বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ৪ সদস্য বিশিষ্ট একটি প্রতিনিধি দল আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমানের নেতৃত্বে ইউরোপিয়ান পার্লামেন্ট-এর উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দলের সাথে ঢাকাস্থ ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের দূতাবাসে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে মিলিত হন। আমীরে জামায়াতের সঙ্গে ছিলেন নায়েবে আমীর সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোঃ তাহের, সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, আমীরে জামায়াতের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মাহমুদুল হাসান। মঙ্গলবার এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
ইউরোপিয়ান পার্লামেন্ট-এর প্রতিনিধি দলের সভাপতি মুনির সাতৌরী, লুক্সেমবার্গ (ইপিপি) ইসাবেলা ভিয়েডার-লিমা, পোল্যান্ডের (ইসিআর) আরকাদিুস মুলারচিক, এস্তোনিয়ার (রিনিউ ইউরোপ) উর্মাস পায়েট, নেদারল্যাণ্ড এর (দ্য গ্রিন্স) কাতারিনাভিয়েইরাসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে এক সংক্ষিপ্ত প্রেস ব্রিফিং এ নায়েবে আমীর সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোঃ তাহের বলেন, আমাদের সাথে তাদের খুব সৌহার্দ্যপূর্ণ আলোচনা হয়েছে। বর্তমান বাংলাদেশের যে অবস্থা সে বিষয়ে কথা হয়েছে। ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের ব্যাপারে কথা হয়েছে। নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কিনা? কিভাবে হবে? এসব বিষয় তারা মূলত কথা বলেছেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে ৫৪ বছর পরে একটা পরিবর্তনের বিশেষ অপর্চুনিটি এখানে আসছে। আমরা রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্যবদ্ধভাবে এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনার জন্য সকলেই আন্তরিক এবং সচেতন। এই সরকার যে কমিটমেন্ট দিয়েছিলো, তারা একটা সংস্কার করবে, বিচার দৃশ্যমান করবে এবং একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে; যেটাকে আমরা ফ্রি, ফেয়ার একটি ইলেকশন বলে মনে করি।
ডা. তাহের বলেন, আপনারা জানেন সরকার একটি এনসিসি করেছিল। সেখানে আমরা অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ঐকমত্য পোষণ করেছি। এসব বিষয়ে বাংলাদেশে একটি ব্যাপক ডেভেলপমেন্ট হয়েছে এবং দলগুলোর মধ্যে একটি সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ তৈরি হয়েছে। কিন্তু এখন একটা সমস্যা হল আমরা যেসব বিষয়ে ঐকমত্য পোষণ করতে পেরেছি সেগুলো কীভাবে বাস্তবায়ন হবে-এটা নিয়ে কিছুটা মতপার্থক্য তৈরি হয়েছে। আপনারা জানেন আমরা ৩১টি দল আলোচনায় অংশ নিয়েছিলাম। এর মধ্যে ২৬টি দল পিআর-এর পক্ষে ছিল যার মধ্যে ইসলামিস্ট, রাইটিস্ট এবং লেফটিস্ট দলসমূহ আছে। কিন্তু সেখানে একটি পার্থক্য ছিল এই- কোনো কোনো দল আপার হাউজে পিআর চাচ্ছে আর কিছু দল আপার ও লোয়ার দুইটিতে পিআর চাচ্ছে। এর মধ্যে আমরা জামায়াতে ইসলামী উভয় কক্ষে পিআর চাচ্ছি। এ চাওয়ার পেছনে আমাদের দুটি যুক্তি হল বিগত ৫৪ বছরে ট্রেডিশনাল পদ্ধতিতে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। আর বিগত ১৫ বছরে ৩টি নির্বাচনের কথা তো উল্লেখ করার কোনো প্রয়োজন নেই।
