বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশকে বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছেন দক্ষিণ কোরিয়ার ইয়াংওয়ান করপোরেশনের চেয়ারম্যান কিহাক সাং। সোমবার (৭ এপ্রিল) বাংলাদেশ বিনিয়োগ সম্মেলনে যোগ দিতে আসা প্রায় ৭০ জন ব্যবসায়ী কোরীয় রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (কেইপিজেড) পরিদর্শনে গেলে তিনি এ আহ্বান জানান।

WhatsApp Image 2025-04-07 at 20.26.32_1e2e0cb7

বাংলাদেশে কাজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, আনোয়ারা ইপিজেড হলো প্রাইভেট সেক্টরে একমাত্র অপারেশনাল ইপিজেড। আড়াই হাজার একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত এই ইপিজেডে বর্তমানে ৮ শো একর জায়গায় ৪৮টি ভবনে ১৫টি কারখানা উৎপাদনে রয়েছে। প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষা করে আরো কয়েকশো একর জমিতে কারখানা তৈরীর সুযোগ রয়েছে।

‘কিন্তু ভূমী রেজিষ্ট্রেশনসহ ছোট-খাট কিছু জটিলতার কারনে বিপুল সম্ভাবনা থাকা সত্বেও এই ইপিজেডের সক্ষমতা পুরোপুরি ব্যবহার করা যায় নি। তবে বর্তমানে সব সংকট কেটে গেছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে আরোয়ারা কেইপিজেডের সব সক্ষমতা ব্যবহার করা যাবে। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের এই পরিদর্শন সেই সম্ভবনা আরো এক ধাপ এগিয়ে গেলো, বলেন তিনি।

WhatsApp Image 2025-04-07 at 20.28.46_cadcf722

চীনের একজন বিনিয়োগকারী প্রতিনিধি কিহাক সাংয়ের কাছে জানতে চান, বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে তিনি অন্যতম প্রধান বাধা কী মনে করেন? জবাবে তিনি বলেন, ‘প্রশাসনিক জটিলতা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অন্যতম বাধা।’ তবে এই বাধা সত্ত্বেও বাংলাদেশ লাভজনক বিনিয়োগের জন্য উত্তম গন্তব্য বলে মন্তব্য করেন তিনি। এ কারণে তিনি এ দেশে ধারাবাহিকভাবে বিনিয়োগ ও ব্যবসা সম্প্রসারণ করছেন বলে জানান।

WhatsApp Image 2025-04-07 at 20.26.33_354c9594

চীন থেকে পরিদর্শনে আসা বিনিয়োগকারী কেভিন উল জানান, বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকলে এরচেয়ে ভালো বিনিয়োগের স্থান বিরল। রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশিল থাকলে চায়না থেকে বিপুল পরিমান বিনিয়োগ আসবে বলেও জানান তিনি। নেদারল্যান্ডের বিনিয়োগকারী রিকি রও জানান, ব্যবসার জন্য যে যে সুযোগ সুবিধা ইকোনোমিক জোনগুলোতে থাকা প্রয়োজন তার সবই বাংলাদেশের ইকোনোমিক জোনগুলোতে রয়েছে। এখনো চুরান্ত সিদ্ধান্ত না নিলেও ভালো একটি বিনিয়োগের আশার কথা জানান তিনি। বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ অনেক উৎকৃষ্ট একটি স্থান। এখানে বিনিয়োগের পরিবেশ দেখে আমরা সন্তুষ্ট এমনটি জানিয়েছেন ভারতীয় বিনিয়োগকারী ডা. সুরেশ কাপাতি।

