বহুল প্রত্যাশিত জুলাই সনদ অবশেষে বাস্তবায়নের দিকে এগোচ্ছে। এর চূড়ান্ত একটি খসড়া দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানো হয়েছে।

শনিবার (১৬ আগস্ট) জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে দলগুলোর কাছে জুলাই সনদের চূড়ান্ত খসড়া পাঠানো হয়। এর আগেও একটি খসড়া পাঠানো হয়েছিল। তবে সেটি চূড়ান্ত ছিল না।

চূড়ান্ত খসড়ায় পিলখানা হত্যাকাণ্ড, শাপলা চত্বর হত্যাকাণ্ড এবং ২০১৮ সালের কোটা আন্দোলন সনদের পটভূমি উল্লেখ করা হয়েছে। জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে আট দফা অঙ্গীকারনামা রয়েছে।

জুলাই সনদের ভূমিকায় বলা হয়েছে, সুদীর্ঘ গণতান্ত্রিক সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত ছাত্র-শ্রমিক-জনতার সফল গণঅভ্যুত্থানের পরিপ্রেক্ষিতে একটি গণতান্ত্রিক ও মানবিক রাষ্ট্র পুনর্গঠনের ঐতিহাসিক সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এই সন্ধিক্ষণে আমরা নিম্নস্বাক্ষরকারীগণ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে গঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশন এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, জোট ও শক্তিসমূহ পারস্পরিক ও সম্মিলিত আলোচনার মাধ্যমে রাষ্ট্রের সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও দুর্নীতি দমন বিষয়ে সংস্কারের লক্ষ্যে নিম্নলিখিত বিষয়ে ঐকমত্যে উপনীত হয়েছি।

এরপর ধারাবাহিকভাবে সনদে স্থান পাওয়া বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়-

১। পটভূমি

প্রায় দু’শো বছরের বৃটিশ ঔপনিবেশিক শাসন ও শোষণের বিরুদ্ধে নিপীড়িত জনগণের দীর্ঘ লড়াইয়ের ধারাবাহিকতায় ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান নামক একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয় এবং পূর্ব বাংলা তার অন্তর্ভুক্ত হয়। কিন্তু পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠির স্বৈরশাসন, শোষণ, বঞ্চনা ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে এক রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যূদয় ঘটে। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে বর্ণিত সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামজিক সুবিচারের নীতিকে ধারণ করে সংঘটিত মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে যে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা গঠনের আকাঙ্ক্ষা বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে তৈরি হয়েছিল, দীর্ঘ ৫৩ বছরেও তা অর্জন করা যায়নি। কারণ, শাসন ব্যবস্থায় গণতান্ত্রিক পদ্ধতি ও সংস্কৃতি বিকাশের ধারা বারবার হোঁচট খেয়েছে। বিগত পাঁচ দশকে রাষ্ট্রের সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে একদিকে যেমন টেকসই ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠা করা যায়নি, অপরদিকে তেমনি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো নামেমাত্র থাকলেও তা অত্যন্ত ন্যুব্জ ও দুর্বলভাবে কাজ করেছে। বস্তুতপক্ষে, রাষ্ট্রকাঠামোতে একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের সুরক্ষা নিশ্চিতের লক্ষ্যে দলীয় প্রভাবের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে অকার্যকরী ও বিচারহীনতার সহায়ক হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছিল।

বিগত ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন একটি দলীয় সরকার রাষ্ট্রপরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করে ক্রমান্বয়ে অবশিষ্ট গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে জলাঞ্জলি দিয়ে অগণতান্ত্রিক ও ফ্যাসিবাদী চরিত্র ধারণ করতে থাকে। তারা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ও সমালোচকদের গণতান্ত্রিক ও মানবাধিকার হরণ, রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় গুম, খুন, নিপীড়ন-নির্যাতন, মামলা, হামলার মাধ্যমে একটি নৈরাজ্যকর ও বিভীষিকাময় ত্রাস ও ভীতির রাজত্ব কায়েম করে। ২০০৯ সালের পিলখানায় বিডিআর হত্যাকান্ড ও ২০১৩ সালে মতিঝিলের শাপলা চত্ত্বরের হত্যাকান্ড অন্যতম উদাহরণ। ২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ পর্যন্ত সমগ্র রাষ্ট্রযন্ত্রকে স্বৈরতান্ত্রিকভাবে বিশেষ ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর বন্দনার জন্য নিবেদিত রাখা হয়। দেড় দশকে স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকার জনস্বার্থের বিরুদ্ধে ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার উদ্দেশ্যে সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে সংবিধানের বিকৃতি সাধন, বিভিন্ন নিবর্তনমূলক আইন প্রণয়ন, নির্বাচনি ব্যবস্থাকে ধ্বংস, বিচার বিভাগ ও জনপ্রশাসনকে দলীয়করণ এবং দুর্নীতির মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুণ্ঠনের ব্যবস্থা কায়েম করে।

এই পটভূমিকায় রাজনৈতিক দলগুলোর ধারাবাহিক গণতান্ত্রিক আন্দোলন এবং পরবর্তীতে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে ২০১৮ সালে সরকারি চাকরিতে কোটা ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন, নিরাপদ সড়ক আন্দোলন এবং অবশেষে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের এক দফা আন্দোলনে বিপুল ছাত্র-শ্রমিক-নারী-পেশাজীবী তথা সকল স্তরের জনতার অংশগ্রহণের ফলে এক অভূতপূর্ব গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হয়। এতে শাসকগোষ্ঠীর প্রতিহিংসার শিকার হয়ে শিশু ও নারীসহ এক হাজার চারশোর বেশি নিরস্ত্র নাগরিক নিহত এবং বিশ হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়। তাদের আত্মাহুতি ও ত্যাগের বিনিময়ে এবং জনগণের সম্মিলিত শক্তি ও প্রতিরোধের কাছে স্বৈরাচারী শাসক ও তার দোসররা পরাজিত হয়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়।

এমতাবস্থায়, জনগণের মননে রাষ্ট্র-কাঠামো পুনর্গঠনের এক প্রবল অভিপ্রায় সৃষ্টি হয়েছে। রাষ্ট্র সংস্কার, বিশেষ করে সংবিধানের মৌলিক সংস্কার, ধ্বসে পড়া নির্বাচনি ব্যবস্থার পুনর্গঠন, গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আইন ও বিধি-বিধানের সংস্কার, স্বাধীন বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠা এবং সুশাসিত জবাবদিহিমূলক ও দুর্নীতিমুক্ত সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার যে ঐতিহাসিক সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, তার সদ্ব্যবহার করা আমাদের সকলের নৈতিক দায়িত্ব।

২। সংস্কার কমিশন গঠন

বিদ্যমান সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুসারে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক প্রেরিত প্রশ্নে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের মতামতের ভিত্তিতে ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে অর্ন্তবর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে রাষ্ট্র ব্যবস্থার সংস্কারের বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তারই ধারাবাহিকতায় ৭ অক্টোবর ২০২৪ তারিখে সরকার প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করে। কমিশনগুলো হচ্ছে—সংবিধান সংস্কার কমিশন, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন, পুলিশ সংস্কার কমিশন ও দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশন। কমিশনগুলো ৩১ জানুয়ারি ২০২৫ তারিখের মধ্যে তাদের সুপারিশসহ প্রতিবেদন দাখিল করে।

৩। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন

জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে সার্বিক সংস্কার প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নেয়ার জন্য অর্ন্তবর্তীকালীন সরকার ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখে প্রধান উপদেষ্টাকে সভাপতি, সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধানকে সহ-সভাপতি এবং নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন, পুলিশ সংস্কার কমিশন ও দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশনের প্রধানদের সদস্য করে একটি জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করে। পরবর্তীতে উক্ত কমিশন কিছুটা পুনর্গঠন করা হয়। কমিশনের দায়িত্ব ছিল—আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, পুলিশ ও দুর্নীতি দমন বিষয়ে সংস্কারের জন্য গঠিত কমিশনগুলোর সুপারিশ বিবেচনা ও গ্রহণের লক্ষ্যে জাতীয় ঐকমত্য গঠনের জন্য রাজনৈতিক দল ও শক্তিসমূহের সঙ্গে আলোচনা করা এবং এ মর্মে পদক্ষেপ সুপারিশ করা। কমিশনের মেয়াদ ছিল কার্যক্রম শুরুর তারিখ থেকে ছয় মাস। কমিশন তার দায়িত্ববোধ ও সুপারিশের অংশ হিসেবে ঐকমত্যের মৌলিক ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সংবলিত ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’ প্রণয়নের সিদ্ধান্ত নেয়।

৪। কমিশনের কার্যক্রম

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে তার কাজ শুরু করে। ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ছয়টি কমিশনের প্রতিবেদনের ছাপানো অনুলিপি সব রাজনৈতিক দলের কাছে প্রেরণ করা হয়। এরপর ৫ মার্চ” ২০২৫ তারিখে পুলিশ সংস্কার কমিশন ব্যতীত অপর পাঁচটি কমিশনের প্রতিবেদনের গুরুত্বপূর্ণ ১৬৬টি সুপারিশ স্প্রেডশিট আকারে ৩৮টি রাজনৈতিক দল ও জোটের কাছে মতামতের জন্য পাঠানো হয়। এর মধ্যে সংবিধান সংস্কার বিষয়ক ৭০টি, নির্বাচন সংস্কার বিষয়ক ২৭টি, বিচার বিভাগ সংক্রান্ত ২৩টি, জনপ্রশাসন সংক্রান্ত ২৬টি ও দুর্নীতি দমন বিষয়ক ২৭টি সুপারিশ ছিল। পুলিশ সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলো সরাসরি প্রশাসনিক সিদ্ধান্তে বাস্তবায়নযোগ্য হওয়ায় সেগুলো স্প্রেডশিটে রাখা হয়নি। অপরদিকে, সংবিধান সংস্কার কমিশন ছাড়া অন্য পাঁচটি কমিশনের দ্রুত বাস্তবায়নযোগ্য সুপারিশগুলোর তালিকা সরকারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

মোট ৩৫টি রাজনৈতিক দল ও জোট তাদের মতামত কমিশনের কাছে প্রেরণ করে, অনেকে বিস্তারিত ব্যাখ্যা বিশ্লেষনও প্রদান করে। মতামত গ্রহণের পাশাপাশি প্রথম পর্যায়ে ২০ মার্চ থেকে ১৯ মে ২০২৫ পর্যন্ত ৩২টি দল ও জোটের সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মোট ৪৭টি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা ফলপ্রসূ করার লক্ষ্যে কিছু দলের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক হয়। রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে প্রথম পর্যায়ের আলোচনা শেষ করে কমিশন অগ্রাধিকার ও গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় মোট ২০টি বিষয় নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে দ্বিতীয় দফা আলোচনায় মিলিত হয়। এই প্রক্রিয়ার ফলাফল স্বরূপ নিম্নলিখিত ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’ সর্বসম্মতভাবে প্রণীত হয়।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে পারস্পরিক আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে, আমরা অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দল ও জোটের প্রতিনিধিরা স্ব-স্ব দলেরপক্ষ থেকে বিদ্যমান শাসন ব্যবস্থা তথা সংবিধান, বিচার ব্যবস্থা, নির্বাচন ব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, পুলিশি ব্যবস্থা ও দুর্নীতি দমন বিষয়ে নিম্নলিখিত কাঠামোগত, আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক পরিবর্তনের ব্যাপারে ঐকমত্যে উপনীত হয়েছি এবং এইসব বিষয়সমূহকে এই জাতীয় সনদে সন্নিবেশিত করতে সম্মত হয়েছি। ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত গণঅভ্যুত্থানের বীর শহীদ ও আহতদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা প্রকাশ এবং উক্ত গণঅভ্যুত্থানে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অংশগ্রহণকারীদের প্রতি কৃতজ্ঞতার স্মারক হিসেবে আমরা এই সনদকে ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’ হিসেবে ঘোষণা করছি।

৫। ঐকমত্যে উপনীত হওয়ার বিষয়সমূহঃ

রাষ্ট্রভাষা, নাগরিকত্ব সংবিধান

১। ভাষা : প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্র ভাষা হবে ‘বাংলা’। সংবিধানে বাংলাদেশে নাগরিকদের মাতৃভাষা হিসেবে ব্যবহৃত অন্যান্য সকল ভাষাকে দেশের প্রচলিত ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করা হবে। [৩০টি দল ও জোট একমত]

