# পাচারের টাকা উদ্ধারে ব্রিটিশ আইনজীবী নিয়োগ করা হয়েছে
আগামী নির্বাচন উৎসবমুখর এবং আউটস্যন্ডিং হবে বলে জানিয়েছেন, প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, আগামী নির্বাচন উৎসবমুখর এবং আউটস্যন্ডিং হবে। কারণ দেশের অধিকাংশ তরুণ প্রথম বার ভোটার হবে। তারা প্রথম বারের মতো ভোট দিবে। গত ১৬টা বছর কোন ভোট হয়নি। দেশের মানুষ ভোট দিতে পারেনি। অনেকে নতুন ভোটার হবেন। অটোমেটিকলি ভোট উৎসবে পরিণত হবে।
তিনি লন্ডন সফরে স্থানীয় আইটিভি এবং বিবিসিকে সাক্ষাৎকার দেন। এর মধ্যে আইটিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারটি লন্ডনে হাইকমিশন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করেছে। আইটিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টা জানান, আওয়ামী লীগের আমলে মূলত ভূয়া ভোট হয়েছে। তা জনগণের প্রতাশা পূরণ হয়নি।
উপস্থাপক প্রশ্ন করেন অনেকেই মনে করেন যে, দেরিতে নির্বাচন হলে বিনিয়োগের ক্ষতি হবে। জবাবে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমি সেরকম মনে করি না। আমি মনে করি বিশ্বের অনেক দেশ থেকে ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগের ব্যাপারে উৎসাহ দেখাচ্ছেন। তারা বাংলাদেশ সফর করছেন। আমরা ইতিমধ্যে বিনিয়োগ সম্মেলন করেছি। বাংলাদেশে চাইনিজ কমার্স মিনিস্টার এসেছেন ব্যবসায়ীদের নিয়ে। সুতরাং সব বিষয়ে কথা চলমান রয়েছে।
নির্বাচন সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে প্রফেসর ইউনূস বলেন, আমি মনে করি একটি আউট স্ট্যান্ডিং নির্বাচন হবে। এটা সম্ভব। কারণ দেশের অধিকাংশ তরুণ প্রথম বারের মতো ভোটার হবে। তারা প্রথম বারের মতো ভোট দিবে। গত ১৬টা বছর কোন ভোট হয়নি। দেশের মানুষ ভোট দিতে পারেনি। অনেকে নতুন ভোটার হবেন। অটোমেটিকলি ভোট উৎসবে পরিণত হবে। কারণ আমরা একটি ফ্রি এন্ড ফেয়ার নির্বাচনের ব্যাপারে অঙ্গীকারবদ্ধ।
তিনি বলেন, আমরা তিনটি এজেন্ডার ব্যাপারে জাতির কাছে অঙ্গীকারবদ্ধ। প্রথমটি হচ্ছে সংস্কার। আমরা সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো সংস্কার এবং বাস্তবায়নের জন্য অনেকগুলো কমিশন গঠন করে দিয়েছি। তারা স্টাডি করছে এবং সুপারিশ করছে। তা প্রতিষ্ঠানগুলো বাস্তবায়ন করবে। এছাড়া সবস্থানে আমরা নতুন সেটআপ দিবো। আমরা সংস্কারকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। তিনি ঐকমত্য কমিশনের কথা উল্লেখ করে বলেন। কমিশন রাজনৈতিকদলগুলোর সাথে কথা বলে সুপারিশ করবে। সব দলের মত নিয়ে জুলাই সনদ করা হবে বলেও জানান।
প্রফেসর ইউনূস জানান আমাদের দ্বিতীয় এজেন্ডা হচ্ছে নির্বাচন। আমরা নির্বাচনের দিকে যাচ্ছি। খুব শিগগিরই নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবো। তিনি বলেন আওয়ামী লীগ দেশে উত্তেজনা তৈরি করছে। এজন্য তারা টাকা খরচ করছে। দেশে অস্থিরতা তৈরি করতে চায়। এজন্য অস্থায়ীভাবে তাদের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তাদের আলোচনায় উঠে আসে আওয়ামী লীগ সরকারের টাকা পাচার এবং উদ্ধারসহ নানা অনুসঙ্গ।
এদিকে বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেন. যুক্তরাজ্যে পাচার হওয়া দেশের অর্থ উদ্ধার করতে অন্তর্বর্তী সরকার ব্রিটিশ আইনজীবী নিয়োগ করা হয়েছে। তিনি বলেন, ব্রিটিশ সরকার এই প্রয়াসে ‘অত্যন্ত সহায়ক’ ভূমিকা পালন করছে।‘এ বিষয়ে তারা যে দ্রুততা দেখিয়েছেন, আমি তার জন্য অনেক প্রশংসা করি।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক দুর্নীতি প্রতিরোধ সমন্বয় কেন্দ্র (আইএসিসিসি) বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার ও যুক্তরাজ্যের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাজে সহায়তার সুযোগ খুঁজছে। বিশেষ করে হাসিনা সরকারের আমলের দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত করতে।
বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের ধারণা, হাসিনার সরকার ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় প্রায় ২৩৪ বিলিয়ন ডলার (১৭৪ বিলিয়ন পাউন্ড) দুর্নীতির মাধ্যমে বিদেশে পাচার হয়েছে। অভিযোগ করা হয়েছে, এসব অর্থের বেশিরভাগই যুক্তরাজ্যে লুকিয়ে রাখা হয়েছে অথবা খরচ করা হয়েছে।
লন্ডনে আইএসিসিসিকে জাতীয় অপরাধ সংস্থা (এনসিএ) আমন্ত্রণ জানায়। এনসিএ’র এক মুখপাত্র বলেছেন, ‘আমরা আন্তর্জাতিক সহায়তার প্রকৃতি সম্পর্কে নিয়মিত মন্তব্য করি না। যদি কোনো তদন্ত শুরু হয়ে থাকে বা কোনো অংশীদারের তদন্তে সহায়তা দেওয়া হয়Ñতা নিশ্চিত করি না। অধ্যাপক ইউনূস সম্প্রতি বাকিংহাম প্যালেসে কিং চার্লসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। দেশটির পার্লামেন্টে বাণিজ্য সচিব জনাথন রেনল্ডসের সঙ্গেও বৈঠক করেন।
রেনল্ডস এক টুইট বার্তায় জানান, তারা ‘অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টির ও সমৃদ্ধির জন্য তাদের পারস্পরিক যৌথ আকাক্সক্ষা’ নিয়ে আলোচনা করেছেন। অধ্যাপক ইউনূস বলেন, তিনি প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে বৈঠক করার ব্যবস্থা করতে পারেননি। টিউলিপ সিদ্দিকের ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং একই নির্বাচনী এলাকার প্রতিবেশী প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার। তিনি বিবিসিকে বলেন, ‘আমি জানি না আমার হতাশ হওয়া উচিৎ, নাকি দুঃখিত হওয়া উচিৎ। এটি একটি হারানো সুযোগ। স্টারমারের সঙ্গে বৈঠক না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা এখনো কোনো ব্যাখ্যা পাইনি। সম্ভবত তিনি অন্য গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যস্ত ছিলেন।
চারদিনের সফর শেষে অধ্যাপক ইউনূস গতকাল শনিবার সকালে ঢাকায় পৌঁছান। সফরকালে একাধিক বৈঠক ঢাকা-লন্ডন সম্পর্কের আরও বিস্তৃত ও গভীরতাকে তুলে ধরে।
যা পেল বাংলাদেশ : অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস চার দিনব্যাপী (১০-১৩জুন) যুক্তরাজ্য সফরকালে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম শুক্রবার দিবাগত রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তার ভেরিফায়েড আইডিতে প্রধান উপদেষ্টার এই যুক্তরাজ্য সফরে বাংলাদেশের পাঁচটি অর্জনের কথা তুলে ধরেন। প্রেস সচিব যে অর্জনের কথা জানালেন সেগুলো হলো-
১. রাজা চার্লসের কাছ থেকে মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার এবং ব্রিটিশ রাজার সঙ্গে ৩০ মিনিটের একান্ত বৈঠক। এটি গত বছরের জুলাই মাসের গণজাগরণ এবং এরপর বাংলাদেশের যুগান্তকারী পরিবর্তনের একটি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি।
২. অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ও দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দলের নেতার মধ্যে ঐতিহাসিক বৈঠক। এটি ষড়যন্ত্রকারীদের জন্য একটি ‘গেম ওভার’ মুহূর্ত।
৩. যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি (এনসিএ) এক শীর্ষ হাসিনা-ঘনিষ্ঠ ব্যক্তির ৩২০টি সম্পদ জব্দ করেছে, যার মূল্য ১৭০ মিলিয়ন ব্রিটিশ পাউন্ড। এনসিএ জানায়, এটি সংস্থাটির ইতিহাসে এককভাবে সর্ববৃহৎ সম্পদ জব্দের ঘটনা। এটি দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তাদের, ব্যবসায়ীদের এবং রাজনীতিবিদদের জন্য একটি স্পষ্ট বার্তা। পাশাপাশি, ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের সম্পদ উদ্ধার প্রচেষ্টার একটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ।
৪. বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ও দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যানসহ কর্মকর্তাদের সঙ্গে ব্রিটিশ মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও কর্মকর্তাদের একাধিক বৈঠক, যা ভবিষ্যতে সম্পদ পুনরুদ্ধারের জন্য বৈশ্বিক সহযোগিতার ভিত্তি স্থাপন করতে সহায়ক হবে।
৫. রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের পথে নতুন আশার আলো।