ভারত থেকে মিথ্যা ও ভুল সংবাদ প্রচার অব্যাহত রয়েছে
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস আগামী এপ্রিলে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের কথা বলেছেন। ওই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গঠিত নতুন সরকারে তার থাকার কোনো সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন তিনি। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ১৭ বছর পর আমরা সত্যিকারের একটি নির্বাচন করতে যাচ্ছি, যা আমাদের ইতিহাসে সবচেয়ে ভালো নির্বাচন হবে।
লন্ডন সফররত প্রধান উপদেষ্টা গতকাল বুধবার যুক্তরাজ্যের নীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান চ্যাথাম হাউস আয়োজিত সংলাপে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে এ কথা জানান। ওই সাংবাদিক প্রধান উপদেষ্টাকে প্রশ্ন করেন, নির্বাচন হয়ে গেলে নির্বাচিত সরকার যখন দায়িত্ব নেবে, সেখানে আপনার অংশ হওয়ার কোনো ইচ্ছে আছে কি-না।
জবাবে দুই হাত নেড়ে হাস্যোজ্জ্বল ড. ইউনূস বলতে থাকেন, নো ওয়ে, নো ওয়ে (একদমই না)। আমার মনে হয় আমাদের উপদেষ্টা পরিষদের কোনো সদস্যই এমনটা করবেন না। আমাদের দায়িত্ব হলো, ট্রানজিশনটা (গণতান্ত্রিক রূপান্তর) ভালোভাবে সম্পন্ন করা এবং জনগণকে খুশি করা। নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। আমরা নির্বাচনটা যথাযথভাবে করা নিশ্চিত করতে চাই। এটা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্ববহ বিষয়। যদি নির্বাচন ভুল হয়, তাহলে এই বিষয়টার আর সমাধান হবে না।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ১৭ বছর পর আমরা সত্যিকারের একটি নির্বাচন করতে যাচ্ছি, যা আমাদের ইতিহাসে সবচেয়ে ভালো নির্বাচন হবে। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শুধু একটি নতুন সরকার নির্বাচনের জন্য রক্ত দেয়নি বাংলাদেশের তরুণরা।
নতুন বাংলাদেশ তৈরির জন্য সংস্কার কমিশন করা হয়েছে জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের জন্য কমিশন তৈরি করেছি। আমরা তাদের সুপারিশের দিকে তাকিয়ে আছি। আমাদের কাজ হলো সব দলের ঐকমত্য তৈরি করা। এ সময় আরেক প্রশ্নে তিনি বলেন, আমরা জুলাই সনদ আসার জন্য অপেক্ষা করছি। এই সনদটি জাতির সামনে জুলাই মাসের সনদ হিসেবে উপস্থাপন করা হবে। সংলাপে বাংলাদেশ বিষয়ে ভারতের আগ্রাসী নীতিসহ আরও কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর দেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন. বাংলাদেশে হাজারো মানুষ হত্যার শিকার হয়েছে কিন্তু শেখ হাসিনা বা তার দল এখনো সেই হত্যার জন্য কোনো দুঃখ প্রকাশ করেনি। তার ওপর ভারত থেকে প্রতিনিয়ত মিথ্যা ও ভুল সংবাদ প্রচার অব্যাহত রয়েছে।
এক প্রশ্নের উত্তরে ড. ইউনূস বলেন, জুলাই-আগস্ট গণহত্যার বিষয়ে ট্রাইব্যুনালে বিচার শুরু হয়েছে। এই বিচার আইনি প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হবে। একইভাবে শেখ হাসিনাকে ফেরতের বিষয়টিও আইনি প্রক্রিয়ায় হবে। এ সময় ভারত থেকে প্রতিনিয়ত মিথ্যা ও ভুল সংবাদ প্রচার অব্যাহত আছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
অপর এক প্রশ্নের উত্তরে ড. ইউনূস বলেন, দেশকে আমরা নতুন করে গড়ে তোলার চেষ্টা করছি। এটা অনেক কঠিন একটি কাজ। আমাদের ব্যাংকিং সিস্টেম কলাপস করেছিলো। এখন ব্যাংক খাত ঘুরে দাঁড়িয়েছে। প্রবাসীদের রেমিট্যান্স বেড়েছে। আগের থেকে অবস্থার উন্নয়ন ঘটেছে। আইএম্এফ-বিশ্বব্যাংক আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। আইওএম খুব পজিটিভ রোল নিয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের সামনে দেশ গড়ার এখন একটি ঐতিহাসিক সুযোগ। আমরা সবাই একযোগে কাজ করলে দেশ এগিয়ে যাবে।
ড. ইউনূস বলেন, রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরে যেতে হবে। আমরা তাদের ফিরিয়ে দিতে কাজ করছি। এ নিয়ে বিভিন্ন ফোরামে আলোচনা করছি। জাতিসংঘে আন্তর্জাতিক একটি সম্মেলনেরও আয়োজন চলছে।
এদিকে কমনওয়েলথ মহাসচিব শার্লি আয়োরকর বটচওয়ে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে লন্ডনে এক সৌজন্য সাক্ষাতে মিলিত হন। লন্ডনের একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কার প্রক্রিয়ায় সহায়তা করার আগ্রহ প্রকাশ করেন মহাসচিব বটচওয়ে। তিনি জানান, বাংলাদেশ চাইলেই কমনওয়েলথ সংবিধান সংস্কারসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহায়তা দিতে প্রস্তুত।
শার্লি বটচওয়ে বলেন, আগামী পাঁচ বছরে গণতন্ত্র, সুশাসন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা এবং বাণিজ্য বৃদ্ধিকে অগ্রাধিকার দেবে কমনওয়েলথ। তার ভাষায়Ñ কমনওয়েলথ একটি বৃহৎ পরিবার। এর সদস্য দেশগুলোকে আরও কাছাকাছি আনতে আমরা কাজ করছি।
তিনি জানান, বর্তমানে কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বার্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ৮৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই অঙ্ক এক ট্রিলিয়নে উন্নীত করার লক্ষ্য রয়েছে।
এ সময় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস বলেন, বাংলাদেশের যুবসমাজ ও খেলাধুলার সম্ভাবনা কাজে লাগানো গুরুত্বপূর্ণ। তিনি কমনওয়েলথকে আহ্বান জানান, যুবকদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে খেলাধুলাকে একটি কার্যকর প্ল্যাটফর্ম হিসেবে বিবেচনা করার।
জবাবে মহাসচিব জানান, চলতি জুন মাসেই ঢাকায় একটি যুব বিষয়ক কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হবে। তরুণদের সম্পৃক্ত করতে কমনওয়েলথ বিভিন্ন উদ্যোগ নিচ্ছে বলেও জানান তিনি।
এছাড়া শিক্ষাখাতে বিনিয়োগ বাড়াতে স্কলারশিপ ব্যবস্থাকে আধুনিকায়নের কথাও জানান তিনি। এই বিষয়ে অধ্যাপক ইউনূস গুরুত্বারোপ করেন এবং বলেন, তরুণদের সক্ষম করে তুলতে এই উদ্যোগ অত্যন্ত জরুরি।
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাতে আরও উপস্থিত ছিলেনÑজাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, এসডিজি বিষয়ক সিনিয়র সচিব লামিয়া মোরশেদ এবং যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের হাইকমিশনার আবিদা ইসলাম। এর আগে দিনের শুরুতে এয়ারবাসের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ভাউটার ভ্যান ভার্স অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে তাঁর হোটেলে সাক্ষাৎ করেন।