২। বাংলাদেশের নাগরিকদের পরিচয় : বিদ্যমান সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৬(২) এ বর্ণিত ‘বাংলাদেশের জনগণ জাতি হিসাবে বাঙালী এবং নাগরিকগণ বাংলাদেশী বলিয়া পরিচিত হইবেন’ বিধানটি নিম্নোক্তভাবে প্রতিস্থাপন করা হবে: “বাংলাদেশের নাগরিকগণ ‘বাংলাদেশি’ বলিয়া পরচিত হইবেন।” [৩১টি দল ও জোট একমত]

৩। সংবিধান সংশোধন : সংবিধান সংশোধনের জন্য সংসদের উভয় কক্ষের (নিম্নকক্ষ ও উচ্চকক্ষ) দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের সমর্থন প্রয়োজন হইবে; তবে প্রস্তাবনাসহ সুনির্দিষ্ট কতগুলো অনুচ্ছেদ যেমন ৮, ৪৮, ৫৬, ১৪২ এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা,(যেটি ৫৮খ, ৫৮গ, ৫৮ঘ, ৫৮ঙ অনুচ্ছেদ হিসেবে সংবিধানে যুক্ত হবে তা) সংশোধনের ক্ষেত্রে গণভোটের প্রয়োজন হবে। [৩০টি দল ও জোট একমত]

৪। সংবিধান বিলুপ্তি স্থগিতকরণ ইত্যাদির অপরাধ : সংবিধান বিষয়ক অপরাধ ও সংবিধান সংশোধনের সীমাবদ্ধতা বিষয়ক বিদ্যমান সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৭ক এবং ৭খ বিলুপ্ত করা হবে। [২৮টি দল ও জোট একমত]

৫। ক্রান্তিকালীন অস্থায়ী বিধানাবলি : সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৫০(২) বিলুপ্ত করা এবং এ সংশ্লিষ্ট ৫ম, ৬ষ্ঠ এবং ৭ম তফসিল সংবিধানে রাখা হবে না। [২৩টি দল ও জোট একমত]

৬। জরুরি অবস্থা ঘোষণা : (১) বিদ্যমান সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৪১ক সংশোধনের সময় ‘অভ্যন্তরীণ গোলযোগের’ শব্দগুলোর পরিবর্তে ‘রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতার প্রতি হুমকি বা মহামারি বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ’ শব্দগুলো প্রতিস্থাপিত হবে। (২) জরুরি অবস্থা ঘোষণার জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতিস্বাক্ষরের পরিবর্তে মন্ত্রিসভার অনুমোদনের বিধান যুক্ত করা হবে। জরুরি অবস্থা ঘোষণা সম্পর্কিত মন্ত্রিসভা বৈঠকে বিরোধী দলীয় নেতা অথবা তার অনুপস্থিতিতে বিরোধী দলীয় উপনেতার উপস্থিতি অন্তর্ভুক্ত করা হবে। (৩) জরুরি অবস্থাকালীন সময়ে নাগরিকের দুইটি অধিকার অলঙ্ঘনীয় করার লক্ষ্যে এ মর্মে বিধান করা হবে যে, “অনুচ্ছেদ ৪৭ক এর বিধান সাপেক্ষে, কোনো নাগরিকের—(ক) জীবনের অধিকার (Right to life); (খ) বিচার ও দণ্ড সম্পর্কে বিদ্যমান সংবিধানের ৩৫ অনুচ্ছেদে বর্ণিত মৌলিক অধিকারসমূহ খর্ব করা যাইবে না।” [২৯টি দল ও জোট একমত]

রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি

৭। মূলনীতিসমূহ : সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি অংশে ‘সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার, গণতন্ত্র এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সম্প্রীতি’ উল্লেখ থাকবে। [৩১টি দল ও জোট একমত]।

৮। সকল সম্প্রদায়ের সহাবস্থান মর্যাদা : সংবিধানে যুক্ত করা হবে যে, “বাংলাদেশ একটি বহু-জাতি, বহু-ধর্মী, বহু-ভাষী ও বহু-সংস্কৃতির দেশ যেখানে সকল সম্প্রদায়ের সহাবস্থান ও যথাযথ মর্যাদা নিশ্চিত করা হইবে।” [৩৩টি দল ও জোট একমত]

মৌলিক অধিকার

৯। মৌলিক অধিকারসমূহের তালিকা সম্প্রসারণ : সংবিধান সংস্কার কমিশনের সুপারিশ মোতাবেক সংবিধানের তৃতীয় ভাগে বর্ণিত মৌলিক অধিকারসমূহের তালিকা সংশোধন ও নাগরিকদের অধিকার সম্প্রসারণ করা হবে। (নাগরিকের মৌলিক অধিকার সম্প্রসারণ, সেগুলোর সুরক্ষা ও বাস্তবায়নে সাংবিধানিক ও আইনি ব্যবস্থা নিশ্চিত করার বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রতিবেদনের পরিশিষ্টে উল্লেখ করা হয়েছে) । [৩১টি দল ও জোট একমত]

রাষ্ট্রপতি

১০। রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পদ্ধতি : সংবিধানে এরূপ যুক্ত করা হবে যে, বাংলাদেশের একজন রাষ্ট্রপতি থাকবেন, যিনি আইন অনুযায়ী আইনসভার উভয় কক্ষের (নিম্নকক্ষ ও উচ্চকক্ষ) সদস্যদের গোপন ভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে নির্বাচিত হবেন। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে বিদ্যমান সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪৮ (৪) এ বর্ণিত যোগ্যতাসমূহ এবং রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী হওয়ার সময় কোনো ব্যক্তি কোনো রাষ্ট্রীয়, সরকারি বা রাজনৈতিক দল বা সংগঠনের পদে থাকতে পারবেন না। [২৮টি দল ও জোট একমত; নোট অব ডিসেন্ট- ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ]

১১। রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা দায়িত্ব : রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় ভারসাম্য আনয়নের লক্ষ্যে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪৮(৩) সংশোধনীর প্রস্তাব করে কারো পরামর্শ বা সুপারিশ ছাড়াই নিজ এখতিয়ারবলে রাষ্ট্রপতি নিম্নলিখিত পদে নিয়োগ প্রদান করতে পারবেন : (১) জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্যগণ, (২) তথ্য কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্যগণ, (৩) বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ও সদস্যগণ, (৪) আইন কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্যগণ, (৫) বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, (৬) এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্যগণ। [৩১টি দল ও জোট একমত; নোট অব ডিসেন্ট: প্রস্তাবতি নং ক্রমিকের বিষয় বিএনপি, এনডিএম, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, বাংলাদেশ লেবার পার্টি, ১২ দলীয় জোট, এলডিপি।

১২। রাষ্ট্রপতির অভিশংসন প্রক্রিয়া : সংবিধানে এরূপ যুক্ত করা হবে যে, “রাষ্ট্রদ্রোহ, গুরুতর অসদাচরণ বা সংবিধান লঙ্ঘনের জন্য রাষ্ট্রপতিকে অভিশংসন করা যাইবে। আইনসভার নিম্নকক্ষে অভিশংসন প্রস্তাবটি দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের ভোটে পাস করিবার পর তা উচ্চকক্ষে প্রেরণ এবং উচ্চকক্ষে শুনানির মাধ্যমে দুই-তৃতীয়াংশের সমর্থনে অভিশংসন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হইবে।” [২৮টি দল ও জোট একমত]

১৩। রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদর্শন : কোনো আদালত, ট্রাইব্যুনাল বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষ প্রদত্ত যেকোনো দণ্ডের মার্জনা, বিলম্বনস্থা ও বিরাম মঞ্জর করার এবং যে-কোনো দণ্ড মওকুফ, স্থগিত বা হ্রাস করার ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির থাকিবে এবং আইনের দ্বারা নির্ধারিত মানদণ্ড, নীতি ও পদ্ধতি অনুসরণক্রমে উক্ত ক্ষমতা প্রয়োগ করা হবে। সংশ্লিষ্ট আইনে এরূপ বিধান রাখা হবে যে, এরূপ কোনো আবেদন বিবেচনার পূর্বে মামলার বাদী বা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির পরিবারের সম্মতি গ্রহণ করা হবে। [২৯টি দল ও জোট একমত]

প্রধানমন্ত্রী তত্ত্বাবধায়ক সরকার

১৪। প্রধানমন্ত্রীর পদের মেয়াদ : একজন ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী পদে যত মেয়াদ বা যত বারই হোক সর্বোচ্চ ১০ বছর থাকতে পারবেন, এ জন্যে সংবিধানের সংশ্লিষ্ট অনুচ্ছেদ সমূহের প্রয়োজনীয় সংশোধন করা হবে। [২৫টি দল ও জোট একমত; নোট অব ডিসেন্ট: বিএনপি, এনডিএম, ১২ দলীয় জোট, ও জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট]

১৫। প্রধানমন্ত্রীর একাধিক পদে থাকার বিধান : প্রধানমন্ত্রী পদে আসীন ব্যক্তি একইসঙ্গে দলীয় প্রধানের পদে অধিষ্ঠিত থাকিবেন না, এরূপ বিধান সংবিধানে যুক্ত করা হবে। [নোট অব ডিসেন্ট: বিএনপি, এনডিএম, ১২ দলীয় জোট, ও জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট]।

১৬। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা: বিদ্যমান সংবিধানের ১২৩ (৩) অনুচ্ছেদ সংশোধন করে নিম্নরূপ বিধান সংযুক্ত করা হবে:

(১) মেয়াদ অবসানের কারণে অথবা মেয়াদ অবসান ব্যতীত অন্য কোনো কারণে সংসদ ভেঙ্গে যাওয়ার পরবর্তী নব্বই (৯০) দিনের মধ্যে সংসদ সদস্যদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। [২৯টি দল ও জোট একমত]

(২) সংবিধানের ৫৮ (খ) সংশোধনপূর্বক সংসদের মেয়াদ অবসান হওয়ার ১৫ দিন পূর্বে এবং মেয়াদ অবসান ব্যতীত অন্য কোনো কারণে সংসদ ভেঙ্গে গেলে ভঙ্গ হওয়ার পরবর্তী পনের (১৫) দিনের মধ্যে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে। [২৯টি দল ও জোট একমত]

(৩) মেয়াদ অবসানের ক্ষেত্রে সংসদের মেয়াদ অবসান হওয়ার ৩০ দিন পূর্বে জাতীয় সংসদের স্পিকারের তত্ত্বাবধানে এবং সংসদ সচিবালয়ের ব্যবস্থাপনায় — ১. প্রধানমন্ত্রী, ২. বিরোধী দলীয় নেতা, ৩. স্পিকার, ৪. ডেপুটি স্পিকার (বিরোধীদলের) এবং ৫. সংসদের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিরোধী দলের একজন প্রতিনিধি— (যদি সংসদে আসন সংখ্যার বিবেচনায় একাধিক দল দ্বিতীয় বৃহত্তম বিরোধীদলের অবস্থানে থাকে তাহলে সেসব দলের মধ্য থেকে নির্বাচনে সর্বোচ্চ পরিমাণে ভোটপ্রাপ্ত দলটিই দ্বিতীয় বৃহত্তম বিরোধীদল হিসেবে বিবেচিত হবে) মোট পাঁচ (৫) সদস্য সমন্বয়ে একটি ‘নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বাছাই কমিটি’ গঠিত হবে। কমিটির যেকোনো বৈঠক ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় সভাপতিত্ব করবেন স্পিকার।

(৪) কমিটি গঠিত হওয়ার পরবর্তী চব্বিশ (২৪) ঘণ্টার মধ্যে কমিটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলসমূহ, সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দলসমূহ এবং জাতীয় সংসদের স্বতন্ত্র সদস্যদের নিকট হতে সংবিধানের ৫৮গ অনুচ্ছেদে বর্ণিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হওয়ার যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তির নাম প্রস্তাবের আহবান করবেন এবং এক্ষেত্রে প্রতিটি দল ১ (এক) জন এবং একজন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ১ (এক) জন মাত্র ব্যক্তির নাম প্রস্তাব করতে পারবে।

(৫) রাজনৈতিক দলসমূহ এবং স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যগণ পরবর্তী চব্বিশ (২৪) ঘণ্টার মধ্যে সংসদ সচিবালয়ে তাদের প্রস্তাবিত নাম দাখিল করবেন।

