বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দায়িত্বে থাকা সেনাবাহিনীর অর্ধেক সদস্যকে সাময়িকভাবে মাঠ থেকে প্রত্যাহার করা হচ্ছে।

মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত কোর কমিটির বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বুধবার (৫ নভেম্বর) থেকে সেনাসদস্যদের অর্ধেককে বিশ্রাম ও নির্বাচনকালীন প্রশিক্ষণের জন্য সরিয়ে নেওয়া হবে। পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে বাকি সদস্যদেরও একইভাবে বদলি করা হবে। সভায় উপস্থিত এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, “বিশ্রাম ও প্রশিক্ষণের প্রয়োজনেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এখন সেনাবাহিনী নিজেদের মতো করে বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করবে।”

সভায় আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় নির্বাচন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, সামাজিক মাধ্যমে উসকানিমূলক বক্তব্য, পুলিশের ভূমিকা ও হারানো অস্ত্র উদ্ধারের অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী লুৎফে সিদ্দিকী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব নাসিমুল গনি, আইজিপি বাহারুল আলম, এবং বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রধানরা।

গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর, দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ১৭ সেপ্টেম্বর সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীকে বিশেষ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা দেওয়া হয়।

তবে দীর্ঘ সময় ধরে সেনাবাহিনী মাঠে থাকার ফলে মানবসম্পদ ও পরিচালনাগত জটিলতা তৈরি হয়েছে, যা এই পুনর্বিন্যাস সিদ্ধান্তের অন্যতম কারণ বলে জানা গেছে। একই সঙ্গে সরকার মাঠে সেনা উপস্থিতি কমালে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কতটা স্থিতিশীল থাকে— তা পর্যবেক্ষণ করতেও চায়।

ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পুড়ে যাওয়া কার্গো কমপ্লেক্স থেকে সাতটি অস্ত্র নিখোঁজের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানিয়েছেন, “চুরি হয়েছে কিনা— তা তদন্তের পরই নিশ্চিত হওয়া যাবে। তদন্তে চার-পাঁচটি দেশের বিশেষজ্ঞ যুক্ত হয়েছেন।”

গত ১৪ মাসে ৪০টির মতো বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ এসেছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “যেই হোক— আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বা অন্য কেউ— প্রত্যেককে আইনের আওতায় আনা হবে।”

নির্বাচনের নিরাপত্তা বাড়াতে ৪০ হাজার বডি ক্যামেরা কেনার প্রস্তাব অনুমোদন পেয়েছে, তবে অর্থ বরাদ্দে দেরি হচ্ছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা দ্রুত অর্থ ছাড়ের নির্দেশ দিয়েছেন।

অন্যদিকে, পুলিশ, র‌্যাব ও আনসারের পোশাকের রং পরিবর্তনের প্রস্তাবও আলোচনায় আসে, তবে তা পুনর্বিবেচনার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

ভারতীয় বংশোদ্ভূত ইসলামী বক্তা ড. জাকির নায়েককে আপাতত বাংলাদেশে আসার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। কোর কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, “নির্বাচনের আগে তার সফরে বিপুল জনসমাগমের আশঙ্কা রয়েছে, যা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হতে পারে।” নির্বাচনের পর তার সফর বিবেচনা করা হবে।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনে দায়িত্বে থাকা ওসিদের অনেককে বদলি করা হবে।

তিনি আরও বলেন, “যদি কোনো পুলিশ সদস্য অবৈধ সুবিধা দেয় বা রাজনৈতিক পক্ষপাত দেখায়, তাকে সঙ্গে সঙ্গেই আইনের আওতায় আনা হবে।”