বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত অস্ট্রেলিয়ান ডাটা বিজ্ঞানী ড. আবদুল্লাহি চৌধুরী পরিচালিত একটি আন্তর্জাতিক গবেষণা উদ্যোগ বিশ্বব্যাপী প্রবাল প্রাচীর সংরক্ষণে বিপ্লব ঘটাতে চলেছে, যার সরাসরি সুবিধা পেতে পারে বাংলাদেশের সেন্ট মার্টিন দ্বীপের বিপন্ন প্রবাল প্রাচীর।
University of South Australia (UniSA) এবং কুইন্সল্যান্ড ও ভিক্টোরিয়ার গবেষকদের সহযোগিতায় পরিচালিত গবেষণা একটি রিয়েল-টাইম গ্লোবাল মনিটরিং সিস্টেম তৈরি করছে, যা দূর অনুধাবন প্রযুক্তি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ( AI ), মেশিন লার্নিং, এবং ভূ-তথ্য ব্যবস্থা ( GIS) সংযুক্ত করে প্রবাল সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
বিশ্বব্যাপী সংকট এবং বাংলাদেশের উপর প্রভাব: বিশ্বব্যাপী প্রবাল প্রাচীর ভয়াবহ চাপের মুখে, যেখানে মাত্র গত দুই বছরে ৭৫% প্রবাল প্রাচীর ব্লিচিং-এর সম্মুখীন হয়েছে। ২০১৬ সাল থেকে গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ মারাত্মক ব্লিচিং-এর শিকার, যা জলবায়ু পরিবর্তন এবং অন্যান্য পরিবেশগত চ্যালেঞ্জের ফলে আরও জটিল হচ্ছে। এই সংকট বাংলাদেশেও ছড়িয়ে পড়ছে, বিশেষ করে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ, যা দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ।
একটি বিপ্লবী পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা: এই উন্নত প্রযুক্তি সমন্বিত ব্যবস্থা আন্ডারওয়াটার ছবি, স্যাটেলাইট ইমেজ, সেন্সর রিডিং এবং অন্যান্য তথ্য সংগ্রহ করে একক কেন্দ্রীভূত ড্যাশবোর্ডে উপস্থাপন করবে। এই সিস্টেম গবেষক, সংরক্ষণবিদ এবং নীতিনির্ধারকদের জন্য প্রবালের ব্লিচিং পরিস্থিতি, রোগ প্রাদুর্ভাব, কোরাল বৃদ্ধির হার এবং সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্যের তথ্য প্রদান করবে।
ড. আবদুল্লাহি চৌধুরী জানান, AI -ভিত্তিক বিশ্লেষণ প্রবাল সংরক্ষণের ক্ষেত্রে বাস্তবসম্মত ও তাৎক্ষণিক অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করবে। বর্তমানে প্রবাল স্বাস্থ্য বিশ্লেষণের জন্য পৃথক মডেল ব্যবহার করা হচ্ছে, তবে এগুলো সমন্বিত নয়। আমাদের নতুন ব্যবস্থা প্রবাল প্রাচীরের একটি সম্পূর্ণ ও রিয়েল-টাইম চিত্র দেবে, যা দ্রুত সংরক্ষণ পদক্ষেপ নিতে সাহায্য করবে।
বাংলাদেশের সেন্ট মার্টিন দ্বীপের জন্য বিশেষ সুবিধা: বিশ্বব্যাপী প্রবাল সংরক্ষণ ছাড়াও, গবেষণাটি সেন্ট মার্টিন দ্বীপের জন্য উল্লেখযোগ্য সুবিধা নিয়ে আসতে পারে।
সেন্ট মার্টিন দ্বীপের প্রবাল প্রাচীর বর্ধিত সমুদ্র তাপমাত্রা, দূষণ এবং অনিয়ন্ত্রিত পর্যটন জনিত কারণে ধ্বংসের সম্মুখীন হচ্ছে। উন্নত অও-ভিত্তিক পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা বাংলাদেশের বিজ্ঞানী ও নীতিনির্ধারকদের প্রবাল সংরক্ষণে সহায়তা করতে পারে।
রিয়েল-টাইম মনিটরিং ও প্রতিকার: সেন্ট মার্টিন দ্বীপের জলজ পরিবেশ পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ করা যাবে এবং সংকট দেখা দিলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হবে।
প্রমাণভিত্তিক নীতিনির্ধারণ: গবেষণার তথ্য সরকারের পরিবেশ সংরক্ষণ নীতিগুলোকে সমর্থন করতে সহায়ক হবে।
স্থানীয় গবেষণা সক্ষমতা বৃদ্ধি: বাংলাদেশের সামুদ্রিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সাথে একীভূত হয়ে গবেষকরা উন্নত AI 3 GIS প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারবেন।
কোরাল IVF ও তাপপ্রবাহের প্রভাব: গবেষণা কোরাল IVF প্রযুক্তি, প্রবালের শিশুকালীন বৃদ্ধি, তাপপ্রবাহের প্রভাব এবং তাপ-সংবেদনশীল প্রবালের জীবনচক্র পর্যবেক্ষণ করতে সাহায্য করবে।
টেকসই পর্যটন ব্যবস্থাপনা: প্রবাল প্রাচীর সংরক্ষণ করে দীর্ঘমেয়াদী টেকসই পর্যটন ব্যবস্থার বিকাশ সম্ভব হবে।
সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্যের সুরক্ষা: এ উদ্যোগ বাংলাদেশে সামুদ্রিক পরিবেশ সংরক্ষণে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে।
উপকূলীয় জীবিকার সংরক্ষণ: প্রবালের উপর নির্ভরশীল মৎস্যজীবী ও পর্যটন শিল্পের কর্মসংস্থান রক্ষা করা সম্ভব হবে।
এই প্রযুক্তি ন্যাশনাল ওশেনিক অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফেরিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ( NOAA), মন্টেরে বে অ্যাকোয়ারিয়াম রিসার্চ ইনস্টিটিউট ( MBARI ), হাওয়াই আন্ডারসি রিসার্চ ল্যাবরেটরি ( HURL ) এবং অস্ট্রেলিয়ার CSIRO সহ বিভিন্ন সংস্থার ডেটাসেট একত্রিত করবে।
প্রবাল সংরক্ষণের ভবিষ্যৎ প্রযুক্তি ও সহযোগিতার সংযোগস্থলে রয়েছে। আমাদের গবেষণা এই প্রযুক্তিগুলোর সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করে আগামী প্রজন্মের জন্য প্রবাল প্রাচীর সংরক্ষণের একটি পথনকশা তৈরি করবে। গবেষণাটি Electronics জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।