প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, আমাদের পররাষ্ট্র নীতি একটা দেশের কাছে বন্ধক দেওয়া হয়েছিল। এখন পররাষ্ট্রনীতি স্বাধীন।

তিনি বলেন, আমরা সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখছি। সেটা ভারত হোক, সেটা চীন হোক, যুক্তরাষ্ট্র হোক সবার সঙ্গে আমরা একটা সুসম্পর্ক রাখছি। আমি চাই আমার সঙ্গে তার সম্পর্ক হোক মর্যদার ও ন্যায্যতার এবং সেই জায়গায় আমরা গিয়েছি।

বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএসআরএফ) আয়োজিত সংলাপে তিনি এ কথা বলেন।

এক প্রশ্নের উত্তরে প্রেস সচিব বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কোনো কিছুই বাঁধা হবে না। বাংলাদেশের জনগণের যদি অংশগ্রহণ থাকে, কোনো কিছুই বাঁধা না। আগে তো জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়নি। তার আগেই রাতের বেলা ব্যালট পড়েছে। যখন ফ্রি অ্যান্ড সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়, তখন মানুষই রক্ষাকারী ঢাল হিসেবে কাজ করে।

তিনি বলেন, ভালো নির্বাচনে একটা উৎসবের আমেজ হয়। কারণ আপনি যান, আমিও যাই। আমি আমার ছেলেকে নিয়ে যাচ্ছি, উনি ওনার বৃদ্ধা বাবা-মাকে নিয়ে যাচ্ছেন। সবার অংশগ্রহণ থাকলে নির্বাচন সুন্দর হবে। আমরা আশাকরি এই নির্বচনটা খুবই উৎসবমুখর পরিবেশে, ভালো নির্বাচন হবে।

তিনি আরও বলেন, প্রতি নির্বাচনে আমাদের কিছু না কিছু ভায়োলেন্স (সহিংসতা) হয়। আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে ভায়োলেন্স জিরোতে নামিয়ে আনা। সেটার জন্য আমরা কয়েক দফা মিটিং করেছি। আমরা গত মিটিয়ে বলেছি- দেড় লাখ পুলিশ সদস্য নির্বাচনী দায়িত্বে থাকবেন এবং তাদের ট্রেনিং শুরু হয়েছে। সেনাবাহিনীর কথা বলেছি। আশা করা যায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে।

আর এক প্রশ্নের উত্তরে শফিকুল আলম বলেন, প্রশাসনকে নিরপেক্ষ করা কষ্ট সাধ্য কাজ ছিলো। গত ১২ মাসে বর্তমান সরকার এখানে অনেক শ্রম দিয়েছে। আমরা চেষ্টা করেছি, আপনারা দেখেছেন এখন অনেকেই নিরপেক্ষ। আমরা আশাকরি আওয়ামী লীগের অপশাসন থেকে আমাদের সমাজের সকলেই এখান থেকে শিক্ষা নেবেন। সাংবাদিকদের জন্যও একটা বড় শিক্ষা।

তিনি বলেন, আমি আসলে একটা পার্টির সঙ্গে নিজেকে কতোখানি জাড়িয়ে ফেলবো। আপনি একটা রাজনৈতিক দলকে সাপোর্ট করতেই পারেন। কিন্তু ওটা করতে গিয়ে যদি আপনি হত্যাযজ্ঞকে বৈধতা দেন, নির্বাচনহীনকে বৈধতা দেন, তখন তো আর আপনার নিরপেক্ষতা থাকে না।

তিনি আরও বলেন, আমাদের প্রত্যেকটা সেক্টরে দোষর ছিল। হাসিনার মতো একটা মনস্টার তৈরি হয়েছে এদের দ্বারায়। আপা আপা বলতে বলতে তো ফেনা ফেলতো। ভবিষ্যতে আবার রাজনৈতিক সরকার ক্ষমতায় আসবে, আমি আমাকে কতটুকু সংযত করব, সেটার শিক্ষা নিতে হবে। একটা দলকে আপনি সমর্থন করতেই পারেন, তাই বলে তার হত্যাযজ্ঞকে, ব্যাংক লুটকে বৈধতা দেওয়ার কাজগুলো সে সময় হয়েছে। এটা থেকে যদি আমরা সবাই শিক্ষা নেই—তাহলে আমাদের দেশে আর একটা মনস্টার তৈরি হবে না।