তিনি আরও বলেন, পলিটিক্যাল পার্টিগুলোর যে কালচার, মেন্টালিটি, যে কৌশল বা অপকৌশল জোর করে কেন্দ্র দখল করে এমপি হয়ে ক্ষমতায় যাওয়া। এই মাইন্ডসেটটাকে পরিবর্তন করা অত্যন্ত জরুরি। কারণ আমরা দেখছি এত অভিজ্ঞতার পরে, এত হত্যাকা-ের পরে, এত রক্ত দেয়ার পরেও আমাদের মাইন্ডে খুব বেশি একটা পরিবর্তন হচ্ছে তা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। এটার সবচেয়ে বড় প্রমাণ হচ্ছে ডাকসু এবং জাকসু নির্বাচনে। এত ফেয়ার ইলেকশন হয়েছে এবং বিকেল ৪টায় পর্যন্ত ইলেকশনে অংশগ্রহণ করেছে। তার পরেই বর্জন করেছে। যখন দেখছে হেরে যাবে তখনই বললো ইলেকশন মানি না।
এর দ্বারা বুঝা যায় ফেয়ার ইলেকশন তারা পছন্দ করছে না। জাকসুর ক্ষেত্রে দেখা গেছে ৭২ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে রেজাল্ট দেওয়ার ক্ষেত্রে তারা গড়িমসি করেছে। সকলের চোখের সামনে বিধায় তারা ফল উল্টাতে পারেনি। কিন্তু এটিচিউড তো রয়ে গেছে ফল উল্টে দেওয়ার। জাতীয় নির্বাচনেও এমন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
তাই আমরা বলেছি, পিআর সিস্টেম যদি হয়, সেখানে এককভাবে কোনো প্রার্থী থাকবে না কোনো এলাকায় এবং সে কেন্দ্র দখলের ইন্ট্রেস্ট হারিয়ে ফেলবে টাকা দিয়ে। এজন্য আমরা কমপক্ষে একটি বার পরীক্ষামূলকভাবে পিআর সিস্টেমে নির্বাচন চাই। যদি এটা ভালো না হয় তবে নেকস্ট টাইমে আমরা এটা চেঞ্জ করি। এজন্য আমরা পিআর চাচ্ছি বোথ হাউজে। অধিকাংশ লোক পিআরের পক্ষে। তারাও বলেছেন, তাদের অধিকাংশ দেশেই তো পিআর সিস্টেম। আমাদের কথা তারা সহজেই বুঝছে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মেয়াদ বাড়ালে যে ঐকমত্যে পৌঁছানো যাবে এটা আমি মনে করি না। ঐকমত্যে পৌঁছানোর জন্য একঘন্টাই যথেষ্ট। তারপরেও বাড়ানো হয়েছে। এটার দু’টো কারণ হতে পারে সিনসিয়ারলি আরও কিছু বের হয় কিনা। সেজন্য হতে পারে। বাট আই ডাউট। যা বের হবার তা বের হয়েছে। বাকীটা ইচ্ছার উপর নির্ভর করছে সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করছে। যারা চাচ্ছে না এটার রিফর্ম হোক, আইনি ভিত্তি হোক এবং এর ভিত্তিতে আগামী নির্বাচন হোক, মূলত তারাই এখন এ সমস্যা তৈরি করছে। এই এটিচিউড যদি চেঞ্জ না হয়, তাহলে এক মাস কেন, নির্বাচনের পর পর্যন্ত যদি মেয়াদ থাকে, তাহলেও হবে না। কিন্তু আমার সন্দেহ হয়, এটা টাইম ডিলে করার একটা কৌশল। এ প্রশ্নটি এখন মানুষের ভিতর আছে।
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা অলরেডি দুই/তিন মাস ধরে কনসেনসাস কমিটির সাথে কাজ করছি, আমরা ঐকমত্যেও পৌঁছে গেছি। সুতরাং এটাকে আইনি ভিত্তি দেওয়া শুধু সিদ্ধান্তের ব্যাপার। আরও একবার দেখা যাবে আমরা এক মাস ঘুড়েঘুরে এক মাস পেছনে গেছি। একই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছি। কিন্তু আরও একটি মাস চলে গেল আমাদের কাছ থেকে।
তিনি আরও বলেন, আমরা নির্বাচনে যাব না এটা আমরা বলিনি। আমরা মনে করি পিআর পদ্ধতিটাই উত্তম এবং সে দাবি করছি। আমরা যুক্তি দিচ্ছি, আমরা বুঝানোর চেষ্টা করছি। আমরা আশা করছি আমাদের যুক্তি মানবে এবং সে ভিত্তিতেই আমরা নির্বাচনে যাবো।
আমরা আপার এবং লোয়ার উভয় কক্ষে পিআর চাচ্ছি। আর আলোচনার টেবিলে এ সমস্যা সমাধান করা সম্ভব। আমরা আলোচনার টেবিলে যাওয়ার পক্ষে এবং আলোচনা করারও পক্ষে। তবে এর জন্য উদার মানসিকতা এবং নিরপেক্ষতা মানসিকতার প্রয়োজন।