(৬) পরবর্তী বাহাত্তর (৭২) ঘণ্টার মধ্যে কমিটির সদস্যগণ সভায় মিলিত হয়ে নিজেদের অনুসন্ধানে প্রাপ্ত এবং রাজনৈতিক দলসমূহ ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের নিকট হতে প্রস্তাবিত নামসমূহ নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করত বাংলাদেশের যে সকল নাগরিক সংবিধানের ৫৮গ অনুচ্ছেদ এর অধীনে উপদেষ্টা হওয়ার যোগ্য তাদের মধ্য হতে একজনকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে বেছে নিবেন এবং তিনি রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত হবেন।

(৭) বাছাই কমিটি গঠিত হওয়ার পরবর্তী একশত কুড়ি (১২০) ঘণ্টার মধ্যে এ পদ্ধতিতে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে কোনো ব্যক্তিকে চূড়ান্ত করা সম্ভব না হলে পরবর্তী আটচল্লিশ (৪৮) ঘণ্টার মধ্যে প্রধান উপদেষ্টা পদের জন্য ৫৮গ অনুচ্ছেদে বর্ণিত শর্ত অনুসরণপূর্বক সংসদের সরকারি দল/জোট ৫ (পাঁচ) জন উপযুক্ত ব্যক্তির নাম প্রস্তাব করবে এবং প্রধান বিরোধী দল/জোট ৫ (পাঁচ) জন উপযুক্ত ব্যক্তির নাম প্রস্তাব করবে। এছাড়া সংসদের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিরোধী দল ২ (দুই) জন উপযুক্ত ব্যক্তির নাম প্রস্তাব করবে। যদি সংসদে আসন সংখ্যার বিবেচনায় একাধিক দল দ্বিতীয় বৃহত্তম বিরোধীদলের অবস্থানে থাকে তাহলে সেসব দলের মধ্যে নির্বাচনে সর্বোচ্চ পরিমাণ ভোটপ্রাপ্ত দলটিই দ্বিতীয় বৃহত্তম বিরোধীদল হিসেবে বিবেচিত হবে। উপর্যুক্ত প্রক্রিয়ায় প্রাপ্ত নামসমূহ স্পিকার জনসাধারণের অবগতির জন্য প্রকাশ করবেন।

(৮) উপর্যুক্ত চ-এ বর্ণিত সময় অতিবাহিত হওয়ার পরবর্তী আটচল্লিশ (৪৮) ঘণ্টার মধ্যে সরকারি দল/জোটের প্রস্তাবিত ৫ (পাঁচ) জন ব্যক্তির নামীয় তালিকা হতে প্রধান বিরোধী দল/জোট যেকোনো ১ (এক) জনকে বেছে নিবে; অনুরূপভাবে প্রধান বিরোধী দল প্রস্তাবিত ৫ (পাঁচ) ব্যক্তির নামের তালিকা হতে সরকারি দল যেকোনো ১ (এক) জনকে বেছে নিবে। দ্বিতীয় বৃহত্তম বিরোধী দলের প্রস্তাবিত মোট ২ (দুই) জনের নামের তালিকা হতে সরকারি দল/জোট যেকোনো একজনকে বেছে নিবে এবং প্রধান বিরোধী দল/জোট যেকোনো ১ (এক) জনকে বেছে নিবে। এই পদ্ধতিতে প্রাপ্ত নামসমূহের মধ্য হতে যেকোনো একজনের ব্যাপারে যদি প্রস্তাবকারী দলগুলোর মধ্য ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়, তবে তিনিই পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসাবে মনোনীত হবেন। অথবা কোনো একজনের ব্যাপারে কমিটির ৫ (পাঁচ) জন সদস্যের মধ্যে যদি চার (৪) জন সদস্য একমত হন তাহলে তিনিই পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মনোনীত হবেন।

(৯) যদি উপর্যুক্ত পদ্ধতিতে কোনো একজনের বিষয়ে প্রস্তাবকারী পক্ষসমূহ একমত হতে না পারে তাহলে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিচার বিভাগের দুইজন প্রতিনিধি বাছাই কমিটিতে সদস্য হিসেবে যুক্ত হবেন এবং তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে কারও নাম প্রস্তাব করতে পারবেন না। উক্ত দুইজন প্রতিনিধির মধ্যে এক (১) জন আপীল বিভাগের বিচারপতি হবেন এবং এক (১) জন হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি হবেন। উক্ত ২ (দুই) জন বিচার বিভাগীয় প্রতিনিধিকে মনোনীত করার জন্য—১. সর্বশেষ অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি, ২. কর্মরত প্রধান বিচারপতি এবং ৩. আপীল বিভাগের জ্যেষ্ঠতম বিচারপতি সমন্বয়ে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠিত হবে।

(১০) এই পর্যায়ে ৭ (সাত) সদস্য বিশিষ্ট উক্ত বাছাই কমিটির সদস্যগণ পরবর্তী চব্বিশ (২৪) ঘণ্টার মধ্যে স্পিকারের তত্ত্বাবধানে গোপন ব্যালটে ‘র‌্যাংকড চয়েজ’ (Ranked Choice) বা ক্রমভিত্তিক ভোটিং পদ্ধতি প্রয়োগ করে উক্ত সংক্ষিপ্ত তালিকা হতে যেকোনো ১ (এক) জনকে পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে বেছে নিবেন।

(১১) উপর্যুক্ত যেকোনো পদ্ধতিতে মনোনীত ব্যক্তিকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রাষ্ট্রপতি পরবর্তী নব্বই (৯০) দিনের জন্য প্রধান উপদেষ্টা পদে নিয়োগদান করবেন। তবে শর্ত থাকে যে, সংসদ বহাল থাকা অবস্থায় তিনি শপথ গ্রহণ করবেন না।

(১২) উপর্যুক্ত পদ্ধতিসমূহের মাধ্যমেও যদি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বেছে নেওয়া সম্ভব না হয় তাহলে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী অনুসরণ করতে হবে; তবে শর্ত থাকে যে, সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে বেছে নেওয়া যাবে না।

(১৩) কোনো কারণে প্রধান উপদেষ্টার পদ শূন্য হলে রাষ্ট্রপতি কোনো সময় ব্যতিরেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অবশিষ্ট মেয়াদের জন্য পূর্ববর্তী র‌্যাঙ্কড চয়েজ বা ক্রমভিত্তিক ভোটিং পদ্ধতিতে দ্বিতীয় স্থানে থাকা বয়সে জ্যেষ্ঠতম ব্যক্তিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা পদে নিয়োগদান করবেন। দ্বিতীয় স্থানে থাকা বয়সে জ্যেষ্ঠতম ব্যক্তি দায়িত্ব গ্রহণে অসম্মতি জানালে অথবা দায়িত্ব পালনে অপারগ হলে র‌্যাংক চয়েজ বা ক্রমভিত্তিক ভোটিং পদ্ধতিতে পরবর্তী স্থানে থাকা ব্যক্তি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা পদে অবশিষ্ট মেয়াদের জন্য নিযুক্ত হবেন। এই পদ্ধতিতে প্রধান উপদেষ্টা পদে পরিবর্তন হলেও পূর্বতন উপদেষ্টা পরিষদ বহাল থাকবে। তবে উপদেষ্টা পরিষদের কোনো পদ শূন্য হলে নবনিযুক্ত প্রধান উপদেষ্টা সেই শূন্যপদ পূরণের অধিকার রাখবেন।

(১৪) নিয়োগলাভের পর প্রধান উপদেষ্টা উপর্যুক্ত বাছাই কমিটির সঙ্গে পরামর্শক্রমে সংবিধানের ৫৮গ অনুচ্ছেদে বর্ণিত উপযুক্ত ব্যক্তিদের মধ্য হতে অনধিক ১৫ (পনেরো) জন ব্যক্তিকে উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগের জন্য বেছে নিবেন এবং রাষ্ট্রপতি তাঁদের নিয়োগ প্রদান করবেন।

(১৫) মেয়াদ অবসান ব্যতীত অন্য কোনো কারণে সংসদ ভেঙ্গে গেলে, ভঙ্গ হওয়ার পরবর্তী চব্বিশ (২৪) ঘণ্টার মধ্যে সংসদ সচিবালয়ের ব্যবস্থাপনায় বিলুপ্ত সংসদের একই ধরনের প্রতিনিধিত্ব নিয়ে ‘নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বাছাই কমিটি’ গঠিত হবে এবং উক্ত কমিটি পরবর্তী চৌদ্দ (১৪) দিন তথা ৩৩৬ (তিনশত ছত্রিশ) ঘণ্টার মধ্যে উক্তরূপ অভিন্ন পদ্ধতিতে ১ (এক) জন ব্যক্তিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে বেছে নিবে এবং তিনি অবিলম্বে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক প্রধান উপদেষ্টা নিযুক্ত হবেন।

(১৬) সংবিধানের ৫৮(৭)(ঘ) সংশোধনপূর্বক “বাহাত্তর বৎসরের অধিক বয়স্ক নহেন” এর পরিবর্তে “পঁচাত্তর বৎসরের অধিক বয়স্ক নহেন” শব্দসমূহ প্রতিস্থাপিত হবে।

(১৭) তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রধানমন্ত্রীর পদমর্যাদা ও সুযোগ-সুবিধা ভোগ করবেন এবং উপদেষ্টাগণ মন্ত্রীর পদমর্যাদা ও সুযোগ-সুবিধা ভোগ করবেন।

(১৮) সংবিধানে বর্ণিত বিধানাবলি সাপেক্ষে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্ব, কর্তব্য ও এখতিয়ার ও অবসানের সময়সীমা নির্ধারিত হবে।

(১৯) নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদ হবে অনধিক নব্বই (৯০) দিন। তবে দৈব-দুর্বিপাকজনিত কারণে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব না হলে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার আরো সর্বোচ্চ ত্রিশ (৩০) দিন দায়িত্ব পালন করতে পারবে।

(২০) নতুন সংসদ গঠিত হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী যে তারিখে তাঁর পদের কার্যভার গ্রহণ করবেন সেই তারিখে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিলুপ্ত হবে।

* ত্রয়োদশ সংশোধনীর অনুচ্ছেদ ৫৮(গ) (২) ব্যবস্থা বহাল থাকবে। [নোট অব ডিসেন্ট: বিএনপি (গঠন প্রক্রিয়া সংসদের হাতে ন্যস্ত করার পক্ষে), বাংলাদেশ লেবার পার্টি (৯, ১০ ১৩), এনডিএম (৮, ৯, ১২), জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট (৯, ১০ ১৩), ১২ দলীয় জোট (৯, ১০ ১৩), জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদশে (৭ ৮), বাংলাদশে নেজামে ইসলাম পার্টি (৭ ১০)] ।

স্থানীয় সরকার

১৭। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহের নির্বাচন : সংবিধানে এরূপ যুক্ত করা হবে যে, “নির্বাচন কমিশনের সরাসরি তত্বাবধানে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে।” [২৮টি দল ও জোট একমত]

১৮। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ব্যবস্থাপনা : সংবিধানে এরূপ যুক্ত করা হবে যে, “সকল স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ব্যবস্থাপনা এবং আইন দ্বারা নির্ধারিত সকল কাজ সম্পাদনের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ কার্যকরী স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করা হইবে। জাতীয় পরিকল্পনা বাস্তবায়ন কর্মসূচির অংশ না হইলে, স্থানীয় পর্যায়ে সকল উন্নয়নমূলক কাজের উপর স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের সম্পূর্ণ আর্থিক নিয়ন্ত্রণ এবং বাস্তবায়নের কর্তৃত্ব থাকিবে।” [২৬টি দল ও জোট একমত]

১৯। সরকারি কর্মকর্তা/কর্মচারীদের স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের অধীনে ন্যস্ত করা : সংবিধানে এরূপ যুক্ত করা হবে যে, “যে সকল সরকারি কর্মকর্তা/কর্মচারী স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের কাজে সরাসরি নিয়োজিত তাহারা স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের জনপ্রতিনিধিদের অধীনস্ত হইবেন এবং যে সকল সরকারি বিভাগ স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের এখতিয়ারভুক্ত উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে সম্পৃক্ত, তাহারা স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠা জনপ্রতিনিধিদের নির্দেশনায় কাজ করিবেন।” [২৬টি দল ও জোট একমত]