বেজার প্রজেক্ট ডাইরেক্টর আব্দুল্লাহ আল মারুফ ফারুক বলেন, আন্তর্জাতিক এই সম্মেলনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ৫৫০ জন বিনিয়োগকারী অংশ নিয়েছেন। এদের মধ্যে অর্ধশতাধিক বিদেশি উদ্যোক্তা যারা বাংলাদেশে বিনিয়োগের ও কারখানা স্থাপনের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।তাদের জন্য এই ভিজিটের আয়োজন করা হয়েছে।তারা মূলত কারখানা স্থাপনের সম্ভাব্যতা দেখতে এসেছেন। তাদের শিল্প স্থাপনের জন্য জমি দরকার। তাদের জন্য কী ধরনের অবকাঠামো লাগবে, সাপোর্ট সিস্টেম কী হবে সেটাও দেখেছেন। সবকিছু দেখে নিজেদের সন্তুষ্টির কথা জানিয়েছে। যা আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ সম্মেলনটি সফল হওয়ার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ।

বিডা জানায়, তিনদিনব্যাপী আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে ঢাকায়। বিশ্বের ৫০টি দেশের ৫৫০জনের বেশি বিনিয়োগকারী এই সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন। এদের মধ্যে অন্তত অর্ধশত বিনিয়োগকারী শিগগিরি বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার আগ্রহ প্রকাশ করেন। একপর্যায়ে তারা বাংলাদেশে শিল্প ও বিনিয়োগের সম্ভাবনা যাচায় করতে চান। সরকার তাদের এই আগ্রহকে গুরুত্ব দিয়ে সম্মেলনের প্রথম দিনই চট্টগ্রামের আনোয়ারার কেইপিজেড ও মিরসরাই ইকোনোমিক জোন পরিদর্শনের আয়োজন করে।

বাংলাদেশে বিনিয়োগের পরিবেশ দেখে খুশি হয়েছেন বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকলে অচিরেই বিপুল পরিমান বিদেশি বিনিয়োগের আশার কথা জানিয়েছেন তারা। সকাল সাড়ে ৯ টায় কোরিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ভারতসহ বিভিন্ন দেশের অর্ধশতাধিক বিনিয়োগকারীকে নিয়ে আনোয়ারায় পৌছন বিনিয়োগ বোর্ড ও বেজার শীর্ষ কর্মকর্তারা। তারা কেইপিজেডের বিনিয়োগ পরিবেশসহ এই অঞ্চলের শিল্প কারখানা বিশেষ করে টেক্সটাইল, গার্মেন্টস, আর্ট গ্যালারী, টেক্সটাইল ইউনিভার্সিটি, আইটি জোন, মেডিকেলসহ পুরো প্রকল্প ঘুরে দেখেন। বর্তমান বিনিয়োগকারীদের সঙ্গেও মতবিনিময় করেন। তারা পানি, বিদ্যুৎ ইউটিলিটি সুবিধা, পরিবহন ব্যবস্থা ও বন্দর ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে খোঁজ খবর নেন।

আনোয়ারায় পরিদর্শন শেষে বিনিয়োগকারী প্রতিনিধি দলটি মিরসরাই ইকোনোমিক জোন পরিদর্শন করেন। এসময় বিডা’র পক্ষ থেকে জানানো হয়, দেশের সবচেয়ে বড় মিরসরাই ইকোনোমিক জোনে বড় ধরণের বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন এলাকার ইপিজেডগুলোতে বিনিয়োগ করার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।

বিডার জানিয়েছে, দেশে বিনিয়োগ বাড়ানোর লক্ষ্যে আয়োজিত এই আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ সম্মেলনে বিশ্বের ৫০টি দেশের ৫৫০ জনের বেশি বিনিয়োগকারী ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি অংশ নিচ্ছেন। এ জন্য সরাসরি বিনিয়োগ করবেন এমন বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি বিশ্বের নামিদামি বেশ কিছু কোম্পানির শীর্ষ নির্বাহী কিংবা প্রতিনিধিরাও নিবন্ধন করেছেন। চারদিনব্যাপি ‘বাংলাদেশ বিনিয়োগ সম্মেলন-২০২৫’ এ সম্মেলন শেষ হবে বৃহস্পতিবার।