দ্রুত সংস্কার করে নির্বাচন চাইলো বিএনপি
সংস্কার সুষ্ঠু নির্বাচন টেকসই গণতন্ত্র চায় জামায়াত
জুলাই সনদ দ্রুত বাস্তবায়নের কথা বললো এনসিপি
চারদিনের সফরে ঢাকার আসার তৃতীয় দিন গতকাল দুপুরে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং সংস্কার কমিশনের সঙ্গে এক আলোচনা সভায় যোগ দেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তেনিও গুতেরেস। বিএনপির জামায়াত এবং এনসিপিসহ আরও কয়েকটি দলের সিনিয়র নেতারা তাতে অংশ নেন। আলোচনায় সংস্কার কমিশনের প্রধানগণও অংশ নেন। হোটেল ইন্টারকনন্টিন্যানটালে সংস্কার নিয়ে আয়োজিত গোলটেবিল আলোচনায় রাজনীতিবিদের মধ্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমদ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাাহ মুহাম্মদ তাহের ও সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, গণসংহতি আন্দোলনের জুনায়েদ সাকি, সিপিবির রুহিন হোসেন প্রিন্স, এনসিপির নাহিদ ইসলাম, এবি পার্টির আসাদুজ্জামান ফুয়াদ প্রমুখ। এ ছাড়া জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী, পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন, নির্বাচন সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার, দুদক সংস্কার কমিশনের প্রধান ইফতেখারুজ্জামানও বৈঠকে ছিলেন।
বৈঠক শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিএনপিই সবার আগে সংস্কারের কথা বলেছে বলে জাতিসংঘের মহাসচিবকে জানিয়েছে দলটি। একই সঙ্গে নির্বাচনকেন্দ্রিক সংস্কারের যেসব বিষয় আছে, সেগুলো দ্রুত করে জাতীয় নির্বাচন দেওয়ার কথাও বলেছে তারা।
জাতিসংঘের মহাসচিবের সঙ্গে কী নিয়ে আলাপ হয়েছে, বিএনপিইবা কী বলেছে এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘জাতিসংঘের উদ্যোগে একটা গোলটেবিল আয়োজন করা হয়েছিল। এতে কমিশন প্রধানেরা ছিলেন। মূলত এখানে সংস্কারের যেসব বিষয় সম্পর্কে আলোচনা হচ্ছে, সেসব বিষয় সম্পর্কে জাতিসংঘের মহাসচিবকে জানানো হয়েছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা এত দিন যে কথা বলে আসছি, (জাতিসংঘের মহাসচিবকে) একই কথা বলেছি। সংস্কার তো অবশ্যই করতে হবে। সংস্কারের কথা তো আমরা আগে বলেছি। সেই সংস্কারটা অবশ্যই করতে হবে। কিন্তু সেই সংস্কারটা যত দ্রুত করা যায়, আমরা বলেছি, নির্বাচনকেন্দ্রিক যেসব বিষয় আছে, সেগুলো করে ফেলা, দ্রুত নির্বাচন করা এবং একটা পার্লামেন্টের মাধ্যমে বাকি বিষয়গুলো করতে হবে। চলমান প্রক্রিয়া। জাতিসংঘের মহাসচিব কিছু বলেছেন কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে বিএনপির মহাসচিব বলেন, তিনি কোনো কমেন্ট (মন্তব্য) করেননি।
নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে কোনো কথা হয়েছে কি না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা সংস্কার কমিশনের সঙ্গে কথা বলছি। তাদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ আছে। তারা যা চাচ্ছে, সব তাদের দিয়েছি।
দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমদ নির্বাচনসংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে সাংবাদিকদের বলেন, ‘জাতিসংঘের তরফ থেকে বলা হয়েছে, এটা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। উনি বাংলাদেশে শক্তিশালী গণতান্ত্রিক সরকার আসবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন। পৃথিবীর মধ্যে একটা নজির সৃষ্টি করবে আগামী নির্বাচন, এমনটা উনি আশা করেছেন।
বৈঠক শেষে ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের বলেন, আমরা সংস্কারের ব্যাপারে কথা বলেছি। একটা ফেয়ার নির্বাচনের বিষয়ে বলেছি, টেকসই গণতন্ত্র ও জাতীয় ঐক্যের ব্যাপারে কথা বলেছি। জাতিসংঘের মহাসচিব আমাদের অধিকাংশ বক্তব্য সমর্থন করে বলেছেন। সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে তিনি আশাবাদী।
এদিকে বৈঠকে সংস্কার নিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির অবস্থান তুলে ধরা হয়েছে বলে জানান দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘এনসিপি’র পক্ষ থেকে সংস্কার বিষয়ে যে অবস্থান, অর্থাৎ গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী প্রেক্ষিতে যে সরকার গঠিত হয়েছে, সেখানে সংস্কার ও বিচার অন্যতম কমিটমেন্ট জনগণের কাছে। সকল রাজনৈতিক দল মিলে একটা ঐকমত্য পোষণ করতে হবে, যেটাকে জুলাই সনদের কথা বলা হচ্ছে।
নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘৫ আগস্ট পরবর্তী যে বাংলাদেশ এবং যে গণতন্ত্র একটা রিফর্ম (সংস্কার) প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, সে বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। একইসঙ্গে রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা সংস্কার বিষয়ে দলীয় অবস্থান তুলে ধরেছেন।’এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, গণহত্যা নিয়ে জাতিসংঘের প্রতিবেদনে দেয়া সুপারিশ বাস্তবায়নে সংস্থাটির সাহায্য প্রয়োজন। এখনো জাতিসংঘের তিনটি প্রতিষ্ঠানে শেখ হাসিনার আত্মীয়রা কাজ করছেন।