২০। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব তহবিল সংগ্রহ : সংবিধানে এরূপ যুক্ত করা হবে যে, “স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান স্থানীয়ভাবে নিজস্ব তহবিল সংগ্রহ করিতে পারিবে। তবে প্রাক্কলিত তহবিল যদি স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের বাজেটের চাইতে কম হইবার সম্ভাবনা থাকে, তাহা হইলে সেই বাজেট আইনসভার উচ্চকক্ষের স্থানীয় সরকার সম্পর্কিত কমিটির নিকট পাঠাইতে হইবে।” [২৩টি দল ও জোট একমত]

আইনসভা

২১। আইনসভা গঠন : সংবিধানে যুক্ত করা হবে যে,

“(ক) বাংলাদেশে একটি দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা থাকিবে, যাহার নিম্নকক্ষ (জাতীয় সংসদ) এবং উচ্চকক্ষ (সিনেট) ১০০ (একশত) সদস্য নিয়ে নিয়ে গঠিত হইবে।” [৩২টি দল ও জোট একমত ও নোট অব ডিসেন্ট: সিপিবি]

(খ) নিম্নকক্ষের নির্বাচনে প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (Proportional Representation- PR) পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষের ১০০ (একশত) জন সদস্য নির্বাচিত হইবেন। [নোট অব ডিসেন্ট: বিএনপি, এনডিএম]

(গ) উচ্চকক্ষের মেয়াদ হইবে শপথ গ্রহণের তারিখ হইতে ৫ (পাঁচ) বছর। তবে কোনো কারণে নিম্নকক্ষ ভাঙ্গিয়া গেলে উচ্চকক্ষ স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিলুপ্ত হইবে।

(ঘ) রাজনৈতিক দলগুলো নিম্নকক্ষের সাধারণ নির্বাচনের চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশের সময় একই সঙ্গে উচ্চকক্ষের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করিবে। তালিকায় কমপক্ষে ১০% নারী প্রার্থী থাকিতে হইবে।”[২৭টি দল ও জোট একমত; নোট অব ডিসেন্টঃ বিএনপি, এনডিএম]

২২। উচ্চকক্ষের দায়িত্ব ভূমিকা : উচ্চকক্ষ নিম্নোক্ত দায়িত্বসমূহ পালন করবে :

(ক) নিম্নকক্ষের প্রস্তাবিত আইন প্রণয়নের পর্যালোচনা করবে। উচ্চকক্ষের আইন প্রণয়নের ক্ষমতা থাকবেনা; তবে কোনো জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আইন প্রণয়নের জন্য নিম্নকক্ষ বরাবর প্রস্তাব করতে পারবে। নিম্নকক্ষে পাসকৃত অর্থবিল এবং আস্থা ভোট ব্যতীত সকল বিল উচ্চকক্ষে উপস্থাপিত হতে হবে। উচ্চকক্ষ কোনো বিল স্থায়ীভাবে আটকাতে পারবে না। উচ্চকক্ষ কোনো বিল সর্বোচ্চ ২ (দুই) মাসের বেশি আটকে রাখলে, তা উচ্চকক্ষ কর্তৃক অনুমোদিত বলে বিবেচিত হবে।

(খ) যদি উচ্চকক্ষ কোনো বিল অনুমোদন করে সেক্ষেত্রে উভয় কক্ষ কর্তৃক পাসকৃত বিল রাষ্ট্রপতির সম্মতির জন্য পাঠানো হবে।

(গ) যেক্ষেত্রে উচ্চকক্ষ সংশোধনের সুপারিশসহ বিল পুনর্বিবেচনার জন্য নিম্নকক্ষে পাঠাবে সেক্ষেত্রে নিম্নকক্ষ উচ্চকক্ষের প্রস্তাবিত সংশোধনগুলো সম্পূর্ণ ও আংশিকভাবে গ্রহণ বা প্রত্যাখ্যান করতে পারবে।

(ঘ) উচ্চকক্ষের কাছ থেকে ফেরত পাঠানো বিল যদি নিম্নকক্ষের অধিবেশনে আবারও পাস হয়, তবে উচ্চকক্ষের অনুমোদন ছাড়াই বিলটি রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের জন্য প্রেরিত হবে।

(ঙ) সংবিধান সংশোধন সংক্রান্ত যেকোনো বিল উচ্চকক্ষের সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় পাস করতে হবে।

উল্লেখিত বিধান অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্যে সংবিধানের পঞ্চম ভাগে প্রয়োজনীয় সংযোজন ও সংশোধন করা হবে। তাছাড়া সংবিধানের অন্যান্য ভাগেও কিছু কিছু সংশোধন করা হবে। এছাড়া নিম্নকক্ষের নির্বাচনে প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যানুপাতে প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষের গঠন প্রক্রিয়ায় এবং বর্ণিতভাবে উচ্চকক্ষের দায়িত্ব ও ভূমিকা সম্পর্কিত বিধান অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্যে সংবিধানের পঞ্চম ভাগে প্রয়োজনীয় সংযোজন ও সংশোধন করা হবে। যেমন- সংবিধানের সপ্তম ভাগে উল্লেখিত নির্বাচন সংক্রান্ত বিধান।

[নোট অব ডিসেন্ট: বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), এনডিএম, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, আম জনতার দল]

২৩। উচ্চকক্ষের সদস্যদের যোগ্যতা অযোগ্যতা : সংবিধানে এরূপ যুক্ত করা হবে যে, “উচ্চকক্ষের সদস্যগণের যোগ্যতা ও অযোগ্যতা নিম্নকক্ষের সদস্যগণের যোগ্যতার অনুরূপ হইবে।” [২৪টি দল ও জোট একমত]

২৪। জাতীয় সংসদে নারী আসনের বিধান : জাতীয় সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব ক্রমান্বয়ে ১০০ (একশত) আসনে উন্নিত করার লক্ষ্যে নিম্নরূপ বিধান করা হবেঃ [২৯টি দল ও জোট একমত] ।

(ক) বিদ্যমান সংরক্ষিত ৫০টি আসন বহাল রেখে সংবিধানের ৬৫ (৩) অনুচ্ছেদে প্রয়োজনীয় সংশোধন করা হবে;

(খ) জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫ স্বাক্ষরের পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনে প্রতিটি রাজনৈতিক দলকে বিদ্যমান ৩০০ সংসদীয় আসনের জন্য প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে নূন্যতম ৫% (পাঁচ) শতাংশ নারী প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়ার জন্য দলগুলোকে আহ্বান জানানো হবে;

(গ) পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলো নূন্যতম ৫% (পাঁচ) শতাংশ নারী প্রার্থী মনোনয়ন দিবে;

(ঘ) এই পদ্ধতিতে রাজনৈতিক দলগুলো সাধারণ নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে নূন্যতম ৩৩% (তেত্রিশ) শতাংশ নারী প্রার্থী মনোনয়নের লক্ষ্য অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে প্রত্যেক সাধারণ নির্বাচনে নূন্যতম ৫% (পাঁচ) শতাংশ বর্ধিত হারে নারী প্রার্থী মনোনয়ন অব্যাহত রাখবে; [ ২৬ টি দল ও জোট একমত; নোট অব ডিসেন্ট: আম জনতার দল, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল]

(ঙ) সংবিধানে বর্ণিত জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসন অব্যাহত রেখে সংবিধানের সপ্তদশ (১৭তম) সংশোধনী (যা ৮ জুলাই ২০১৮ সালে সংসদে পাশ হয়) এর মাধ্যমে সংরক্ষিত নারী আসনের মেয়াদ ২৫ বছর বৃদ্ধি করা হয়, হিসাব অনুযায়ী তা ২০৪৩ সাল পর্যন্ত বহাল থাকবে; তবে সাধারণ নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রার্থী মনোয়নের ক্ষেত্রে তেত্রিশ (৩৩%) শতাংশ নারী প্রার্থীতার লক্ষ্য ২০৪৩ সালের আগেই যদি অর্জিত হয়ে যায়, তাহলে সংবিধানের সপ্তদশ (১৭তম) সংশোধনীর মাধ্যমে প্রবর্তিত বিধান নির্ধারিত সময়ের আগেই বাতিল হয়ে যাবে।

২৫। ডেপুটি স্পিকার পদে বিরোধী দল থেকে মনোনয়ন: সংবিধানে যুক্ত করা হবে যে, “আইনসভার উভয় কক্ষে একজন করিয়া ডেপুটি স্পিকার সরকার দলীয় সদস্য ব্যতীত অপর সকল সদস্যদের মধ্য হইতে মনোনীত করা হইবে।” [২৪টি দল ও জোট একমত]

২৬। সংসদের স্থায়ী কমিটির সভাপতি: জাতীয় সংসদের পাবলিক একাউন্টস কমিটি, প্রিভিলেজ কমিটি, অনুমিত হিসাব কমিটি এবং সরকারি প্রতিষ্ঠান কমিটি এবং জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয় সংক্রান্ত জাতীয় সংসদের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি পদে সংসদে আসনের সংখ্যানুপাতে বিরোধীদলের মধ্য থেকে নির্বাচন করা হবে। [৩১টি দল ও জোট একমত]

২৭। সংসদের কমিটি সদস্যদের অধিকার নির্ধারণের জন্য আইন প্রণয়ন : সংবিধানের ৭৮(৫) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আইন প্রণয়নের মাধ্যমে সংসদের কমিটিসমূহ ও সদস্যদের বিশেষ অধিকার নির্ধারণ করা হবে। [২৪টি দল ও জোট একমত]

২৮। জাতীয় সংসদে দলের বিরুদ্ধে ভোটদান : সংবিধানের ৭০ নং অনুচ্ছেদের বিদ্যমান বিধান পরিবর্তন করে জাতীয় সংসদের সদস্যগণ কেবল অর্থবিল এবং আস্থা ভোট প্রদানের ক্ষেত্রে নিজ দলের প্রতি অনুগত থাকবেন। অন্য যেকোনো বিষয়ে তারা স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারবেন। [২৯টি দল ও জোট একমত]

২৯। আন্তর্জাতিক চুক্তি আইনসভায় অনুমোদন : সংবিধানে এরূপ যুক্ত করা হবে যে, “জাতীয় স্বার্থ বা রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা প্রভাবিত করে এইরূপ আন্তর্জাতিক চুক্তি সম্পাদনের পর আইনসভার উভয় কক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটের মাধ্যমে অনুমোদন (রেটিফাই) করা হইবে।” [২৩ টি দল ও জোট একমত]

বিচার বিভাগ

৩০। প্রধান বিচারপতি নিয়োগ : (১) সংবিধানের ৯৫ অনুচ্ছেদের বিদ্যমান ব্যবস্থা পরিবর্তন করে রাষ্ট্রপতি আপীল বিভাগের বিচারপতিদের মধ্য থেকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করবেন। (২) আপীল বিভাগের জ্যেষ্ঠতম বিচারপতিকে রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগদান করবেন। (অবশ্য কোনো রাজনৈতিক দল বা জোট তাদের নির্বাচনি ইশতেহারে উল্লেখপূর্বক যদি জনগণের ম্যান্ডেট লাভ করে তবে তারা সংবিধানে আপীল বিভাগের জ্যেষ্ঠতম দুইজন বিচারপতিদের মধ্য হতে যেকোনো একজনকে রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দান করবেন মর্মে বিধান সংযোজন করতে পারবে।) (৩) তবে শর্ত থাকে যে, অসদাচরণ বা অসামর্থ্যের অভিযোগের কারণে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৯৬ এর অধীন কোনো বিচারপতির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রক্রিয়া চলমান থাকলে তাকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগের জন্য বিবেচনা করা যাবে না। [২৯ টি দল ও জোট একমত]

৩১। আপীল বিভাগের বিচারক সংখ্যা : সংবিধানে এরূপ যুক্ত করা হবে যে, “আপীল বিভাগের বিচারক সংখ্যা বৃদ্ধি এবং প্রধান বিচারপতির চাহিদা মোতাবেক, সময়ে সময়ে, আপীল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগে প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিচারক নিয়োগ করা যাইবে।” [২৯টি দল ও জোট একমত]

৩২। সুপ্রীম কোর্টের বিচারক নিয়োগ : সংবিধানে এরূপ যুক্ত করা হবে যে, “সুপ্রীম কোর্টের বিচারক নিয়োগে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে একটি স্বাধীন বিচার বিভাগীয় নিয়োগ কমিশন (Judicial Appointments Commission-JAC) গঠন করা হইবে। [২৬টি দল ও জোট একমত]

৩৩। সুপ্রীম কোর্টের বিচারক নিয়োগ কমিশন সংক্রান্ত বিধান : সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারক নিয়োগ কমিশন সংক্রান্ত বিধানকে সংবিধানে অর্ন্তভুক্ত করা হবে।[২৮টি দল ও জোট একমত]

