নির্বাচন কমিশন (ইসি) জনপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ এর খসড়া চূড়ান্ত করেছে। এতে পলাতকদের নির্বাচন থেকে বিরত রাখা এবং বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতার নির্বাচন এড়াতে একক প্রার্থীর নির্বাচনী এলাকায় বিকল্প হিসেবে না ভোট চালুর প্রস্তাব করা হয়েছে।
বুধবার(৩ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে আরপিওতে প্রস্তাবিত পরিবর্তন সম্পর্কে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ। তিনি বলেন, 'আমরা এটি (খসড়া আইন) চূড়ান্ত করে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি।'
খসড়া আইনে, সশস্ত্র বাহিনী-সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী এবং বিমানবাহিনীকে অন্তর্ভুক্ত করতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সংজ্ঞা সম্প্রসারিত করা হয়েছে। এতে পুলিশ, সশস্ত্র পুলিশ ব্যাটালিয়ন, র্যাব, আনসার, বিজিবি এবং কোস্টগার্ডসহ অন্যান্য বিদ্যমান সংস্থার মতো নির্বাচনের সময় আইন প্রয়োগকারী সংস্থা হিসেবে সশস্ত্র বাহিনীকে কাজ করার পথ প্রশস্ত করে।
আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সংজ্ঞায় সশস্ত্র বাহিনীকে আগে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। কিন্তু ২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার তাদের প্রথম মেয়াদে এগুলো বাদ দেয়। ফলস্বরূপ, ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের বিগত তিনটি সাধারণ নির্বাচনে সশস্ত্র বাহিনীকে কেবল স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মোতায়েন করা হয়েছিল।
প্রস্তাবিত সংশোধনী অনুসারে, মনোনয়নপত্রের সঙ্গে একজন প্রার্থীকে আয়কর রিটার্ন, দেশে ও বিদেশে তার সম্ভাব্য আয়ের উৎস, দেশে ও বিদেশে তার নিজের এবং তার উপর নির্ভরশীলদের সম্পত্তির বিবরণী জমা দিতে হবে।
হলফনামায় মিথ্যা তথ্য প্রদানের ফলে মেয়াদকালে যেকোনো সময় তাদের সংসদ সদস্যপদ বাতিল হতে পারে।
প্রস্তাবিত সংশোধনীতে নির্বাচনী নিরাপত্তা জামানত ২০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করা হয়েছে এবং জোট-সমর্থিত প্রার্থীর জন্য জোটের প্রতীক নয়, নিজের দলের প্রতীক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকায় অবস্থিত যেকোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সভাপতি বা পরিচালনা কমিটির অন্য কোনো পদে থাকা ব্যক্তিকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে।
পলাতক ব্যক্তি সম্পর্কে সানাউল্লাহ বলেন, যেকোনো আদালতে পলাতক ঘোষিত ব্যক্তি নির্বাচনের জন্য বা (সংসদের) সদস্য হওয়ার জন্য অযোগ্য হবেন।
'ভোট না দেওয়ার' বিকল্প সম্পর্কে নির্বাচন কমিশনার বলেন, যদি কোনো নির্বাচনী এলাকায় একক প্রার্থী থাকে তবে তাকে একবারের জন্য 'না ভোট দেওয়ার' বিকল্প ব্যবহার করে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে।
খসড়া আরপিওর ১৯ অনুচ্ছেদ অনুসারে, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের পর যদি কেবল একজন প্রার্থী থাকে-তাহলে একমাত্র প্রার্থী এবং 'না ভোট দেওয়ার' বিকল্পের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
'না ভোট দেওয়ার' সংখ্যা প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যার চেয়ে বেশি হলে নতুন তফসিল ঘোষণা করে সেই নির্বাচনী এলাকায় নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তবে পরবর্তী নির্বাচনে ' না ভোট' বিকল্প হিসেবে থাকবে না যদি একজনও প্রার্থী থাকে-তাহলে তাকে নির্বাচিত ঘোষণা করা হবে।
রাষ্ট্রপতির কর্মকর্তার কর্তৃত্ব সম্পর্কে সানাউল্লাহ বলেন, খসড়া আইনে ভোটকেন্দ্রের ভোটগ্রহণ বন্ধ করার জন্য একজন প্রিজাইডিং অফিসারের ক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। তিনি বলেন, 'ভোটকেন্দ্রের ভোটগ্রহণের সার্বিক তত্ত্বাবধানে প্রিসাইডিং অফিসার থাকবেন।'
খসড়া আইন অনুসারে যদি ভোটগ্রহণ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় বা বাধাগ্রস্ত হয় অথবা ব্যালট বাক্স অবৈধভাবে সরিয়ে ফেলা হয়, ধ্বংস করা হয়, হারিয়ে যায় বা এতটাই কারচুপি করা হয় যে ভোটগ্রহণের ফলাফল নিশ্চিত করা যায় না-তাহলে প্রিসাইডিং অফিসার ভোটগ্রহণ বন্ধ করতে পারবেন।