদোন্নতি, বদলি ও দায়িত্ব থেকে সরানোর প্রক্রিয়ার বিষয়ে জাতিসংঘ বলেছে যে এগুলি সরকার, বিরোধী দল এবং নাগরিক সমাজসহ স্বাধীন সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত একটি জাতীয় পুলিশ কমিশনের নেতৃত্বে হওয়া উচিত। এটি পুলিশি কার্যক্রম তত্ত্বাবধানের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়/পুলিশ বাহিনীর চেইন অব কমান্ডের বাইরে একটি স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠনেরও পরামর্শ দিয়েছে।