৩৪। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা : সংবিধানে এরূপ যুক্ত করা হবে যে, “বিচার বিভাগকে পূর্ণ স্বাধীনতা প্রদান করা হইবে।” [৩২টি দল ও জোট একমত]

৩৫। সুপ্রীম কোর্টের বিকেন্দ্রীকরণ : রাজধানীতে সুপ্রীম কোর্টের স্থায়ী আসন থাকবে, তবে রাষ্ট্রপতির অনুমোদনক্রমে প্রধান বিচারপতি, সময়ে সময়ে, যে সার্কিট বেঞ্চ প্রতিষ্ঠা করতে পারতেন তার পরিবর্তে রাজধানীতে সুপ্রীম কোর্টের স্থায়ী আসন থাকবে এবং প্রধান বিচারপতি কর্তৃক প্রতিটি বিভাগে এক বা একাধিক স্থায়ী বেঞ্চ প্রতিষ্ঠা করা হবে।[৩১টি দল ও জোট একমত]

৩৬। উপজেলা পর্যায়ে অধস্তন আদালতের সম্প্রসারণ : যে সকল উপজেলা জেলা সদরে অবস্থিত (সদর উপজেলা), সে সকল উপজেলা আদালতসমূহ জেলা জজ কোর্টের সাথে সংযুক্ত রেখে সুনির্দিষ্ট করে দিতে হবে। বিদ্যমান চৌকি আদালত, দ্বীপাঞ্চল ও ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠিত উপজেলা আদালতসমূহ বহাল রেখে এর প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে। জেলা সদরের কাছাকাছি উপজেলাগুলোতে নতুন আদালত স্থাপনের প্রয়োজন নেই (প্রয়োজনীয় জরিপ পরিচালনা সমাপ্ত করে)। অবশিষ্ট উপজেলাগুলোর জনসংখ্যার ঘনত্ব, ভৌগোলিক অবস্থান ও বৈশিষ্ট্য, যাতায়াত ব্যবস্থা, দূরত্ব, অর্থনৈতিক অবস্থা ও মামলার সংখ্যা বিবেচনায় নিয়ে পর্যায়ক্রমে আদালত স্থাপন করা হবে। অধস্তন আদালতের জন্যে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও অর্থবরাদ্দ নিশ্চিত করা এবং আইনগত সহায়তা কার্যক্রম উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত সম্প্রসারিত করা হবে। [২৯টি দল ও জোট একমত ]

৩৭। সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ (বিচারকদের পদের মেয়াদ ও তাদের অপসারণ সংক্রান্ত) সংশোধনঃ সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদে বর্ণিত সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলকে শক্তিশালী করা ও তার এখতিয়ার বৃদ্ধি করা হবে। [৩০ টি দল ও জোট একমত]

৩৮। বিচারকদের জন্য পালনীয় আচরণবিধি: সুপ্রীম জুডিসিয়াল কাউন্সিল কর্তৃক আনুষ্ঠানিকভাবে বিচারকদের জন্য পালনীয় আচরণবিধি প্রণয়ন ও প্রকাশ এবং নির্দিষ্ট সময় পর পর তা পর্যালোচনা ও হালনাগাদ ও প্রয়োগ করা হবে। [৩১টি দল ও জোট একমত]

৩৯। সাবেক বিচারপতিদের জন্য পালনীয়: সুপ্রীম জুডিসিয়াল কাউন্সিল কর্তৃক সাবেক বিচারপতিদের জন্য পালনীয় আচরণবিধি প্রণয়ন ও প্রকাশ করা হবে এবং শৃঙ্খলামূলক ব্যবস্থা হিসেবে সতর্ক করা ও উপযুক্ত ক্ষেত্রে ‘বিচারপতি’ পদবি ব্যবহার থেকে বারিত করা হবে। [২৯টি দল ও জোট একমত]

৪০। বিচারকদের চাকরির নিয়ন্ত্রণ: অধস্তন আদালতের বিচারকদের চাকরির নিয়ন্ত্রণ সম্পূর্ণভাবে সুপ্রীম কোর্টের উপর ন্যস্ত করার জন্য সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১১৬ ও সংশ্লিষ্ট বিধিমালা সংশোধন করা হবে। [৩১টি দল ও জোট একমত]

৪১। সুপ্রীম কোর্ট সচিবালয় প্রতিষ্ঠা: নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগকে কার্যকরীভাবে পৃথকীকরণের লক্ষ্যে সুপ্রীম কোর্ট সচিবালয় প্রতিষ্ঠা এবং প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন করা হবে। বিচার বিভাগের আর্থিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে এই সচিবালয় সংক্রান্ত সংযুক্ত তহবিল থেকে অর্থায়ন করা হবে। এই সচিবালয়ের উপর অধস্তন আদালতের প্রশাসনিক কার্যক্রম, বাজেট প্রণয়ন, অধস্তন আদালতের বিচারকের পদোন্নতি, বদলি ও শৃঙ্খলা বিধানের দায়িত্ব ন্যস্ত করা হবে। [৩১টি দল ও জোট একমত]

৪২। স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিস প্রতিষ্ঠা : সংবিধানে এরূপ যুক্ত করা হবে যে, “সংবিধানের অধীনে সুপ্রীম কোর্ট ও জেলা ইউনিটের সমন্বয়ে একটি স্থায়ী সরকারি অ্যাটর্নি সার্ভিস প্রতিষ্ঠা করা হইবে।” [২৯টি দল ও জোট একমত]

৪৩। স্বতন্ত্র ফৌজদারি তদন্ত সার্ভিস প্রতিষ্ঠা : একটি স্বতন্ত্র ফৌজদারি তদন্ত সার্ভিস প্রতিষ্ঠার জন্য আইন প্রণয়ন এবং তা কার্যকর করা হবে। [৩০টি দল ও জোট একমত]

৪৪। বিচার বিভাগের জনবল বৃদ্ধি : বিচার বিভাগের সকল স্তরে বিচারক ও সহায়ক জনবল বৃদ্ধি এবং বিশেষায়িত আদালত স্থাপন করা হবে। [৩২টি দল ও জোট একমত]

৪৫। জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থাকে অধিদপ্তরে রূপান্তর : বিদ্যমান জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থাকে অধিদপ্তরে রূপান্তর করার আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। [৩০টি দল ও জোট একমত]

৪৬। বিচারক সহায়ক কর্মচারীদের সম্পত্তির বিবরণ : প্রতি তিন বছর পর পর সুপ্রীম কোর্ট এবং অধস্তন আদালতের বিচারক এবং সকল আদালতের সহায়ক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পত্তির বিবরণ ওয়েবসাইটের মাধ্যমে জনসাধারণের কাছে প্রকাশ করা এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণে আনুসঙ্গিক পদক্ষেপ গ্রহণ করার বিধান করা হবে। [২৮টি দল ও জোট একমত]

৪৭। আদালত ব্যবস্থাপনা সংস্কার ডিজিটাইজ করা : মামলার দীর্ঘসূত্রিতা ও হয়রানি নিরসন, স্বচ্ছতা আনয়ন, মামলার খরচ হ্রাস ও বিচারপ্রাপ্তি সহজলভ্য করার জন্য বিভিন্ন বিধি প্রণয়ন, সংশোধন ও সুপ্রীম কোর্ট কর্তৃক নির্দেশনা জারির মাধ্যমে আদালত ব্যবস্থাপনার সংস্কার ও ডিজিটাইজ করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। [৩২টি দল ও জোট একমত]

৪৮। কতিপয় আইন রহিতকরণ সংশোধন : ‘আইনগত সহায়তা প্রদান আইন, ২০০০’ রহিত করা এবং মেডিয়েশনের বিধান সম্বলিত ‘আইনগত সহায়তা ও মধ্যস্থতা সেবা প্রদান অধ্যাদেশ, ২০২৫’ জারি করা এবং সালিস আইন, ২০০১ ও সংশ্লষ্ট অন্যান্য আইন সংশোধন করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। [৩১টি দল ও জোট একমত]

৪৯। আইনজীবীদের আচরণবিধি : আইনজীবীদের আচরণবিধি যুগোপযোগীকরণ করা, জেলা পর্যায়ে বার কাউন্সিল ট্রাইবুনাল স্থাপন এবং এর প্রধান হিসেবে একজন বিচারককে দায়িত্ব প্রদান করা হবে। অপরদিকে আদালত প্রাঙ্গনে দলীয় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করা হবে। [২৬টি দল ও জোট একমত]

৫০। আইনজীবী সমিতি বার কাউন্সিল নির্বাচন : আইনজীবী সমিতি ও বার কাউন্সিল নির্বাচনে প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে এবং নির্বাচন পরিচালনায় দলীয় রাজনীতির প্রভাব বিলোপের জন্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট (সহযোগী সংগঠন, অঙ্গসংগঠন, ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ইত্যাদি) আইনজীবীদের কোনো সংগঠনকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে না। [২৪টি দল ও জোট একমত]

৫১। বিচারকদের রাজনৈতিক আনুগত্য : বিচারকদের রাজনৈতিক আনুগত্য প্রদর্শন বা রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশকে অসদাচরণ হিসেবে বিবেচনা করে শৃঙ্খলামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের বিধান করা হবে। [৩২টি দল ও জোট একমত]

নির্বাচন ব্যবস্থা

৫২। নির্বাচন কমিশন নিয়োগ : বিদ্যমান সংবিধানের ১১৮ (১) অনুচ্ছেদ সংশোধনপূর্বক এরূপ বিধান করা হবে যে,

(ক) প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং আইনের দ্বারা নির্ধারিত সংখ্যক নির্বাচন কমিশনারগণের সমন্বয়ে বাংলাদেশের একটি নির্বাচন কমিশন থাকবে। আইনের দ্বারা নিম্নরূপে গঠিত একটি বাছাই কমিটির মাধ্যমে উপযুক্ত প্রার্থী বাছাই করা হবে : (১) জাতীয় সংসদের স্পিকার (যিনি এই বাছাই/selection কমিটির প্রধান হবেন), (২) ডেপুটি স্পিকার (যিনি বিরোধী দল হতে নির্বাচিত হবেন), (৩) প্রধানমন্ত্রী, (৪) বিরোধী দলের নেতা, এবং (৫) প্রধান বিচারপতির প্রতিনিধি হিসাবে আপীল বিভাগের একজন বিচারপতি। এই বাছাই/ selection কমিটি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য কমিশনারদের নিয়োগ করার উদ্দেশ্যে বিদায়ী নির্বাচন কমিশনের প্রধান ও অন্যান্য কমিশনারগণের মেয়াদ শেষ হওয়ার ৯০ দিন পূর্বে সংসদ কর্তৃক প্রণীত আইনের দ্বারা (যেখানে নির্বাচন কমিশনার হওয়ার যোগ্যতা-অযোগ্যতা, প্রার্থী অনুসন্ধানের পদ্ধতি, প্রাধিকার ও কর্মপদ্ধতির উল্লেখ থাকবে) নির্ধারিত পদ্ধতিতে ‘ইচ্ছাপত্র’ ও প্রার্থীর সংশ্লিষ্ট তথ্যাদি আহ্বান করাসহ কমিটির নিজস্ব উদ্যোগে উপযুক্ত প্রার্থীর অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনা করবেন।

(খ) অনুসন্ধানে প্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গের ‘জীবনবৃত্তান্ত’ স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় যাচাই-বাছাই করত সর্বসম্মতিক্রমে তাদের মধ্য হতে ১ (এক) জনকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্ধারিত প্রতিটি পদের বিপরীতে ১ (এক) জন করে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগের জন্য রাষ্ট্রপতির নিকট প্রেরণ করবেন এবং রাষ্ট্রপতি তাদেরকে কার্যভার গ্রহণের তারিখ হতে পরবর্তী ৫ (পাঁচ) বছরের জন্য নিয়োগ দান করবেন।

(গ) স্পিকারের তত্ত্বাবধানে জাতীয় সংসদ সচিবালয় এই কমিটিকে সাচিবিক সহায়তা প্রদান করবে।

(ঘ) (বিদ্যমান সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদের উপানুচ্ছেদ ২, ৩, ৪, ৫ ও ৬ অপরিবর্তিত থাকবে)।

