হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কার্গো শেডে আগুনের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি আজ প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগুনের সূত্রপাত ছিল— বৈদ্যুতিক আর্ক এবং শর্ট সার্কিটের কারণে। এই অগ্নিকাণ্ড কোনো নাশকতা ছিল না।
মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, স্বরাষ্ট্র সচিব নাসিমুল গনি প্রধান উপদেষ্টার কাছে তদন্ত প্রতিবেদন হস্তান্তর করেন। পরে এই রিপোর্ট নিয়ে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
তদন্তে দেখা গেছে, কুরিয়ার শেডের ভেতরে বিভিন্ন সংস্থার জন্য ৪৮টি ছোট লোহার খাঁচার অফিস স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু, সেখানে কোনো প্রাথমিক অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা—যেমন ফায়ার অ্যালার্ম, স্মোক ডিটেক্টর, স্প্রিঙ্কলার বা হাইড্রান্ট ছিল না।
প্রেস সচিব আরও জানান, প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে যে, কাগজ-লেপে মোড়ানো কাপড়ের রোল, রাসায়নিক পদার্থ, কম্প্রেসড পারফিউম বোতল, বডি স্প্রে, ইলেকট্রনিক্স, ব্যাটারি এবং ঔষধি কাঁচামালসহ দাহ্য সামগ্রী অগোছালোভাবে জমা ছিল। এসব পণ্য নিরাপত্তা বিধি মেনে রাখা হয়নি এবং যেকোনো সময় বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা ছিল।
তদন্ত কমিটি ৯৭ জন সাক্ষীর মৌখিক ও লিখিত সাক্ষ্য গ্রহণ করেছে। তাদের তথ্যমতে, সম্প্রসারিত কুরিয়ার শেডের আগুনের সূত্রপাত ছিল—বৈদ্যুতিক আর্ক এবং শর্ট সার্কিটের কারণে। তদন্তে তুরস্ক, বুয়েট, অগ্নি নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ এবং সিআইডি ফরেনসিক তদন্তকারীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।
শফিকুল আলম বলেন, তদন্ত কমিটি আরো প্রকাশ করেছে, ২০১৩ সাল থেকে ওই স্থানে সাতটি বড় অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে, যার অধিকাংশই গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রকাশিত হয়নি। এসব ঘটনার পরও সিভিল এভিয়েশন অথরিটির কাছে আগুন প্রতিরোধ ও জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণের কোনো প্রতিষ্ঠানিক সক্ষমতা নেই।
কমিটি সুপারিশ করেছে, বিমানবন্দর রক্ষণাবেক্ষণ ও নিরাপত্তার জন্য একটি স্বতন্ত্র বিমানবন্দর পরিচালনা কর্তৃপক্ষ গঠন করা হোক, এবং সিএএবি কেবল নিয়ন্ত্রক হিসেবে কাজ করবে। এছাড়া, প্রধান স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তা মান নিশ্চিত করা, বাংলাদেশ বিমানের ভূমিকা কেবল ফ্লাইট পরিচালনায় সীমাবদ্ধ রাখা এবং গ্রাউন্ড-হ্যান্ডলিংসহ অন্যান্য কার্যক্রমের জন্য দক্ষ অপারেটর নিয়োগ করা উচিত।
কমিটি বিমান সংস্থার জন্য বিশেষ শ্রেণির ফায়ার স্টেশন দ্রুততম সময়ে স্থাপন, বিপজ্জনক রাসায়নিক ও বিপজ্জনক পণ্য সম্ভারের গুদাম আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা মান অনুসারে স্থানান্তর এবং নিলামযোগ্য পণ্যের জন্য পৃথক কাস্টমস গুদাম স্থাপনের পাশাপাশি বিমানবন্দর এপ্রোন এলাকায় কোনো ধরনের পণ্য সংরক্ষণ নিষিদ্ধ করার পরামর্শ দিয়েছে।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো শেডে আগুন লাগে গত ১৮ অক্টোবর। তদন্ত প্রতিবেদনের সব তথ্য বিশ্লেষণ ও প্রস্তাবনা প্রধান উপদেষ্টার নজরে আনা হয়েছে।