চাঁদাবাজি এক প্রশ্নের উত্তরে প্রেস সচিব বলেন, গত কয়েক সপ্তাহে কিন্তু হাই প্রোফাইলের চাঁদাবাজ গ্রেপ্তার হয়েছে। চাঁদাবাজির বিষয়ে আমরা জিরো টলারেন্স নীতিতে আছি। সরকার যথেষ্ট কাজ করছে, পুলিশ প্রশাসনকে বলে দেওয়া হয়েছে। কোথাও কোনো ধরনের চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটলে আপনাদের কাছে প্রমাণ থাকলে দেবেন, আমরা সে অনুযায়ী কাজ করব।

জনশক্তি রপ্তানির ও ভিসা জটিলতার ক্ষেত্রে এই সরকার কোনো পদক্ষেপ নেবে কিনা? এমন এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে কত লোক প্রতিমাসে বিদেশ যাচ্ছে সেই ডেটা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে আছে। আমরা সে তথ্য লুকাচ্ছি না। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় প্রতি মাসে ডেটা দেয়, সেখানে কোনো মাসে বাড়ে, কোনো মাসে কমে, সেটা আপনারা দেখেছেন।

তিনি আরও বরেন, এই সরকারের বড় সাফল্য হচ্ছে সংযুক্ত আরব আমিরাতে জনশক্তি নেওয়া বন্ধ ছিল ও ভিসা দেয়া বন্ধ ছিল, সে জায়গায় জট ছাড়াচ্ছি। মালয়েশিয়া ও জাপান নিয়ে কাজ করছি। এক লাখ লোক জাপান নিয়ে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিটি জায়গায় আমরা কাজ করার চেষ্টা করছি। কোরিয়াতেও আমাদের কাজ হচ্ছে আমাদের চেষ্টার কোনো অন্ত নেই।

ভিসা জটিলতা নিয়ে প্রেস সচিব বলেন, এটা আগের সরকারের আমল থেকেই শুরু হয়েছে। ইউএই ভিসা বন্ধ হয়েছে কিন্তু আমাদের আমলে না, ২০১২-১৩ সাল থেকেই বন্ধ ছিল। আমরা চেষ্টা করছি সামনেও অব্যাহত থাকবে। আস্তে আস্তে যে ঝামেলাগুলো হচ্ছে সেটা কেটে যাবে।

যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২৫টি বোয়িং বিমান কেনা নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে শফিকুল আলম বলেন, ২৫টি বিমানতো এক দিনে কেনা হচ্ছে না, সময়টা দেখেন অনেক বছর ধরে কেনা হবে। ততোদিনে আমাদের এয়ার ট্রাফিকের উন্নয়ন হবে। প্রতি বছরই তো উন্নয়ন হচ্ছে। কোনো কোনো বছর তো দুই সংখ্যায় বাড়ে হয়। আমরা বোয়িং কেন দিচ্ছি, আমাদের পাইলটদের প্রশিক্ষণ হয় বোয়িংয়ে। পৃথিবীতে দুইটা এয়ারলাইন্স আছে কেউ এয়ারবাসকে নিচ্ছে, কেউ বোয়িংকে নিচ্ছে। আমরাও নিচ্ছি, ইন্দোনেশিয়াও নিচ্ছে। এখন দেওয়ার মানে হচ্ছে আমরা যাতে ঠিক মতো সাপ্লাই পাই। প্রথম সাপ্লাই কবে আসে সেটা দেখে নিয়েন। এটা যদি কালকে আনা হতো—তাহলে বলতে পারতেন কোথায় রাখব। কিন্তু আমাদের প্রতিমাসে একটা বৃদ্ধি আছে।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিএসআরএফ সভাপতি মাসউদুল হক। সঞ্চালনা করেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক উবায়দুল্লাহ বাদল। এ সময় প্রধান তথ্য কর্মকর্তা মো. নিজামূল কবীর উপস্থিত ছিলেন।