(ঙ) ১১৮(৫) অনুচ্ছেদ এর সাথে এরূপ যুক্ত হবে: ‘এতদ্ব্যতীত জাতীয় সংসদ কর্তৃক প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও কমিশনারগণের জবাবদিহিতার জন্য আইন প্রণয়ন ও আচরণ বিধি প্রণীত হবে।’ [৩২টি দল ও জোট একমত]

৫৩। নির্বাচনি এলাকার সীমানা নির্ধারণ :

(ক) নির্বাচনি এলাকার সীমানা নির্ধারণ বিষয়ে আশু ব্যবস্থা হিসেবে—ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনের সহায়তায় যথাযথ দক্ষতা সম্পন্ন ব্যক্তিদেরকে নিয়ে একটি বিশেষায়িত কমিটি গঠন (যদি ইতোমধ্যে তা গঠিত হয়ে থাকে তবে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন সাধন করে) এবং সেই কমিটির পরামর্শক্রমে সংসদীয় এলাকা নির্ধারণ করা হবে।

(খ) দীর্ঘমেয়াদী ব্যবস্থা হিসেবে প্রতি আদমশুমারি বা অনধিক ১০ বছর পরে সংসদীয় নির্বাচনি এলাকার সীমানা নির্ধারণের জন্য সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১১৯ এর দফা ১ এর (গ) এর শেষে বর্ণিত “এবং” শব্দটির পর ‘আইনের দ্বারা নির্ধারিত একটি বিশেষায়িত কমিটি গঠনের বিধান’ যুক্ত করা হবে। সংশ্লিষ্ট জাতীয় সংসদের সীমানা নির্ধারণ আইন, ২০২১ (সর্বশেষ ২০২৫ সালে সংশোধিত) এর ধারা ৮(৩) এর সঙ্গে যুক্ত করে উক্ত কমিটির গঠন ও কার্যপরিধি নির্ধারণ করা হবে। [২৯টি দল ও জোট একমত]

৫৪। স্থানীয় সরকার নির্বাচন : স্থানীয় সরকারের নির্বাচন ব্যবস্থা নির্বাচন কমিশনের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ

৫৫। ন্যায়পাল নিয়োগ :

(ক) সংবিধানের বর্তমান অনুচ্ছেদ ৭৭ সংশোধনপূর্বক ৭৭ (ক)-তে যুক্ত করা হবে যে, “এই সংবিধানের অধীনে দেশে একজন ন্যায়পাল থাকিবেন।”

(খ) সংবিধানের বিধানাবলি সাপেক্ষে—(১) জাতীয় সংসদের স্পিকার (যিনি এই বাছাই কমিটির প্রধান হবেন), (২) ডেপুটি স্পিকার (যিনি বিরোধী দল হইতে নির্বাচিত হবেন), (৩) সংসদ নেতা, (৪) বিরোধী দলের নেতা, (৫) দ্বিতীয় বৃহত্তম বিরোধী দলের একজন প্রতিনিধি, (৬) রাষ্টপ্রতির একজন প্রতিনিধি (নির্দলীয় ব্যক্তি এবং আইনের দ্বারা নির্ধারিত যোগ্যতাসম্পন্ন) এবং (৭) প্রধান বিচারপতির প্রতিনিধি হিসাবে আপীল বিভাগের একজন বিচারপতির সমন্বয়ে একটি বাছাই কমিটি গঠিত হবে। এই কমিটি ন্যায়পাল পদে নিয়োগলাভের উপযুক্ত (সংসদ কর্তৃক প্রণীত আইনের দ্বারা যোগ্যতা ও অযোগ্যতা নির্ধারিত হবে) এবং এই পদে নিয়োগলাভে আগ্রহী ব্যক্তিবর্গের নিকট হতে আইনের দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে ‘ইচ্ছাপত্র’ অথবা তথ্য আহ্বান করাসহ উপযুক্ত প্রার্থীর অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনা করবে।

(গ) অনুসন্ধানে প্রাপ্ত জীবনবৃত্তান্তসমূহ যাচাই-বাছাই করত উক্ত বাছাই কমিটি দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে বাছাইকৃতদের মধ্য হতে একজনকে ন্যায়পাল পদে নিয়োগের জন্য চূড়ান্ত করবে; অতঃপর রাষ্ট্রপতি তাকে কার্যভার গ্রহণের তারিখ হতে পরবর্তী ৫ (পাঁচ) বছরের জন্য নিয়োগ দান করবেন।

[নোট অব ডিসেন্ট: বিএনপি, এনডিএম, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট]

৫৬। সরকারি কর্ম কমিশনে নিয়োগ : সংবিধানের ১৩৭ অনুচ্ছেদ সংশোধন/বিলুপ্তিপূর্বক যুক্ত করা হবে যে, : (ক) সংবিধানের অধীনে তিন (৩) টি সরকারি কর্ম কমিশন প্রতিষ্ঠা করা হবে এবং প্রত্যেক কমিশন ১ (এক) জন চেয়ারম্যান/সভাপতি ও ৭ (সাত) জন সদস্য নিয়ে গঠিত হবে।

(খ) (১) জাতীয় সংসদের স্পিকার (যিনি এই বাছাই কমিটির প্রধান হবেন), (২) ডেপুটি স্পিকার (যিনি বিরোধী দল হতে নির্বাচিত হবেন), (৩) জাতীয় সংসদের প্রধান হুইপ, (৪) বিরোধী দলের প্রধান হুইপ, (৫) দ্বিতীয় বৃহত্তম বিরোধীদলের একজন প্রতিনিধি, (৬) প্রযোজ্য ক্ষেত্রে, জাতীয় সংসদের শিক্ষা মন্ত্রণালয়/স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি, এবং (৭) জাতীয় সংসদের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির সমন্বয়ে গঠিত একটি বাছাই কমিটি সরকারি কর্ম কমিশনের চেয়ারম্যান ও অন্যান্য সদস্যদের নিয়োগ করার উদ্দেশ্যে বিদায়ী সরকারি কর্ম কমিশনের চেয়ারম্যান ও অন্যান্য সদস্যগণের মেয়াদ শেষ হওয়ার ৯০ দিন পূর্বে আইনের দ্বারা নির্ধারিত যোগ্যতাসম্পন্ন আগ্রহী ব্যাক্তিবর্গের নিকট হতে আইনের দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে ‘ইচ্ছাপত্র’ ও ‘জীবনবৃত্তান্ত’ আহ্বান করাসহ উপযুক্ত প্রার্থীর অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনা করবে।

(গ) অনুসন্ধানে প্রাপ্ত ব্যক্তিগণের ‘জীবনবৃত্তান্ত’ স্বচ্ছতার ভিত্তিতে যাচাই-বাছাই করত উক্ত বাছাই কমিটি দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে বাছাই করে তাদের মধ্য হতে ১ (এক) জনকে চেয়ারম্যান এবং অনধিক ৭ (সাত) জনকে সদস্য হিসাবে নিয়োগের জন্য রাষ্ট্রপতির নিকট প্রেরণ করবে এবং রাষ্ট্রপতি তাদেরকে কার্যভার গ্রহণের তারিখ হতে পরবর্তী পাঁচ (৫) বছরের জন্য নিয়োগ দান করবেন।

(ঘ) বিদায়ী সরকারি কর্মকমিশনের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর অবিলম্বে নতুন সরকারি কর্ম কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্যগণ কার্যভার গ্রহণ করবেন।

(ঙ) সরকারি কর্ম কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্যগণের যোগ্যতা-অযোগ্যতা, বয়সসীমা, কর্মের শর্তাবলি ও কর্মপরিধি, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ব্যবস্থা, পদত্যাগ ও পুনঃনিয়োগ লাভের সুযোগ/অধিকার ইত্যাদি সংসদ কর্তৃক প্রণীত আইন দ্বারা নির্ধারিত হবে।

(চ) সুপ্রীম কোর্টের কোনো বিচারক যেরূপ পদ্ধতি ও কারণে অপসারিত হতে পারেন, সেইরূপ পদ্ধতি ও কারণ ব্যতীত সরকারি কর্ম কমিশনসমূহের কোনো সভাপতি বা অন্য কোনো সদস্য অপসারিত হবেন না।

(ছ) “সরকারি কর্ম কমিশন উহার দায়িত্ব/কর্ম পালনের নিমিত্তে প্রয়োজনীয় বিধি প্রণয়ন করিতে পারিবে” বাক্যসমূহ, শব্দসমূহ ও চিহ্নসমূহ প্রতিস্থাপিত হবে। [নোট অব ডিসেন্ট: বিএনপি, এনডিএম, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট] ।

৫৭। মহা হিসাব-নিরীক্ষক নিয়ন্ত্রক নিয়োগ : সংবিধানের ১২৭ (১) সংশোধনপূর্বক বিধান করা হবে যে,

(ক) (১) জাতীয় সংসদের বিরোধী দল হতে নির্বাচিত ডেপুটি স্পিকার (যিনি এই বাছাই কমিটির প্রধান হবেন), (২) সংসদ উপনেতা, (৩) বিরোধী দলীয় উপনেতা, (৪) জাতীয় সংসদের প্রধান হুইপ (৫) জাতীয় সংসদের অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি, (৬) জাতীয় সংসদের সরকারি হিসাব সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবং (৭) জাতীয় সংসদের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতির সমন্বয়ে একটি বাছাই কমিটি মহা হিসাব-নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক পদে নিয়োগের উদ্দেশ্যে বিদায়ী মহা হিসাব-নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের মেয়াদ শেষ হওয়ার ৯০ দিন পূর্বে আইনের দ্বারা নির্ধারিত যোগ্যতাসম্পন্ন আগ্রহী ব্যক্তিবর্গের নিকট হতে আইনের দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে ‘ইচ্ছাপত্র’ ও ‘জীবনবৃত্তান্ত’ আহ্বান করাসহ উপযুক্ত প্রার্থীর অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনা করবে।

(খ) অনুসন্ধানে প্রাপ্ত প্রার্থীদের ‘জীবনবৃত্তান্ত’ যাচাই-বাছাই করত উক্ত বাছাই কমিটি দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে বাছাই করে তাদের মধ্য হতে ১ (এক) জনকে মহা হিসাব-নিরীক্ষক পদে নিয়োগের জন্য রাষ্ট্রপতির নিকট প্রস্তাব প্রেরণ করবে এবং রাষ্ট্রপতি তাকে কার্যভারগ্রহণের তারিখ হতে পরবর্তী পাঁচ (৫) বছরের জন্য নিয়োগ দান করবেন।

(গ) বিদায়ী মহা হিসাব-নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর কোনো সময় ব্যতিরেকেই নবনিযুক্ত মহা হিসাব-নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক কার্যভার গ্রহণ করবেন।

(গ) মহা হিসাব-নিরীক্ষক পদে নিয়োগ লাভের যোগ্যতা-অযোগ্যতা, বয়সসীমা, কর্মের শর্তাবলি ও কর্মপরিধি, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ব্যবস্থা, পদত্যাগ ও পুনঃনিয়োগলাভের সুযোগ/অধিকার ইত্যাদি সংসদ কর্তৃক প্রণীত আইন দ্বারা নির্ধারিত হবে।

(ঘ) সুপ্রীম কোর্টের কোনো বিচারক যেরূপ পদ্ধতি ও কারণে অপসারিত হতে পারেন, সেইরূপ পদ্ধতি ও কারণ ব্যতীত মহা হিসাব-নিরীক্ষক অপসারিত হবেন না।

(ঙ) “মহা হিসাব-নিরীক্ষক তার দফতরের দায়িত্ব/কর্ম পালনের নিমিত্তে প্রয়োজনীয় বিধি প্রণয়ন করতে পারবেন” বাক্যসমূহ, শব্দসমূহ ও চিহ্নসমূহ প্রতিস্থাপিত হবে। [নোট অব ডিসেন্ট: বিএনপি, এনডিএম, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট]

৫৮। দুর্নীতি দমন কমিশনে নিয়োগ :

(ক) যেহেতু বর্তমানে দুর্নীতি দমন কমিশন একটি সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান, সেহেতু সেটিকে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত করার লক্ষ্যে সংবিধানে নিম্নরূপ একটি নতুন অনুচ্ছেদ যুক্ত করা হবে:

“দেশে একটি স্বাধীন দুর্নীতি দমন কমিশন থাকবে এবং এই কমিশনের নিয়োগ ও কার্যক্রম পর্যালোচনার লক্ষ্যে একটি ‘বাছাই ও পর্যালোচনা কমিটি’ গঠিত হবে।”

(খ) প্রধান বিচারপতি ব্যতীত, আপীল বিভাগের জ্যেষ্ঠতম বিচারপতি (যিনি এই বাছাই ও পর্যালোচনা কমিটির চেয়ারম্যান হবেন), খ. সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের জ্যেষ্ঠতম বিচারপতি, গ. মহাহিসাব-নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, ঘ. সরকারি কর্ম কমিশনের চেয়ারম্যান, ঙ. জাতীয় সংসদের সংসদ নেতা কর্তৃক মনোনীত একজন প্রতিনিধি, চ. জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতার মনোনীত একজন প্রতিনিধি, এবং ছ. প্রধান বিচারপতি কর্তৃক মনোনীত একজন নাগরিক প্রতিনিধি, যিনি দুর্নীতিবিরোধী ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার কাজে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন; তাদের সমন্বয়ে একটি বাছাই কমিটি দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান ও অন্যান্য কমিশনারদের নিয়োগের উদ্দেশ্যে আগ্রহী ব্যক্তিবর্গের নিকট হতে আইনের দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে ‘ইচ্ছাপত্র’ ও ‘জীবনবৃত্তান্ত’ আহ্বান করাসহ উপযুক্ত প্রার্থীদের জন্য অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। এই কমিটি আইনের দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে—(ক) দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনার নিয়োগে সুপারিশ প্রদানের উদ্দেশ্যে নাম বাছাই করে রাষ্ট্রপতির নিকট প্রেরণ এবং (খ) নিয়মিতভাবে দুর্নীতি দমন কমিশনের কার্যক্রম পর্যালোচনা করবে। দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান ও অন্যান্য কমিশনারসহ পাঁচ (৫) জনের মধ্যে কমপক্ষে একজন নারী হবেন।

(খ) উক্ত কমিটি উপযুক্ত প্রার্থীদের আইন দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে স্বচ্ছতার ভিত্তিতে যাচাই-বাছাই করত তাদের মধ্য হইতে ১ (এক) জনকে চেয়ারম্যান/সভাপতি এবং অনধিক ৪ (চার) জনকে কমিশনার হিসেবে নিয়োগের জন্য রাষ্ট্রপতির নিকট প্রেরণ করবে এবং রাষ্ট্রপতি তাদেরকে কার্যভার গ্রহণের তারিখ হতে পরবর্তী চার (৪) বছরের জন্য নিয়োগ দান করবেন।

(গ) সুপ্রীম কোর্টের কোনো বিচারক যেরূপ পদ্ধতি ও কারণে অপসারিত হতে পারেন, সেইরূপ পদ্ধতি ও কারণ ব্যতীত দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান বা অন্য কোনো কমিশনার অপসারিত হবেন না।

(ঘ) দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান ও কমিশনার পদে বাছাই প্রক্রিয়া, নিয়োগলাভের যোগ্যতা-অযোগ্যতা, বয়সসীমা, কর্মের শর্তাবলি ও কর্মপরিধি, কার্যক্রম পর্যালোচনা, স্বচ্ছতা জবাবদিহিতার ব্যবস্থা, পদত্যাগ ও পুনঃনিয়োগ লাভের সুযোগ/অধিকার ইত্যাদি সংসদ কর্তৃক প্রণীত আইন দ্বারা নির্ধারিত হবে।

(ঙ) দুর্নীতি দমন কমিশন উহার দপ্তরের দায়িত্ব/কর্ম পালনের নিমিত্ত প্রয়োজনীয় বিধি প্রণয়ন করিতে পারিবে।

[নোট অব ডিসেন্টঃ বিএনপি, এনডিএম, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট]

জনপ্রশাসন

৫৯। গণহত্যা ভোট জালিয়াতির সাথে জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন: জুলাই অভ্যুত্থানকালে গণহত্যা ও নিপীড়নের সঙ্গে জড়িত এবং ভোট জালিয়াতি ও দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের চিহ্নিতকরণ এবং তাদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য একটি স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন করা হবে। [৩২টি দল ও জোট একমত]

৬০। স্বাধীন স্থায়ী জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন গঠন: জনপ্রশাসন সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়নের লক্ষ্যে একটি স্বাধীন ও স্থায়ী জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন গঠন করা হবে। [২৯টি দল ও জোট একমত]

৬১। তিনটি সরকারি কর্ম কমিশন গঠন : প্রজাতন্ত্রের কর্মে জনবল নিয়োগের জন্য নিম্নরূপ তিনটি পাবলিক সার্ভিস কমিশন গঠন করা হবে : (ক) পাবলিক সার্ভিস কমিশন (সাধারণ) : শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সার্ভিস ব্যতীত অন্য সকল সার্ভিসে নিয়োগ ও পদোন্নতি পরীক্ষার জন্য; (খ) পাবলিক সার্ভিস কমিশন (শিক্ষা) : শুধু শিক্ষা সার্ভিসে নিয়োগ ও পদোন্নতি পরীক্ষার জন্য; এবং (গ) পাবলিক সার্ভিস কমিশন (স্বাস্থ্য) : শুধু স্বাস্থ্য সার্ভিসে নিয়োগ ও পদোন্নতি পরীক্ষা জন্য। [২৪টি দল ও জোট একমত]

৬২। হিসাব বিভাগ থেকে নিরীক্ষা বিভাগ আলাদাকরণঃ নিরীক্ষার স্বাধীনতা নিশ্চিত করা, হিসাব বিভাগ হতে অডিটের পৃথকীকরণ এবং অডিটের গুনগতমান উন্নতির জন্য নিরীক্ষা আইন (Audit Act) প্রণয়ন করা যেতে পারে। প্রজাতন্ত্রের বিদ্যমান হিসাব ও নিরীক্ষা বিভাগকে আলাদা করার সুপারিশ আগেও বিভিন্ন কমিশন করেছে। বর্তমান কমিশনও একই সুপারিশ করছে। [২৫টি দল ও জোট একমত]

৬৩। তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯ এর সংশোধন : নাগরিকরা যাতে সহজে ও অবাধে সরকারি সেবা সংক্রান্ত তথ্য পেতে পারে সেজন্য তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯ (Right to Information Act, 2009) পর্যালোচনা করে সংশোধন করা হবে। নির্বাচন কমিশনের অধীনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলসমূহকে তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯ এর আওতাভুক্ত করা হবে। [৩১টি দল ও জোট একমত]

৬৪। অফিসিয়াল সিক্রেটস এ্যাক্ট, ১৯২৩ (Official Secrets Act, 1923) এর সংশোধন: নাগরিকদের তথ্য ও পরিষেবায় অভিগম্যতা সহজ ও যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে The Official Secrets Act, 1923 পর্যালোচনা করে সংশোধন করা হবে। [২৬টি দল ও জোট একমত]

৬৫। কুমিল্লা ফরিদপুর নামে দুইটি প্রশাসনিক বিভাগ গঠন : ভৌগোলিক অবস্থান ও যাতায়াতের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে কুমিল্লা ও ফরিদপুর নামে দুইটি প্রশাসনিক বিভাগ গঠন করা হবে। [২৮টি দল ও জোট একমত]

পুলিশ প্রশাসন

৬৬। স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠন : পুলিশ বাহিনীর পেশাদারিত্ব ও দায়বদ্ধতা নিশ্চিতকরণ এবং পুলিশি সেবাকে জনবান্ধব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে একটি ‘পুলিশ কমিশন’ গঠন করা হবে।[২৯টি দল ও জোট একমত]

দুর্নীতি দমন কমিশন

৬৭। সাংবিধানিক আইনগত ক্ষমতার অপব্যবহার রোধে সংবিধান সংশোধন : বিদ্যমান সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২০(২) নিম্নরূপে প্রতিস্থাপন করা হবে : “রাষ্ট্র এমন অবস্থা সৃষ্টি করিবে, যেখানে সাধারণ নীতি হিসাবে কোনো ব্যক্তি ব্যক্তিগত স্বার্থে সাংবিধানিক ও আইনগত ক্ষমতার অপব্যবহার করিতে পারিবেন না ও অনুপার্জিত আয় ভোগ করিতে সমর্থ হইবেন না এবং যেখানে বুদ্ধিবৃত্তিক ও কায়িক, সকল প্রকার শ্রম সৃষ্টিধর্মী প্রয়াসের ও মানবিক ব্যক্তিত্বের পূর্ণতর অভিব্যক্তিতে পরিণত হইবে।” [৩০টি দল ও জোট একমত]

৬৮। দুর্নীতিবিরোধী কৌশলপত্র প্রণয়ন : রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশলের পরিবর্তে একটি দুর্নীতিবিরোধী জাতীয় কৌশলপত্র প্রণয়ন করে বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় ও অরাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতিবিরোধী দায়িত্ব ও কর্তব্য নির্ধারণ করা হবে। [২৯টি দল ও জোট একমত]

৬৯। বৈধ উৎসবিহীন আয়কে বৈধতা দানের চর্চা বন্ধ করা: বিদ্যমান সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২০(২) এর সামঞ্জস্য রেখে বৈধ উৎসবিহীন আয়কে বৈধতা দানের যেকোনো রাষ্ট্রীয় চর্চা চিরস্থায়ীভাবে বন্ধ করতে সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়ন করা হবে। [৩২টি দল ও জোট একমত]

৭০। রাষ্ট্রীয় আইনি ক্ষমতার অপব্যবহার রোধে সুবিধাভোগী মালিকানা (Beneficial Ownership) সংক্রান্ত আইন প্রণয়ন: রাষ্ট্রীয় ও আইনি ক্ষমতার অপব্যবহার রোধে স্বার্থের দ্বন্দ্ব নিরসন ও প্রতিরোধ সংক্রান্ত আইন প্রণয়ন করা হবে। [৩১টি দল ও জোট একমত]

৭১। উচ্চ পর্যায়ের দুর্নীতি অর্থ পাচার রোধে আইনপ্রণয়ন : প্রতিষ্ঠানের প্রকৃত বা চূড়ান্ত মালিকানার তথ্য গোপন করে উচ্চ পর্যায়ের দুর্নীতি ও অর্থ পাচারসহ বিবিধ দুর্নীতি প্রতিরোধের লক্ষ্যে আইনি কাঠামোর মাধ্যমে কোম্পানি, ট্রাস্ট বা ফাউন্ডেশনের প্রকৃত বা চূড়ান্ত সুবিধাভোগীর পরিচয়-সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য রেজিস্টারভুক্ত করে জনস্বার্থে প্রকাশ নিশ্চিত করা হবে। [২৯টি দল ও জোট একমত]

৭২। নির্বাচনি অর্থায়নে স্বচ্ছতা শুদ্ধাচার নিশ্চিত করা : নির্বাচনি আইনে প্রয়োজনীয় সংস্কারের মাধ্যমে রাজনৈতিক ও নির্বাচনি অর্থায়নে স্বচ্ছতা ও শুদ্ধাচার চর্চা নিশ্চিত করার জন্য নিম্নলিখিত ব্যবস্থা গ্রহণ করা : (ক) রাজনৈতিক দলসমূহ ও নির্বাচনের প্রার্থীগণ অর্থায়ন এবং আয়-ব্যয়ের বিস্তারিত তথ্য জনগণের জন্য উন্মুক্ত করবে; (খ) জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও দুর্নীতি দমন কমিশনের সহায়তায় নির্বাচন কমিশন নির্বাচনি হলফনামায় প্রার্থীগণ কর্তৃক প্রদত্ত তথ্যের পর্যাপ্ততা ও যথার্থতা যাচাইপূর্বক প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে; (গ) সকল পর্যায়ের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিগণ দায়িত্ব গ্রহণের তিন মাসের মধ্যে ও পরবর্তীতে প্রতি বছর নিজের ও পরিবারের সদস্যদের আয় ও সম্পদ বিবরণী নির্বাচন কমিশনে জমা দিবেন এবং নির্বাচন কমিশন উক্ত বিবরণীসমূহ কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করবে; এবং (ঘ) রাজনৈতিক দলসমূহ দুর্নীতি ও অনিয়মের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিকে দলীয় পদ বা নির্বাচনে মনোনয়ন দিবে না। [২৫টি দল ও জোট একমত]

৭৩। পরিষেবা খাতের কার্যক্রম তথ্য অটোমেশন করা : সেবা প্রদানকারী সকল সরকারি প্রতিষ্ঠানের—বিশেষত, থানা, রেজিস্ট্রি অফিস, রাজস্ব অফিস, পাসপোর্ট অফিস এবং শিক্ষা, স্বাস্থ্য, স্থানীয় সরকার, জেলা ও উপজেলা প্রশাসনসহ সকল সেবা-পরিষেবা খাতের সেবা কার্যক্রম ও তথ্য-ব্যবস্থাপনা সম্পূর্ণ (এন্ড-টু-এন্ড) অটোমেশনের আওতায় আনা হবে। [২৯টি দল ও জোট একমত]

৭৪। বেসরকারি খাতের দুর্নীতিকে শাস্তির আওতায় আনা: UN Convention against Corruption (UNCAC) এর অনুচ্ছেদ ২১ অনুসারে বেসরকারি খাতের ঘুষ লেনদেনকে স্বতন্ত্র অপরাধ হিসেবে শাস্তির আওতায় আনা হবে। [৩১টি দল ও জোট একমত]

৭৫। Common Reporting Standards-এর বাস্তবায়ন: দেশ বিদেশে আর্থিক লেনদেনের স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণে বাংলাদেশের Common Reporting Standards এর পক্ষভুক্ত হওয়া এবং বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় আইনি সংস্কার করা হবে। [২৯টি দল ও জোট একমত]

৭৬। দুদক কমিশনারের সংখ্যা বৃদ্ধি করা : দুর্নীতি দমন কমিশন আইনের ৫(১) ধারা সংশোধন করে ন্যূনতম একজন নারীসহ দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনারের সংখ্যা তিন থেকে পাঁচে উন্নীত করা হবে। [২৯টি দল ও জোট একমত]

৭৭। দুর্নীতি দমন কমিশন আইন সংশোধন : দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ধারা ৮(১) এইরূপভাবে প্রতিস্থাপন করা হবে—“আইনে, শিক্ষায়, প্রশাসনে, বিচারে, শৃঙ্খলা বাহিনীতে, আর্থিক প্রতিষ্ঠানে, হিসাব ও নিরীক্ষা পেশায় বা সুশাসন কিংবা দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রমে নিয়োজিত সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে অন্যূন ১৫ (পনের) বৎসরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কোনো ব্যক্তি কমিশনার হইবার যোগ্য হইবেন।” [২৬টি দল ও জোট একমত]

৭৮। দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনারদের মেয়াদ : দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ৬(২) ধারা সংশোধন করে দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনারের মেয়াদ পাঁচ বছরের পরিবর্তে চার বছর নির্ধারণ করা হবে। [৩১টি দল ও জোট একমত]

৭৯। দুর্নীতি দমন কমিশন বাছাই কমিটির নাম পরিবর্তন : দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ৬(১) ধারা সংশোধনপূর্বক ধারা-৭ এর অধীন গঠিত বাছাই কমিটির নাম পরিবর্তন করে “বাছাই ও পর্যালোচনা কমিটি” নির্ধারণ করা হবে। [৩১টি দল ও জোট একমত]

৮০। দুর্নীতি দমন কমিশন বাছাই পর্যালোচনা কমিটির গঠন : দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ৭(১) থেকে ৭(৫) ধারা সংশোধন করে প্রস্তাবিত “বাছাই ও পর্যালোচনা কমিটি” সাত সদস্যের সমন্বয়ে গঠন করা হবে। তারা হলেন— (১) প্রধান বিচারপতি ব্যতীত, সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগের জ্যেষ্ঠতম বিচারপতি [পদাধিকারবলে এই কমিটির চেয়ারম্যান], (২) সুপ্রীম র্কোট এর হাইকোর্ট বিভাগের জ্যেষ্ঠতম বিচারপতি, (৩) বাংলাদেশের মহা হিসাব-নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, (৪) সরকারি কর্ম কমিশনের চেয়ারম্যান, (৫) জাতীয় সংসদের সংসদ নেতা কর্তৃক মনোনীত একজন প্রতিনিধি, (৬) জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা কর্তৃক মনোনীত একজন প্রতিনিধি এবং (৭) প্রধান বিচারপতি কর্তৃক মনোনীত দুর্নীতিবিরোধী ও সুশাসনের কাজে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন বাংলাদেশের একজন নাগরিক।

৮০। বাছাই ও পর্যালোচনা কমিটি কর্তৃক দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনার নিয়োগের অনুসরণীয় পদ্ধতি : দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ৭(১) থেকে ৭(৫) ধারা সংশোধন করে প্রস্তাবিত “বাছাই ও পর্যালোচনা কমিটি” কমিশনার নিয়োগে দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অনুসরণ করা হবে। [২৫টি দল ও জোট একমত]

৮১। বাছাই পর্যালোচনা কমিটি কর্তৃক দুর্নীতি দমন কমিশনের কার্যক্রম পর্যালোচনার পদ্ধতি : দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ৭(১) থেকে ৭(৫) ধারা সংশোধন করে প্রস্তাবিত “বাছাই ও পর্যালোচনা কমিটি” দুর্নীতি দমন কমিশনের কার্যক্রম পর্যালোচনার উদ্দেশ্যে দুর্নীতি দমন কমিশনের সুপারিশ অনুসরণ করা হবে। [৩১টি দল ও জোট একমত]

৮২। দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ধারা ৩২ক বিলুপ্ত করা : দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ধারা ৩২ক বিলুপ্ত করা হবে। এর ফলে দুর্নীতি দমন কমিশন কর্তৃক কোনো জজ, ম্যাজিস্ট্রেট বা সরকারি কর্মচারীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে হলে দুর্নীতি দমন কমিশন আবশ্যিকভাবে ফৌজদারি কার্যবিধির ধারা ১৯৭ প্রতিপালন অর্থাৎ উপর্যুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের শর্ত হিসেবে দুর্নীতি দমন কমিশনকে সরকারের পূর্বানুমোদন গ্রহণ করতে হবে না। [২৭টি দল ও জোট একমত]

৮৩। আয়কর আইন, ধারা ৩০৯ এর সংশোধন : আয়কর আইন, ২০২৩-এর ধারা ৩০৯ সংশোধনপূর্বক এটি নিশ্চিত করতে হবে যে, দুর্নীতি দমন কমিশন কর্তৃক চাহিত কোনো তথ্যাদি বা দলিলাদির ক্ষেত্রে এই ধারা প্রযোজ্য হবে না। [২৭টি দল ও জোট একমত]

৮৪| Open Government Partnership এর পক্ষভুক্ত হওয়া: বাংলাদেশকে রাষ্ট্রীয়ভাবে Open Government Partnership এর পক্ষভুক্ত হওয়া | [২৩ টি দল ও জোট একমত ও নোট অব ডিসেন্ট- জাকের পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক পার্টি (বিএসপি), বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য]

জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের অঙ্গীকারনামা

যেহেতু বাংলাদেশের সাংবিধানিক কনভেনশনের অংশ হিসাবে ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ হতে ১৯৭২ সালের ৪ঠা নভেম্বর পর্যন্ত দেশে কার্যত কোনও সংবিধান না থাকা সত্ত্বেও উক্ত সময়ের সকল কার্যাবলী ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের মহান শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ১৯৭২ সালের সংবিধানে সন্নিবেশিত করে এর আইনী ও সাংবিধানিক বৈধতা প্রদান করা হয়;

একইভাবে যেহেতু ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর গণঅভ্যুত্থানোত্তর সময়ে প্রধান বিচারপতি পদত্যাগ করে উপরাষ্ট্রপতি হিসাবে শপথ গ্রহণ, অতঃপর অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি পদের দায়িত্ব গ্রহণ এবং পরবর্তীতে প্রধান বিচারপতি পদে ফিরে যাওয়া সংক্রান্ত কোনও আইনী কাঠামো না থাকা সত্ত্বেও রাজনৈতিক দল ও জোটসমূহের রূপরেখা ও অঙ্গীকারের ভিত্তিতে ওই ধরণের কার্যাবলীকে বৈধতা দিয়ে পরবর্তী সংসদ গণঅভ্যুত্থানে প্রদত্ত জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটিয়ে সাংবিধানিক কনভেনশন এবং গণতন্ত্রকে সংহত করে;

সুতরাং উল্লেখিত গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, জনগণের ইচ্ছার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ এবং সাংবিধানিক কনভেনশন বজায় রেখে ২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানে জনগণের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিয়ে আমরা নিম্নস্বাক্ষরকারীগণ এই মর্মে অঙ্গীকার করছি যে—

১) জনগণের অধিকার ফিরে পাওয়া এবং গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার সুদীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে হাজারো মানুষের জীবন ও রক্তদান এবং অগণিত মানুষের সীমাহীন ক্ষয়ক্ষতি ও ত্যাগ-তিতীক্ষার বিনিময়ে অর্জিত সুযোগ এবং তৎপ্রেক্ষিতে জন-আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলন হিসেবে দীর্ঘ ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে প্রণীত ও ঐকমত্যের ভিত্তিতে গৃহীত নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত’র দলিল হিসাবে ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’ এর পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করবো।

২) এই রাষ্ট্রের মালিক জনগণ; তাদের অভিপ্রায়ই সর্বোচ্চ আইন এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় জনগণের অভিপ্রায় প্রতিফলিত ও প্রতিষ্ঠিত হয় রাজনৈতিক দলের মাধ্যমে, এমতাবস্থায় আমরা রাজনৈতিক দল ও জোটসমূহ সম্মিলিতভাবে দীর্ঘ আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে জনগণের অভিপ্রায়ের সুষ্পষ্ট ও সর্বোচ্চ অভিব্যক্তি হিসাবে ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’ প্রণয়ন করেছি বিধায় এই সনদের সকল বিধান, নীতি ও সিদ্ধান্ত সংবিধানে অন্তর্ভুক্তকরণ নিশ্চিত করবো এবং বিদ্যমান সংবিধান বা অন্য কোনও আইনে ভিন্নতর কিছু থাকলে সেই ক্ষেত্রে এই সনদের বিধান/প্রস্তাব/সুপারিশ প্রাধান্য পাবে।

৩) এই সনদের কোনও বিধান, প্রস্তাব বা সুপারিশের ব্যাখ্যা সংক্রান্ত যে কোনো প্রশ্নরে চূড়ান্ত মীমাংসার এখতিয়ার বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের উপর ন্যস্ত থাকবে।

৪) ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’-এর প্রতিটি বিধান, প্রস্তাব ও সুপারিশ সাংবিধানিক ও আইনগতভাবে বলবৎ হিসেবে গণ্য হবে বিধায় এর বৈধতা, প্রয়োজনীয়তা, কিংবা জারির কর্তৃত্ব সম্পর্কে কোনো আদালতে প্রশ্ন তোলা যাবে না।

৫) ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’-এ বাংলাদেশের সামগ্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা তথা সংবিধান, বিচার ব্যবস্থা, নির্বাচন ব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, পুলিশি ব্যবস্থা ও দুর্নীতি দমন ব্যবস্থার বিষয়ে যেসব প্রস্তাব/সুপারিশ লিপিবদ্ধ রয়েছে সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য সংবিধানের প্রয়োজনীয় সংশোধন, সংযোজন, পরিমার্জন, লিখন ও পুনর্লিখন এবং বিদ্যমান আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধন, পরিবর্তন, পরিমার্জন, লিখন, পুনর্লিখন বা নতুন আইন প্রণয়ন, প্রয়োজনীয় বিধি প্রণয়ন বা বিদ্যমান বিধি ও প্রবিধির পরিবর্তন বা সংশোধন করবো।

৬) আমরা ঐকমত্যে স্থির হয়েছি যে, গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য জনগণের নিরবচ্ছিন্ন সংগ্রাম এবং বিশেষত; ২০২৪ সালের অভূতপূর্ব গণঅভ্যুত্থানের ঐতিহাসিক তাৎপর্যকে সাংবিধানিক তথা রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেয়া হবে।

৭) আমরা সম্মিলিতভাবে ঘোষণা করছি যে, রাষ্ট্র ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানকালে সংঘটিত সকল হত্যাকাণ্ডের বিচার, শহীদদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদা প্রদান ও শহীদ পরিবারসমূহকে যথোপযুক্ত সহায়তা প্রদান এবং আহতদের সুচিকিৎসা ও পুনর্বাসনে ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে।

৮) আমরা এই মর্মে একমত যে, জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫ এর যে সকল প্রস্তাব/সুপারিশ অবিলম্বে বাস্তবায়নযোগ্য বলে বিবেচিত হবে সেগুলো কোনও প্রকার কালক্ষেপন না করেই পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সরকার ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষসমূহ সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়ন করবে।